ফেরা। অন্ধকার থেকে আলোতে। পুরো হিজাজ-জুড়ে তেমনি এক সময় শুরু হয়ে যায় অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরার উৎসব। সৃষ্টির সেরা মানুষটি এলেন প্রতিপালকের মহান বার্তা নিয়ে। তাঁর কর্মের সাথে এ বার্তা মিশে একাকার হলো। তৈরি হলো নতুন জীবনপ্রবাহ। নতুন অচেনা মুখ। মানসভূমি। সাহাবি-সঙ্গী। এভাবে তাঁর তেষট্টি বছরের জীবনস্রোতে আবিষ্ট হলো অযুত-লক্ষ মানুষ; যাদের হৃদয়ের আলোর রশ্মি সবখানে জায়গা করে নিল। দেড় হাজার বছর আগে, রাসুল সা.-এর সেই মহা আবির্ভাবে আলো আর তাপ দিগদিগন্তে দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল। তাউহিদের সুরভি ও নবীজির মানবিক বোধ আজও অনির্বাণ। এ নিয়েই আবদুল আযীয আল আমানের ‘শুদ্ধতম’ নির্মাণ—রৌদ্রময় নিখিল..
আলোর আবাবিল
নিবিড় অন্ধকারে মানুষকে পথ দেখাতে আলো হয়ে পৃথিবীতে এলেন তিনি। ঘন অন্ধকারে আলোর মতো জ্বলে উঠলেন, তিমির বিদীর্ণ করে সুবহে সাদিকের আলো হয়ে ফুটে উঠলেন তিনি। অত্যাচার সহ্য করে পরাজিত করলেন অত্যাচারীকে। বুক ভরে ভালোবেসে বশ করলেন শত্রুকে। প্রেম দিয়ে জয় করলেন মানুষের হৃদয়। তাঁর মমতামাখা হাত দুটিতে বাঁধা পড়ে গেল তামাম বিশ্বের ইয়াতীম-মিসকিন, অনাথ-আতুর, দীন-দুঃখীরা। রক্তস্নাত মরুর ধূলায় আবার মাথা তুলে দাঁড়াল মানবতা, সত্য ফিরে পেল আপন আসন, হিংসা-বিদ্বেষ-দখল নিল প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা। যে অনির্বাণ আলো তিনি সাথে করে এনেছিলেন, তাতে পথ খুঁজে পেল পথহারা মানুষের দল। নতুন আলোয় চোখ মেলে সকলে নির্ভয়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে, কল্যাণের দিকে, শাশ্বত সত্যের পথে..।
আলোর রাসল আল আমিন
দুর্ভেদ্য বন! অতিকায় মনে হয় রাতের অন্ধকারে। অন্ধকার চেপে থাকে পাষাণের মতো। ভয়াল অন্ধকার। হিংস্র অন্ধকার। প্রভাতের আলো ফোটে। সেই আলোর তাড়া খেয়ে পালায় অন্ধকার। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অরণ্যের তলদেশ পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
শুধু কুরাইশ নয়, তৎকালীন জাহিলী সমাজের সমগ্র মানুষের মনের বনেও অন্ধকার চেপে ছিল পাষাণের মতো। বহু যুগ থেকে। সেই অন্ধকারে আলো পড়ল হঠাৎ। জ্ঞানের আলো। সত্যের আলো। আলো ফেললেন রাসুলুল্লাহ সা.। হজরত মুহাম্মাদ সা.। আল্লাহর রাসুল। জমাট অন্ধকারে আলো পড়তে নড়ে চড়ে বসল সেই মানুষগুলো।
মহানুভবতা, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ, দায়িত্ববোধ, ধৈর্য ও স্বচ্ছতা—এ রকম আরও অনেক মানবীয় আলোকের আলোয় উজালা হলো জগৎ। স্থান করে নিল মানুষের হৃদয়ের বন্দরে। যে আলো যুগ-যুগান্তরেও নেভে না। যা অমলিন⸺অস্বচ্ছ হয় না। সমুদ্রের সফেদ তরঙ্গের মতো যা মানুষের হৃদয়-তন্ত্রীতে বেজে ওঠে, ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়, একান্ত অন্তরঙ্গ মূর্ছনায়।
সেই ফুলেরই রৌশনিতে
ঊষর আরবে ফুটেছে এক নতুন কুঁড়ি, আসমানি ফুল। এক অলৌকিক সুবাসে মাতোয়ারা পৃথিবী, সে সুবাস বিমোহিত করে কুল-মাখলুকাত⸺তামাম সৃষ্টি।
