Loading...

শাদা পরচুল অন্ধকার (হার্ডকভার)

স্টক:

১৫০.০০ ১১২.৫০

একসাথে কেনেন

ঢাকা’র নগর পরিবেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরকৌশলী, এই সময়ের একজন তরুণ কবি রেজওয়ান তানিম। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মৌনমুখর বেলায়’ (২০১২) নগর জীবনের নানা মাত্রিক বৈচিত্র্য আর দ্বন্দ্বের পাশাপাশি কবিতায় তারুণ্য এবং নগরজীবনের বৈচিত্র্য ও বিষয়ের স্বচ্ছন্দ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যেখানে এসেছে ভালোবাসা এবং জন্ম ও মৃত্যু বিষয়ক অনুভূতি ও অভিব্যক্তি। কিন্তু, তার সাম্প্রতিক রচিত ‘শাদা পরচুল অন্ধকার’ কবিতাগুচ্ছে অনুভূতি ও উপলব্ধির ক্যানভাস আরো প্রসারিত হয়েছে, আরো গভীর হয়েছে সমাজ, পরিবেশ, জীবন এবং পরিচয়ের বিচিত্রতা ও বৈপরীত্য প্রকাশের বিস্তৃত অঙ্গনে। এই বিচিত্রতা ও বৈপরীত্য প্রকাশের জন্য রেজওয়ান তানিম এই কবিতাগুচ্ছে দুটো প্রতীককে খুব সফলতার সাথে ব্যবহার করেছেন। একটি , ‘শাদা পরচুল’, আর একটি হচ্ছে ‘বাণ মাছ’। কবিতার মধ্য দিয়ে বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনে কখনো এই প্রতীক দুটোকে দাঁড় করিয়েছেন মুখোমুখি, পাশাপাশি অথবা আবার কখনো বাণ মাছ এসেছে একা, নিঃসঙ্গ নাহয় অন্য কোন তৃতীয় সবলতর প্রতিপক্ষের প্রবল উপস্থিতিতে বিপন্ন ও অসহায়।

আমরা জানি, মানবসভ্যতার ইতিহাসে অভিজাত শাসক অথবা বিচারক শ্রেণির নারী ও পুরুষদের পরচুলার ব্যবহার ফেরাউন ও রোমান সম্রাটদের সময় থেকেই প্রথমে প্রচলিত হয়। পরবর্তীকালে, পরচুলার ব্যবহারে ভাঁটা পরলেও এই প্রবণতা ভিক্টোরিয়ান আমলে ইউরোপের অভিজাত, বিচারক ও আইনবিদদের মাঝে পরচুলা, বিশেষ করে শাদা পরচুলার ব্যবহার আবার ফিরে আসে, অভিজাত শ্রেণি-শাসক ও বিচারকদের মাথায় এবং উপনিবেশবাদী ধারায় সওয়ার হয়ে এই প্রচলন ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোতেও চালু হতে দেখা যায়, যার অপভ্রংশ এখনো এককালের ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসাবে আমাদের দেশেও এর কিঞ্চিত দেখা মেলে, বিশেষ করে আদালতের অঙ্গনে, বিচারকের আসনে। কবিতাগুলোতে শাদা পরচুলা এসেছে কখনো শাসক, কখনো শোষকের চরিত্রে, সুন্দর ও সাধারণের জীবনের প্রবল প্রতিপক্ষের রূপক চরিত্রে।

