প্রিয় নবীর প্রিয় কাহিনীর যে অচ্ছেদ্য মালা তিনি এই গ্রন্থে গেঁথেছেন, গােটা সীরাত সাহিত্যে এর নযীর মেলা ভার। বিশ্বনন্দিত ইতিহাস গ্রন্থ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া'র পাতায় আল্লামা এমাদউদ্দীন ইবনে কাছীর যে বিশ্লেষণধর্মী দূরদৃষ্টি নিয়ে গােটা মানবজাতির ইতিহাস পর্যালােচনা করেছেন- সেই পরিচ্ছন্ন দৃষ্টি নিয়েই তিনি মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মােহাম্মদ (স.)-এর মহান জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, আর সেই গভীর পর্যবেক্ষণের ফলই হচ্ছে তার অমর সৃষ্টি সীরাতে ইবনে কাছীর।
আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব সাক্ষ্য মােতাবেক যে মানুষটির মাঝে তার সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটেছে, তার পক্ষে এতােটুকু সার্টিফিকেট যােগাড় করার জন্যে আমরা অযথাই দেশ বিদেশের লেখক ও ঐতিহাসিকদের রচনা চষে বেড়াই। কোন্ আমেরিকান তাঁকে একশ’ সেরা মানুষদের শীর্ষে স্থান দিয়েছেন, কোন্ বৃটিশ লেখক তাঁর হাতে দুনিয়ার তাবৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তার ফিরিস্তি দিয়ে আমরা কি আসলে মানবজাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটির ওপর ইনসাফ করছি? যারা তাঁর নামে এ বিপুল সম্মাননার স্তুতি গেয়ে বেড়ান তারা কয়জন তাদের জীবন তার আদর্শের আদলে সাজাতে চেয়েছেন? এর নির্মম জবাব হচ্ছে না, এদের একজনও চাননি। অথচ তাদের সামান্য অংশও যদি তা চাইতেন তাহলে সম্ভবত আজ এই পৃথিবীর মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্র ভিন্নভাবে অংকিত হতাে।
আজ আমরা যারা নিজেদের এই মহান মানুষটির অনুসারী বলে দাবী করি, আমরাও যেন জীবনের অন্যান্য সব কাজকর্মের মতাে সীরাত চর্চাতেও তাদের অনুকরণে মেতে উঠেছি। সীরাতুন্নবীর রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তঃরাষ্ট্রীয় অকেশানে সুন্দর বাণী দেয়া, বড়াে বড়াে জমকালাে অনুষ্ঠানে তার আদর্শের পক্ষে জোরালাে বক্তব্য পেশ করা ও মিডিয়ার এয়ার কন্ডিশন রুমে বসে তাঁর ত্যাগ তিতিক্ষার গল্প বলে দর্শক শ্রোতার বাহবা কুড়ানাে আর জীবনের খুঁটিনাটি কার্যকলাপে প্রতিনিয়ত তাকে অনুসরণ করার মাঝে মনে হয় একটা আকাশ পাতাল ফারাক আছে। এ ফারাক যতােই বাড়ছে ততােই যেন আমরা ধীরে ধীরে সমস্যার অতলান্তে ডুবে যাচ্ছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) মদীনার রাস্তা অতিক্রম করার সময় প্রিয় নবীর উটের পা ফেলার স্থান দেখে দেখে পথ চলতেন। কেননা তিনি জানতেন, নবীর স্তুতি গেয়ে মহাকাব্য রচনা করার চাইতে নিজের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তাঁর পদাংক অনুসরণের মূল্য অনেক বেশী।