যে কোনাে সাময়িক পত্রিকার স্বাভাবিক কর্তব্য থাকে দু'টি, নতুন সৃষ্টিকে উৎসাহদান এবং পুরাতন সৃষ্টির নতুন মূল্যায়ন। নতুন দিগন্ত' এই যুগ্ম দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। এই পত্রিকার নিজস্ব এলাকাটি হচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সাহিত্য বলতে আমরা কবিতা উপন্যাস ও গল্পের মতাে কল্পনাধর্মী লেখাতাে অবশ্যই, সেই সঙ্গে বিশ্লেষণ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধও বুঝবাে। আমাদের পত্রিকাতে তাই ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান নিয়ে আলােচনা প্রকাশিত হবে। সংস্কৃতির নানা শাখায় যেসব কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে তাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি আমরা সংস্কৃতির আর্থ-সামাজিক অবকাঠামােকে বিবেচনায় রাখতে চাইবাে। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি নতুন নয়। কিন্তু এটি আমাদেরও, এবং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পত্রিকাটিতে একটি অতিরিক্ত মাত্রা যুক্ত হবে বলে আমাদের আশা। | দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গে বলতে হয়, বিশ্বায়নের যে যুগটিতে আমাদের বসবাস তাকে কিছুতেই অবজ্ঞা করা সম্ভব নয়। বিশ্বায়নের ভেতর যে আগ্রাসী মনােভাব কার্যকর সেটি একালের হলেও মােটেই আধুনিক নয়, পুরাতন আধিপত্যবাদের নতুন প্রকাশ ঘটে। আমরা আন্তর্জাতিকতার পক্ষে। আন্তর্জাতিকতা বিশ্বায়নবিরােধী; বিশ্বায়ন চায় বিশ্বকে একাকার করে দেবে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অবলুপ্ত হবে, এবং অবাধ তৎপরতা চলবে মুনাফালােভ ও ভােগবাদিতার। অপরদিকে আন্তর্জাতিকতা মুনাফালােভী নয়, তার অঙ্গীকার সহযােগিতা ও সহমর্মিতার; সেখানে গ্রাম্য আধিপত্য নেই, আছে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানাে। সব কিছুকে ভােগ্যপণ্যে পরিণত করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিকতা চায় সৃষ্টিশীলতাকে অবাধ এবং পৃথিবীকে মনুষ্য বসবাসের জন্য নিরাপদ করতে। বিশ্বায়ন ব্যস্ত রয়েছে মানুষকে উৎপাটিত করতে, আন্তর্জাতিকতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নিজস্ব সংস্কৃতির ভিত্তিভূমিতে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে দেখতে।