বাঙলার অন্যতম প্রথম ও প্রধান স্মৃতিকার ভবদেব ভট্ট। তিনি অনেক যুক্তিতর্ক দিয়ে বৈদিক ধারণা ও মিথের বিপরীতে বাঙালীদের মাছ খাওয়ার অভ্যাসকে সমর্থন করেছিলেন। তিনিই অনেক শাস্ত্র ঘেঁটে প্রমাণ দেখিয়েছিলেন যে মাছ-মাংস খাওয়ায় কোনো দোষ হয় না। কিছু তিথি ও বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে মাছ না খেলেই হলো। অনেকে বলেন বাঙালীর চিরাচরিত অভ্যাসকে সমর্থন না জানিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ তেল বা চর্বির তালিকায় জীমূতবাহন ইলিশ মাছের কথা উল্লেখ করেছেন। বাঙালীর আরেক স্মৃতিকার শ্রীনাথাচার্যও এই মত সমর্থন করেন। বৃহর্দ্ধমপুরাণে আছে যে সাদা ও আঁশযুক্ত মাছ ব্রাহ্মণেরাও খেতে পারেন। কিন্তু, যে মাছ গর্তে বা কাঁদায় বাস করে, মুখ ও মাথা সাপের মত অর্থাৎ যেমন, বাণ মাছ, দেখতে কদাকৃতি, আঁশহীন, পচা, শুকনো মাছ ‘ব্রাহ্মণ’ তথা এদেশীয় বাঙ্গালী অভিজাত শ্রেণি বাঙ্গালী হলেও তাদের ভক্ষণের জন্য ‘নিচু জাতের’ মাছ হিসাবে নিষিদ্ধ ছিল। তবে নিম্নতর সমাজে এসব কেউ মানত না। সমাজে স্তর বিন্যাসে এটাও একটা কারণ। আর সমাজ স্তরের এই বিন্যাসে ‘বাণ মাছ’ অচ্ছুত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। এই অন্যায় সামাজিক ‘অচ্ছুত’, বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার, বাণ মাছ’- যার ভাগ্যে এই বিরূপতা, বহুমুখী কারণে এবং তার অন্যতম কারণ, ‘শাদা পরচুলার নীচে উদ্ধত মস্তিষ্কের নিগড়ে অশুভ চিন্তার কালো অন্ধকার’।

কিন্তু, [বদলাতে এসেছে সে; আপেক্ষিক দুপুর, মুদ্রাঙ্কিত রাত, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের তুলনামূলক পটচিত্রে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র সকাল! (১০)], এটাই কবির সতর্ক বাণী অথবা আশাবাদ। আবার সেই বাণ মাছই একসময় যেন জাতে ওঠার ব্যর্থ স্বপ্ন নিয়ে হয়ে ওঠে এক বিদ্রূপ, [ একটি লাস্যময়ী বাণ মাছ আমার স্বপ্নের ঘোরে ঢোকে শাদা পরচুলা পড়ে। ওকে ধরতে গেলেই পিছলে যেতে থাকে সকাল, প্যাপিরাসে পেখম মেলে ঔপনিবেশিক অন্ধকার। ... অন্ধকার রাতের কল জুড়ে বসে থাকে বিবর্ণতায়; ওদিকে আমার ঘরে ঢোকা বাণ মাছটির শাদা পরচুল খুলে বেড়িয়ে পরে অনাহুত বিষাদ। (১)]

