৭ এপ্রিল ২০০১। মধুমতি পার হয়ে ধু-ধু মাঠ। ফাঁকা মাঠে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অতি দীর্ঘ তাল গাছ। প্রচন্ড গরমের মধ্যে আমার ভেতর উত্তেজনা কাজ করছে। এই প্রথম টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল দেখব । আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, যে ভাবেই হােক বঙ্গবন্ধুর দাফন কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলব। কথা বলব, যে সাহসী মহান ব্যক্তিরা ইসলামী বিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে দাফনকাফনের ব্যবস্থা করেছেন। গােসল করিয়েছেন। জানাজা পড়িয়েছেন। সকাল সকাল টুঙ্গিপাড়া পৌছে যাই। টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে থাকেন শিক্ষিত যুবক আতিয়ার। তার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলি। আমার পরিকল্পনার কথা জানাই। আতিয়ার আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি তাকে নিয়ে ইট বিছানাে সরু পথে পায়ে হেঁটে কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে এগুতে থাকি। ছায়া ঢাকা টুঙ্গিপাড়া। বেশিরভাগ বাড়ি টিনের তৈরি। বেশ কিছু পথ এগিয়ে একটি বাড়ির সামনে এসে আতিয়ার দাঁড়িয়ে যায়। এটি আব্দুল মান্নাফের বাড়ি। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট আব্দুল মান্নাফ মৃত্যু ভয় উহ্য রেখে এগিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুকে গােসল করান। ইসলামী বিধান অনুযায়ী প্রিয় জন্মভূমির প্রিয় মাটিতে প্রিয় নেতাকে শুইয়ে দেন। মান্নাফের বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ নেই। এক মহিলা এগিয়ে আসেন, তিনি বলেন, আমার শ্বশুর খুব অসুস্থ। সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন না । আমি হতাশ হয়ে উঠানে দাঁড়িয়ে থাকি। এদিক ওদিক তাকাই। দেখি, এক রুগ্ন বৃদ্ধ ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছেন। বুঝতে পারি এই লােকই আব্দুল মান্নাফ । কোন কথা না বলে সােজা তার সামনে যেয়ে দাড়িয়ে সালাম দিই । তিনি ইশারা করে আমাকে বসতে বলেন। আমি খাটের পাশে বসে তার বুকে হাত রাখি। বুক ধরফড় করছে। ভীষণ শ্বাসকষ্ট। কুশল বিনিময় করে ১৬ আগস্টের কথা জানতে চাই । মান্নাফ ভাঙ্গা গলায় বলতে থাকেন, পুলিশ গ্রাম ফাকা করে দেয় ।