যে আরব ছুটেছিল অনৈক্য, লড়াই, হিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষ আর খুনোখুনিতে, সে আরব বাঁক নিল জীবনের নতুন পথে। যে সমাজ পার করছিল পাপের সীমাহীন অন্ধকার দুর্গন্ধে, সে সমাজ আলোকিত হলো এক আসমানি সৌরভের রৌশনিতে। এক অলৌকিক সুমধুর সুবাসে।
সে সৌরভ দখল নিল ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-অন্তর্দ্বন্দ্ব—সবকিছুর। হৃদয়ে নিয়ে এলো সখ্য-মিতালি, ন্যায়বোধ ও মানসিক প্রশান্তি। সে ফুলের সুবাসে সিক্ত হলো তৃষিত মন⸺হাজারো পাপের ভারে যা ন্যূব্জ করে তুলেছিল মানুষকে।
মক্কা-মদিনার মরুময়, রুক্ষ প্রকৃতিকে সে সুবাস মোহিত করেছিল, সিক্ত করে তুলেছিল। শক্ত শিলার ওপর যেন হাসনাহেনার কোমল হাসি। পুরো পৃথিবী হেসে উঠল সেই হাসিতে, সৃষ্টজগৎ ঝলসে উঠল সেই সুরভে⸺সেই ফুলেরই রৌশনিতে..।
মানুষের নবী
রাজা। কে রাজা? নবীজী? না, তিনি রাজা নন, বেহেশতি আলো যেন। সেই আলো দেখার জন্য ভিড় জমছে। সেই চাঁদকে দেখার জন্য মানুষ দিশেহারা।
মুহাম্মাদ সা.। না, তিনি রাজা নন। বাদশাহ নন; হিজাজের সম্রাটও নন। তিনি রাসুল। রাহমাতুল্লিল আলামিন। মানুষের নবী। নবীদের নবী। জগতের সেরা সৃষ্টি। সৎগুণের সর্বোচ্চ উৎকৃষ্টায় ভরপুর নিষ্কলুষ চরিত্র। মানবিক। জ্যোতির্ময়। সর্বকালের সেরা মানুষ। তার দুয়ারেই মানুষ ছুটে ছুটে আসছে।
পৃথিবীতে আজ অন্য দৃশ্য। অন্য রূপ। মেঘ নেই। বিদ্যুৎ-গর্জন নেই। পূর্ণ চন্দ্র। চাঁদের আলো উপচে পড়ছে। চারপাশ আলোকিত উঠছে। সেই আলোকের আধার কে? রাহমাতুল্লিল আলামিন। দীন-দুঃখীর নবী; মানুষের নবী; নবীজি—মুহাম্মাদ সা.
অনন্তের দিকে
পার্থিব ধূলিমালিন্যকে নিচে ফেলে উজ্জ্বল শুকতারার মতো জাতিবর্ণের বহু ঊর্ধ্বে মানবিকতার দিকে সকলের অখণ্ড মনোযোগকে আকৃষ্ট করলেন তিনি। বাদলপোকার মতো যে ক্ষণজীবী ভাবনারা সেই লোকগুলোর মানসিকতায় উৎপাতের মতো সমানে ফরফর করছিল, বজ্রের ঝলকানিতে তাদের হাত-পা-ডানাগুলো পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল চিরদিনের মতো। সেই নির্ঘোষ থেমে গেছে। বিচ্ছিন্ন চেতনাগুলো আবার একসাথে একজোট হয়ে অনেক কুলীন সম্ভ্রম চোখে নিয়ে ফিরে এলো সেই জ্যোৎস্নাপ্লাবিত মুখের চারপাশে। সেই প্রশান্ত মিতবাক মুখে তখন হিরার ধ্যানগম্ভীর মৌনতা।
তাঁর চারপাশ ঘিরে নিশীথ বনরাজির বিস্ময়কর নির্জনতা বেজে যাচ্ছিল তখন। সকলে অনুভব করলেন⸺সেই নিশীথ অরণ্যের বিপুল শীর্ষদেশে অস্পষ্ট ধ্বনিপুঞ্জের ওপর আর এক প্রতিধ্বনি, কী এক মহান বারতার মতো অবিরাম ঝরে পড়ছে। হঠাৎ ঘর আলো হওয়ার মতো সকলে দেখতে পেলেন, এসব কথাবার্তা বর্তমানকে অতিক্রম করে আর এক অনন্ত কিছুর দিকে ঝুঁকে আছে।..
আবদুল আযীয আল আমান এর সিরাত সিরিজ ১-৬ (সিরাত-গল্প কালেকশন) এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 600.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Seerat Series 1-6 (Seerat Golpo Collection) by Abdul Aziz Al Amanis now available in boiferry for only 600.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.