প্রেমের প্রত্যাশিত পৃথিবীতে সর্বনাশের ইঙ্গিতে বিদীর্ণ হয় প্রেমিকের হৃদয়, তাই প্রেম যেন সর্বনাশেরই নামকরণ হয়ে যেতে থাকে, [যে হাত ডালিমের দানা থেকে তুলে আনে সর্বনাশ, তার নাম প্রেম। ... জোনাকি জানে, আঠারো শতকের বোতামে আটকে আছে আমার সর্বনাশের সন্ধ্যাটুকু, যার কোলে চড়ে বসেছে ব্যক্তিগত সূর্যোদয়।... ওদের (বাণ মাছ) ছাই রঙ্গা লিপস্টিক, আমাকে মনে করিয়ে দ্যায় কালকে মাথা থেকে খসে পড়েছে শাদা পরচুল, যা আসলে আগুনের সন্তান। (২)] অথবা, শাসক শ্রেণির চরম ভোগবাদী অত্যাচার আক্রমণে, [পৃথিবীর নিঃস্বতম শালিক ঘুরে বেড়ায় একা একা আপেলের বনে। ছিঁড়তে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি মৃত বাণমাছ, ফলের বদলে ঝুলে আছে বিধ্বস্ত বাদামী শাখায়। ... ঝুলন্ত বাণমাছগুলোর কাছে গেলেই শব্দরা অন্ধকারের কাছে আসে, নৃত্যের শেষ মুদ্রা আহ্লাদিত করে শুকিয়ে যাওয়া লাল পিপড়াকে। (৩)। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের সংজ্ঞা কোন একটা বিশেষ মনোভঙ্গির মতই আপেক্ষিক যদি না, তার ভিত্তি একটি যৌক্তিক প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করেই দাঁড়ায়। প্রকৃতির সাধারণ রূপান্তরের গতির অভ্যন্তরে যে সত্য অথবা বিশ্বাস, সেটা যেন কবি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছেন। যেমন, [অবিশ্বাসের প্রভু! মরেনি রেশম মথ, এখন জীবন তার পাতায় ও পতঙ্গ নামে। (৩)]। আর তাই, যদিও [শহরে অবিশ্বাসের রোদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুশো বছরের পুরনো শকুন। ... অস্থির হওয়া কেউটের মত ফণা তুলে ঘোষণা করে, কুমিরের পেটে এখন শাদা পরচুল। ... আলেয়ার কোলে হাত রেখে বেকে বসে বুটিকের দর্জি, আর বুনবে না জলের নীলনলে পাক খাওয়া এক দল বাণ মাছের ছবিযুক্ত ওয়ালেট।৪)]।

শাদা পরচুলের ঔপনিবেশিক ধুলোগুলোর অবশেষকে কবি চিহ্নিত করেন এই ভাবে, [মনে পড়ে যায়, দীর্ঘস্থায়ী অবিশ্বাসের চিকিৎসায় ফল আসেনি এক বিপ্লবে। আরো কয়েকটি বিপ্লব বিষয়ক কর্মশালা আশু প্রয়োজন, পেলব কবিতা লেখবার স্বার্থে। ... খুব স্বাভাবিক ভাবেই একে জলহস্তীদের চারিত্রিক প্রবণতা হিসেবেই মনে করে বালুঘড়িতে মাপা আপেক্ষিক সময়। (৫)।অথবা, [উর্বরতার চোখে চোখ রাখলেই নেমে আসে সর্বনাশের সিংহ, বলে গেছে শাদা পরচুলে লুকোনো অ্যাসিরীয় অন্ধকার। (৬)। কিন্তু, পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন প্রতিরোধ প্রচেষ্টার ইঙ্গিত, [তাঁকে খুঁজতে শহরে নেমেছে প্রশিক্ষিত বাণ মাছের দল। (৬)। কিন্তু, নিঃশেষ অধঃপতনের শুরুর ইঙ্গিত রেখে যান কবি তার সাবলীল ছত্রে, [মর্গের মানুষগুলো জাবর কাটছে, কখন শুয়ে থাকে শাদা পরচুলটা পচে নীল হবে, পাখীটার মত। গত বৈশাখে মহামতি সিজার পা ডুবিয়ে উদ্বোধন করেন রেড ওয়াইনের পুকুর... রোজ সেখানে পা ডুবান তিনি, কিন্তু কেমন করে তিনি তলিয়ে যাচ্ছেন বাহ্যিক অন্তঃসারশুন্যতায়, বাণমাছগুলো বারবার বলে গেলেও কানে তোলেননি।(৭)।

