লেখকের ভূমিকা
সত্যি বলতে এখনই আমার ‘ছড়া সমগ্র’ প্রকাশকাল করার ইচ্ছা ছিল না। প্রকাশকালকের আগ্রহের মিষ্টি ফাঁদে পড়ে করতে হলো। এখনও মনে হচ্ছে সমগ্র করার মত বড় হতে আরও অনেক সময় বাকি। আর তাই বিভাসের প্রকাশক রামশংকর দেবনাথের ওপর একটু রাগই হচ্ছে কেন আমাকে ফুসলিয়ে এক বছর আগেই দলিলে সই করিয়ে নিয়েছিল? তবে একই সাথে তার প্রতি একটু কৃতজ্ঞবোধও হচ্ছে। তার কারণেই আমি মুখোমুখি হতে পারলাম এক অচেনা অসাধারন আবেগের। এই পান্ডুলিপিতে চোখ বুলাতে যেয়ে আমাকে পড়তে হলো ২০০০ সাল থেকে প্রকাশিত আমার সব বইয়ের সবগুলোর ছড়া। ব্যাপারটা গর্বের নয়, বরং কিছুটা লজ্জার যে আমার নিজের লেখা আমি নিজে তেমন পড়ি না, পুরোনোগুলোতো ভুলেই যাই। আমার প্রথম কৈশরের লেখাগুলো পড়তে যেয়ে কিছুটা লজ্জা লাগছিল-এত কাঁচা হাতের লেখা! তবে সে-সময়ের আবেগ ছিল একশত ভাগ খাঁটি। সৎ। এখন লেখার হাত হয়ত কিছুটা পেঁকেছে; ছন্দ, মাত্রা, অন্ত্যমিল নিয়ে খেলা করতে শিখেছি কিন্তু সেই আবেগ কি আর এখন ধারন করি? সন্দেহ আছে।
আমার প্রেমের ছড়ায় আগে ছিল শুধু অন্ধ ভালোবাসা। আর এখন সংসার, পরিবার, সমাজ, প্রিয়ার লিপিস্টিক... কতকিছু।
শিশুতোষ ছড়ায় ছিল শুধু কৈশরের সত্যিকার আবোল-তাবোল ভাবার, আকাশকে বোন বানিয়ে রাখি পরিয়ে দেয়ার, ব্যাঙ-ব্যাঙাচিকে দিয়ে মিছিল করানোর, স্মারক হাতে কচ্ছপকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়ার আর কাগজের নৌকাকে বেদুঈনের সর্দারের উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দেয়ার তুমুল সাহস। এখন ওসব ছড়ায় ‘আহা! বড় ভালো দিন ছিল...’ কিসিমের দু’চারটা হতাশার কথাই কেবল বলতে পারি।
রাজনৈতিক ছড়া আগে লিখতাম প্রায় জিঙ্গোবাদী দেশপ্রেম নিয়ে। এখন যে কোন ইস্যুতেই দুই লাইন লেখার আগে মাথায় আনতে হয় রাজনৈতিক শুদ্ধতা, তথ্যের ভিত্তি, নানান দলীয় ও রাষ্ট্রীয় অবস্থান, বক্তব্য, লাল-সাদা-জলপাই কত রং, কত ছাতার মাথা।
এই পান্ডুলিপি পড়তে পড়তে আমি বারবার ফিরে ফিরে গেছি আমার লেখালেখি জীবনের শুরুর দিনগুলোতে। কৈশরের স্কুলের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় শব্দ নিয়ে আঁকিবুকির দিনগুলোতে। নতুন লেখা ব্যাগের পকেটে নিয়ে দিনের পর দিন উন্মাদ অফিসে ঘুরঘুর করা কিন্তু সম্পাদক আহসান হাবীবকে দিতে না পারার সংকোচময় দিনগুলোতে। অবশেষে দিতে পারার পর সম্পাদকের ছোট্ট ‘বাহ্’ শুনে নিজেকে ঢাকা শহরের মেয়র ভাবার দিনগুলোতে। তার দেয়া এমন আরও হাজারো ছোট্ট ছোট্ট সাহসে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার দিনগুলোতে। সে সময়ের উন্মাদ যোদ্ধা হাসান খুরশীদ রুমী, সাজ্জাদ কবীর, কাজী তাপস, আজিজুল আবেদীন, জুলকারিন জাহাঙ্গির, আসরার মাসুদ, আবদুল্লাহ শাহরীয়ার টুটুল, মিজানুর রহমান কল্লোল, তারিকুল ইসলাম শান্ত, সাগর খন্দকার, তানভির ইবনে কামাল, মাহবুবুল আলম মাসুদ, জুন্নুনুর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, প্রচ্ছদ চৌধুরী ও মেহেদী হকসহ আরও কিছু মানুষের স্নেহ ও ভালোবাসার ঋণে জর্জরিত হওয়ার দিনগুলোতে। ছড়াকার রোমেন রায়হান ও ওবায়দুল গনি চন্দনের ছড়া পড়ে নিজেকে ‘বুলশিট’ ভাবার দিনগুলোতে আবার তাদেরই প্রশংসা ও সমালোচনায় অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়ে ছড়া নিয়ে এগিয়ে চলার দিনগুলোতে।
যাই হোক, আমার ছড়াগুলো আমি সবসময়ই লিখেছি আট থেকে আশি সব বয়সী কিশোরদের মাথায় রেখে। চেষ্টা করেছি রাত জেগে পড়ার মত কিছু ঘুমপাড়ানি ছড়া লিখতে। কিছুটা সফল হয়েছি জানি। ব্যর্থতার গল্পগুলো বলতে চাচ্ছি না। পিঠের চাপড় ও সাধুবাদগুলোকে যতœ করে চোখের কোনে সাজিয়ে রেখেছি। হুমকি ও ধমকগুলো রেখেছি শীতল ইস্পাতের মত কোমড়ে গুঁজে। দুঃখগুলো রেখেছি বুক পকেটে, ঠিক হৃদয়ের নয়... আমার ছড়া লেখার লাল কলমটির কাছাকাছি।
প্রিয় পাঠক, আমি ও আমার ছড়ার মত আপনার রজনীও বিনিদ্র হোক।
সূচিপত্র
*
ভালবাসার কয়েক লাইন
*
দৌড়ে পালাই
*
হয়তো ভালবাসা
*
তোমার দেওয়া দুঃখগুলো
*
একটু বেখেয়ালী
*
চুপ বেয়াদব
*
ভালোবাসায় ডক্টরেট
*
অনিক খানের ছড়ার বই
*
তোমায় নিয়ে শের বেঁধেছি
*
বিক্রয়ের জন্য নহে
অনিক খান (ছড়াকার) এর সমগ্র অনিক খান এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 269.50 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Shomogro Anik Khan by Anik Khanis now available in boiferry for only 269.50 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.