প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, VISER X LIMITED কম্যুনিটি লিডার, Fiverr লেখকের মূল নাম মোস্তফা জামাল ইউসুফ, তবে তিনি ফয়সাল মোস্তফা নামেই বেশি পরিচিত। বর্তমানে তিনি VISER X LIMITED এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত আছেন। ভাইজার এক্স বিশ্বব্যাপী সফলতার সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে। এর পাশাপাশি তিনি ফাইভারের কম্যুনিটি লিডার হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশে। ফয়সাল মোস্তফা বিএসসি ইন্জিনিয়ারিং (সিভিল) সম্পন্ন করেন বুয়েট (BUET) থেকে, এরপর এক্সিকিউটিভ এমবিএ (মার্কেটিং) সম্পন্ন করেন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU) থেকে। তিনি নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। ফয়সাল মোস্তফার অনলাইন প্রফেশন শুরু হয় যখন তিনি বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। টার্ম ফাইনালের পর প্রায় ১ মাসের ছুটি। সেই ছুটিতেই অনলাইনে অর্থ উপার্জন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি, পরিচয় হয় কানাডার এক প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সার্ভিস প্রদানরে জন্য বিখ্যাত ছিল। সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সেবা প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হোন। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেবা প্রদানের জন্য দরকার দক্ষ জনবল, তাই প্রথমে ওডেস্ক (বর্তমানে আপওয়ার্ক) থেকে প্রোভাইডার নিয়োগ দেন তিনি। প্রথম দিকে ফিলিপাইনের কিছু প্রোভাইডার দিয়ে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে নেন তিনি। এভাবে দেখা যেত কানাডার প্রতিষ্ঠান থেকে যা পেমেন্ট পেতেন তার বেশির ভাগ অংশ চলে যেত প্রোভাইডারদের পারিশ্রমিকে। তারপরও নিয়মিত কাজ পাওয়ার জন্য এবং ব্যবসাটাকে দাড়া করানোর জন্য তিনি লেগে থাকলেন আস্তে আস্তে কাজ পাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকলো। ফয়সাল মোস্তফা কাজের ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রফেশনালিজম বজায় রাখতেন, কাজের কোয়ালিটি এবং ডেডলাইনের দিকে মনযোগ রাখতেন। ফলে একসময় কানাডার সেই প্রতিষ্ঠান ফয়সালের উপর এতটাই নির্ভর হয়ে পরে যে তারা তাদের অন্য সব কন্ট্রাক্টর বিদায় করে দিয়ে শুধু ফয়সালের সাথেই কাজ করার চুক্তি করে। ফলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। হিসাব করে দেখলেন, ফিলিপিনো প্রোভাইডারদের দিয়ে কাজ না করিয়ে যদি নিজেরাই করা যায় তবে ৯০ শতাংশের উপরে লাভ থাকে। সেই চিন্তা থেকেই দুইজন টিম মেম্বার নিয়ে নিলেন এবং ট্রেইন আপ করলেন। এবার সরাসরি নিজেরাই কাজ করা শুরু করলেন। যখন দেখলেন পুরোটাই নিজেরা করতে পারছেন, তখন আস্তে আস্তে ফিলিপিনো প্রোভাইডারদের কাজ দেয়া বন্ধ করে দিলেন। ভালো কাজ করলে তার সুফল আসবেই। ভালো কাজের সুবাদে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল দেশের বাইরে। ফলে কাজের চাপও বাড়তে থাকলো দিন দিন। পাশের বাড়ির ছাদের উপরে একটা রুম নিয়ে শুরু করলেন প্রথম অফিস। ধীরে ধীরে কাজের পরিধি বড় করতে থাকলেন। ব্যবসার প্রমোশনের সাথে সাথে বড় হতে থাকল ক্লায়েন্ট নেটওয়ার্কও। USA, Canada, UK ভিত্তিক কিছু কোম্পানির সাথে চুক্তি করলেন, ওদের কোম্পানির ডিজিটাল মার্কেটিং এর সার্ভিস প্রদান করা শুরু করলেন। প্রায় ২ বছর এভাবে চললো, অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে শুরু করলেন নিজের প্রতিষ্ঠান – ফাইমাষ্ট সফটওয়্যার। এবার শুরু হয় কাজের পরিধি বাড়ানো এবং বিস্তৃত করা। ২০১৯ সালে কাজের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে ব্র্যান্ডিং-এও একটা পরিবর্তন করলেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ফাইমাষ্ট সফ্টওয়্যারকে রি-ব্র্যান্ডিং করে নাম দেয়া হয় ভাইজার এক্স। বর্তমানে ভাইজার এক্স বিশ্বব্যাপী ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব এপ্লিকেশন ডেলেলপমেন্ট, এসইও, অনলাইন মার্কেটিং, স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, রেপুটেশন মেনেজমেন্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে আসছে। ভাইজার এক্সের প্রথম থেকেই সুদক্ষ টিম মেম্বার হায়ার করা হয় এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটা টিম মেম্বারকে আরো বেশি যোগ্য করে তোলা হয় যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রমান করতে পারে ভাইজার এক্স। ভাইজার এক্সের প্রতিটি টিম মেম্বার ভাইজার এক্সকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। ভাইজার এক্সও তার টিমের প্রতিটা সদস্যকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করার চেষ্টা করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সার্ভিস প্রদানের পাশাপাশি দেশের কিছু কর্পোরেট কোম্পানিকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেবা প্রদান করছে ভাইজার এক্স। একইসাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ সফলতার সাথে কাজ করছেন তারা। ভবিষ্যতে ভাইজার এক্স কে নিয়ে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে ফয়সাল মোস্তফার। একই সাথে ভাইজার এক্স এর সিস্টার কনসার্ন কোম্পানি হিসেবে SEOviser Ltd কে ইউকে তে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বর্তমানে SEOviser Ltd থেকে বায়াররা সরাসরি এসইও সার্ভিস কিনতে পারছে। প্রথম দিকে সার্ভিস প্রদান করতে গিয়ে এমন অনেক সার্ভিসের দরকার পড়তো যেগুলোর জন্য ফাইভারের সহায়তা নিতে হতো। এভাবেই ফাইভারে জয়েন করেন তিনি, পরবর্তীতে ফাইভারে সার্ভিস সেল করা শুরু করেন এবং সফলতার সাথে সার্ভিস সেল করতে থাকেন। এই পর্যন্ত প্রায় ৫৫০০ এর অধিক অর্ডার সম্পন্ন করেছেন তিনি ফাইভারে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে ফাইভারের বাংলাদেশের কম্যুনিটি লিডার নিযুক্ত হোন তিনি এবং এরপর থেকে সফলতার সাথে ফাইভার কম্যুনিটি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ফাইভারে ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছেন ফাইভার বাংলাদেশ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অন্যতম বৃহৎ এবং কার্যকরী একটি কম্যুনিটি হিসেবে কাজ করে আসছে। অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছেন তিনি, শিখেছেন অনেক নতুন নতুন বিষয়, উদ্ভাবন করেছেন অনলাইনে উপার্জনের বিভিন্ন উপায়। তিনি বিশ্বাস করেন, জ্ঞান নিজের মধ্যে রেখে দেয়ার মাঝে কোনো স্বার্থকতা নেই, সবাইকে নিয়ে একসাথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই স্বার্থকতা। তাই তার অভিজ্ঞতাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিজের ব্লগ লিখেছেন – faisalmustafa.com.bd । সকল ব্যস্ততার মাঝেও যথাসাধ্য চেষ্ট করেন কম্যুনিটির জন্য কিছু করার। একই সাথে ইন্টারনেটে উপার্জনের বিষয়ে যে কেউ সরাসরি তাকে প্রশ্ন করতে পারেন তার ব্লগের মাধ্যমে। লেখকের লেখার মাধ্যমে যদি একজনও উপকৃত হয়, তবেই তার কষ্ট স্বার্থক, পরিশ্রম সফল।