কিন্তু, বিভেদ, বিভ্রান্তির অন্তহীন সাগরে পথযাত্রা কি বা কতটাই মসৃণ। তাই কবি, বিভ্রান্তির অধ্যায়গুলো যোগ করে লেখেন, [ চুমুক দিয়ে পান করে যৌবন, রক্তপায়ী এ্যারিস; অবিশ্বাসের বাণ মাছ চেয়ে চেয়ে দেখে। অসুস্থতার অমীমাংসিত চিহ্নবিজ্ঞান মেলাতে এসে নিজেকে বিক্রি করে দেয় শাদা পরচুলের কাছে, একটি রাংরাং পাখি। ... পাখিটা জানে বাণ মাছের পিঠেই এখন শুধু প্রাণের স্পন্দন।(৮)। অথবা, বিদায়ের কিছু আগে শহরের বাণ মাছেরা এক বাজার বসিয়েছে প্রতিবেশী সময়ের কাছে। সেখানে কেজি দরে বিক্রি হয় শাদা পরচুল, যার গায়ে মাখানো ভাবমূর্তি, সমবেদনা, ও আরো কয়েকটি ইতিবাচক মানবিক অনুভূতির পরশ। ... ওদের নিজস্ব চেতনা বন্ধক দিয়ে রেখেছে অন্ধকারের কাছে... (৯)। যার ধারাবাহিকতায় পাই, [মৃত্যুহীন সর্পিল গণিত বলে যায় প্রত্যাখ্যাত আশাবাদের গল্প- হলুদ কাগজে যত নীল পতঙ্গের বাস, ওরা সব খেয়েছে এতকাল নিরাশ্রয়ের শাদা পরচুলে মোরা কালো কালো বাণ মাছ। (১০)]

মুক্তছন্দে লেখা ১০ টি কবিতায় শব্দের চয়ন ও ভাষার সাবলীল প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিশেষ ছন্দমাত্রা পেয়েছে কবিতাগুচ্ছের ছত্রগুলো। পাঠে যদিও সাবলীলতার অভাব নেই কিন্তু প্রতীক, রূপক অথবা অন্যান্য শব্দমালার ব্যবহার ও প্রকাশ ভঙ্গীর কারণে সাধারণ পাঠকের কাছে বক্তব্যের বোধগম্যতা নিয়ে কিছু সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। পুরো বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান ও আধুনিক কবিতায় প্রতীক, রূপক, শব্দ ও বিপরীত শব্দের পারস্পরিক ব্যবহারের মাঝে প্রচ্ছন্ন বক্তব্য উদ্ধারে পাঠক কতটুকু মনোযোগী হবেন বলা কঠিন। তবে, গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হলে কবিতা গুচ্ছে যে ইতিহাস ও জীবনের সত্যটি ফুটে ওঠে, পাঠক তার নিজস্ব জীবন ও পরিবেশের সাথে মিলিয়ে বিষয়ের আরো গভীর উপলব্ধির কাছাকাছি পৌঁছাতে যে সক্ষম হবেন, সেটা কিছুটা হলেও নিশ্চিত।

shada-porchul-ondhokar,shada-porchul-ondhokar in boiferry,shada-porchul-ondhokar buy online,shada-porchul-ondhokar by Rezoan Tanim,শাদা পরচুল অন্ধকার,শাদা পরচুল অন্ধকার বইফেরীতে,শাদা পরচুল অন্ধকার অনলাইনে কিনুন,রেজওয়ান তানিম এর শাদা পরচুল অন্ধকার,9789849094869,shada-porchul-ondhokar Ebook,shada-porchul-ondhokar Ebook in BD,shada-porchul-ondhokar Ebook in Dhaka,shada-porchul-ondhokar Ebook in Bangladesh,shada-porchul-ondhokar Ebook in boiferry,শাদা পরচুল অন্ধকার ইবুক,শাদা পরচুল অন্ধকার ইবুক বিডি,শাদা পরচুল অন্ধকার ইবুক ঢাকায়,শাদা পরচুল অন্ধকার ইবুক বাংলাদেশে
রেজওয়ান তানিম এর শাদা পরচুল অন্ধকার এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 120.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। shada-porchul-ondhokar by Rezoan Tanimis now available in boiferry for only 120.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৬৪ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2014-01-01
প্রকাশনী অনুপ্রাণন প্রকাশন
ISBN: 9789849094869
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

রেজওয়ান তানিম
লেখকের জীবনী
রেজওয়ান তানিম (Rezoan Tanim)

রেজওয়ান তানিম

সংশ্লিষ্ট বই