কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তম স্বপ্ন দেখেছেন। মাতৃভূমিক স্বাধীন করবার স্বপ্ন, সমাজ-বদলের স্বপ্ন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট গড়বার স্বপ্ন, সোনার বাংলা কায়েমের স্বপ্ন। সেই সব স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি এগিয়ে গেছেন সাহস ও সংকল্প নিয়ে। স্বপ্ন পূরণে নির্ভিক চিত্তে জীবন দিয়েছেন, কিন্তু মৃত্যু তাঁকে পরাভূত করতে পারেনি , বরং মৃত্যুকে জয় করার মধ্য দিয়ে অমরত্ব লাভ করেছেন। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে সেইসব স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে এই পুস্তকে। তাহেরের স্বপ্ন ধারণ করে তারা এগিয়ে যাবে সামনে।
ভূমিকা
সমাজ সমীক্ষা সংঘের উদ্যোগে গত ২৯ আগস্ট, ২০১০ তারিখে চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলানায়তনে ‘কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তম স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘তাহেরের স্বপ্ন’ শিরোনামে ঐ স্মারক বক্তৃতা আমি উপস্থান করি। ‘জনকষ্ঠ’ পত্রিকায় পরে তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিক হয় ।
কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মাক বক্তৃতাটি আমি লিখি। তাঁর নানা স্বপ্নের কতা আমরা জানতাম না। ছোটবেলা থেকে শুরু করে ফাঁসির মঞ্চে জীবনদানের পূর্ব পর্যন্ত , তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। তবে বড় কথা হলো সেই সব স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি প্রতিনিয়ত উদ্যোগ নিয়েছেন আর তাঁর স্বপ্নের সাথি করেছেন অনেককে।কী ছিল সেইসব স্বপ্ন?
পরাধীন মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করবার স্বপ্ন ছিল তাঁর আবাল্য লালিত। মানুষের জীবনে এরচেয়ে বড় স্বপ্ন তো আর কিছু হতে পারে না। এ স্বপ্নপূরণে মানুষ অসাধ্য সাধন করে, জীবন বিলিয়ে দেয়। যেমনটা করেছেন কাণ্ডারিদের একজন। স্বাধীনতার স্বপ্নের সাথে তাহের যুক্ত করে নিয়েছেন তাঁর অপর স্বপ্নগুলো। সমাজবদলের স্বপ্ন, গণতান্ত্রি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন এবং সর্বোপরি সোনার বাংলা কায়েমের স্বপ্ন।
স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে তাহের যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ত দিয়েছেন। হারিয়েছেন শরীদের একটি অঙ্গ। আর সমাজবদলের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন ফাঁসির মঞ্চে।
স্বপ্ন অবিনাশী। স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ফাঁসির মঞ্চে আবু তাহের উচ্চারণ করেছিলেন কবিতার কয়েকটি চরণ :
‘সব কালো আইন ভাঙতে হবে বার্তা পেলাম,
চৈতীর শেষে ঝড়ো বৈশাখে তাই জন্ম নিলাম।
পাপী আর পাপ থেকে দূরে থাকব।
তাই হাতে অস্ত্র নিলাম। ইতিহাস বলবেই শোষকের মৃত্যুকবচ
আমিই নিলাম।
পৃথিবী , অবশেষে এবারের মতো বিদায় নিলাম।’
প্রায় ৩৫ বছর আগে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ফাঁসির মঞ্চে জীবনদানের মধ্য দিয়ে তাহের তাঁর কথায় তখনকার মতো বিদায় নিলেও, তিনি ফিরে আসছেন স্বপ্ন, সাহস আর প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে। নতুন প্রজন্মে তা সঞ্চারিত হচ্ছে। তাহের ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত গোপন বিচারের রায় এবং তাহেরের ফাঁসির বিরুদ্ধে তথাকথিত গোপন বিচারের রায় এবং তাহেরের ফাঁসির বিরুদ্ধে গত ২৩ আগস্ট ২০১০ তারিখে মহামান্য হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানির মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মতো মানুষ জানতে পারছে জেনারেল জিয়াউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তাঁর সহযোগীরা কীভাবে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গোপন বিচারের প্রহসন করে কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছিলেন। তিন যুগের অধিক সময় ধরে এই হত্যাকাণ্ডসংক্রান্ত, সত্য যা ষড়যন্ত্রকালীরা গোপন করে রেখে রেখেছিল, তা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, এই রিট মামলা রায়ের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম স্বমহিমায় ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হবেন, তেমনি অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকালীদের অপতৎপরতার কথাও সেখানে লিপিবদ্ধ হবে। রিট শুনানিকালে প্রদত্ত আমার সম্পূরক রিট বক্তব্য এই পুস্তকে পরিশিষ্ট হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমদে মাহমুদুল হক ‘তাহের স্মারক’ বক্তৃতাটি পুস্তক আকারের প্রকাশের ব্যবস্থা করে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাঁর প্রকাশনা সংস্থার সাথে যুক্ত আলোকিত মানুষেরা বিশেষ করে গোলাম ফারুক ও অন্যান্য যাঁরা ‘তাহেরের স্বপ্ন’ প্রকাশের যাবতীয় কাজের সাথে নিজেদের যুক্ত করেছেন, যার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে পুস্তকটি প্রকাশ সম্ভব হলো। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সমাজ সমীক্ষা সংঘের নিবেদিতপ্রাণ অভীক ওসমান, শিহাব চৌধুরী ও কাজী মাহমুদ ইমাম যাঁদের আগ্রহ ও আন্তরিকতায় ‘তাহেরের স্বপ্ন’ রচনায় হাত দিয়েছিলাম সেইসব স্বাপ্নিক মানুষদের প্রতি মুগ্ধ ভালোবাসা।
ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন এর তাহেরের স্বপ্ন এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 136.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Taher Er Sopno by Dr. Md. Anower Hossainis now available in boiferry for only 136.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.