ক্রেতার পর্যালোচনা

1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা

• পর্যালোচনা লিখেছেন 'আব্দুর রহমান'

  ➤ কাহিনী সংক্ষেপঃ- প্রান্তি নামক মেয়েটির রহস্যময় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে "সিক্রেট ডায়েরি" বইটির কাহিনী শুরু হয়। একদিন বাড়িওয়ালা ও তার কাজের মেয়ে এসে দেখল প্রান্তির ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। পুলিশকে খবর দেয়া হলো। পরিবারের সবার দাবি প্রান্তি আত্মহত্যা করেনি বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে হত্যার তাৎক্ষণিকভাবে কোন আলামতও পাওয়া গেল না। লাশের ময়নাতদন্ত শুরু হলো। হত্যা নাকি আত্মহত্যা এটা সমাধান করতে দায়িত্ব দেয়া হলো তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এস আই আসিফের হাতে। এস আসিফের হাতে প্রমান বলতে প্রান্তির লেখা তিন খন্ডের ডায়েরি। যেখানেই হয়তোবা লুকিয়ে আছে প্রান্তি হত্যার রহস্য। তদন্তে নার পর আসিফের শুরুতেই সন্দেহের তীর প্রান্তির স্বামী রাজিব রায়হানের দিকে। তাদের প্রেম ভালোবাসার মাধ্যমে বিয়ে হয়। কিন্তু রাজিব রায়হান শুরুতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। রাজিব ধর্ম, সমাজ, আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ প্রান্তিকে বিয়ে করার জন্য রাজিব রায় থেকে হয়ে ওঠেন রাজিব রায়হান। যদিও পরবর্তীতে তাদের দাম্পত্য জীবন তেমন সুখময় ছিল না। এরপরে সন্দেহভাজন খুনিদের তালিকায় উঠে আসে লেখক জাহিদ কামাল এর নাম। তিনি দেশের স্বনামধন্য লেখকদের অন্যতম। গল্প কবিতা উপন্যাস সব ক্ষেত্রে তার জীবনমুখী লেখা পাঠকদের কাছে প্রশংসিত। তবে প্রান্তির সাথে তার কোন প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না। বরং লেখক-পাঠক সম্পর্ক ছিল। আরেক সন্দেহভাজন বীথি। বীথি রাজিবের বৌদির কাকাতো বোন। একসময় রাজিবের কোম্পানিতে চাকরি করতো। দেখতে সুন্দরী ও আকর্ষণী চেহারা অধিকারিণী। রাজিবের সাথে তারও প্রেম পরিণয় হয়েছিল। তদন্ত করতে নেমে এস আই আসিফ যেন কোনো কুল কিনারা পাচ্ছে না। প্রান্তি কি আ*ত্মহত্যা করেছে? নাকি তার মৃ*ত্যুর রহস্য অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে? লেখক জাহিদ কামালের সাথে প্রান্তির সম্পর্ক এত গভীর কেন? তাহলে কি এই খুনের পেছেন কোনভাবে বীথির হাত আছে? প্রশ্নের পর প্রশ্ন, আর রহস্যের জাল যেন ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে । পুলিশের তদন্ত, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট - সবকিছুই যেন এক অজানা গন্তব্যের দিকে ধাবিত করে। এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে পড়তে হবে লেখা ❝সিক্রেট ডায়েরি❞ বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। ➤ লেখনশৈলীঃ- এটি আমার পড়া লেখকের প্রথম বই। যদিও তিনি একজন জনপ্রিয় লেখক। কিন্তু একটিমাত্র বই পড়ে লেখকের লেখা বিচার করা ঠিক কিনা জানা নেই তবুও আমার মনে হয় জিল্লুর রহমান এর লেখা এ বইটি সত্যিই খুব সুন্দর। যেখানে রয়েছে রহস্য, থ্রিলার এবং সামাজিক বার্তার অসাধারণ মিশেল। উনার লেখা পড়ার পর মুগ্ধ হয়ে আমিও বলছি আমি লেখকের বাকি বইগুলোও পড়তে চাই এবং সংগ্রহও করবো ইনশাআল্লাহ। অন্তত এই বইটি পড়ে আমি বলতে পারি, সকলের বইটি একবার হলেও পড়া উচিত। . ➤ ব্যক্তিগত অনূভুতিঃ- বইটি পড়া শুরু করার পর কিছুদূর যেতেই মনে হলো যেন এক অদৃশ্য দরজা খুলে গেল, আর আমাকে টেনে নেওয়া হলো এক অজানা জগতে। উপন্যাসের মধ্যমনি প্রান্তি, যার মৃত্যুকে তো ঘিরেই এত রহস্যের মোহজাল। পুলিশ কর্মকর্তা এস আই আসিফ এর প্রতিটি তদন্তের মূহুর্তে আমিও যেন নতুন নতুন রহস্যের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল তীক্ষ্ণ তদন্তের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও এগিয়ে চলেছি, তার প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি অনুভূতিতে। লেখকের চমৎকার গল্পবুননের ছোয়ায় ডায়েরিতে লেখা প্রান্তির জীবনের সুখ, দুঃখ, আশা, হতাশা, প্রেম-ভালোবাসা সবকিছুই যেন মনে হলো আমার নিজের। তার সুখে আমি সুখী হলাম, তার দুঃখে আমার চোখও অশ্রুসিক্ত হলো। এমন মন ছুঁয়ে যাওয়া বই কবে পড়েছি মনে নেই। মনে হচ্ছিল এই বই কখনো শেষ না হোক। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, গল্পের সমাপ্তি ঘটেই। শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছে, মনে হল এত তাড়াতাড়ি শেষটা এভাবে না।হলেও পারতো। এই বই সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু বইয়ের সৃষ্ট মোহময় পরিবেশে, শব্দগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমার জীবনে পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর তালিকায় এই বইটি স্থান করে নিয়েছে। এই মুগ্ধতা, এই অনুভূতি, ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। শুধু বলতে পারি, "সিক্রেট ডায়েরি" আমার হৃদয়ের গভীরে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। . ➤ সমালোচনাঃ- নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করলে একটি বিষয় চোখে লাগে। সেটা হলো প্রান্তির লাশ পাওয়ার পর শুরুতে ময়না তদন্তের মাধ্যমে প্রমান করার একটি বিষয় থাকে যে সেটি আসলে হত্যা নাকি আত্মহত্যা। কিন্তু সেটা প্রমাণিত হওয়ার আগেই দুজন আসামীকে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা আমার কাছে ভালো লাগেনি। এছাড়া পুরো উপন্যাসের দৃশ্যায়ন আসলে সিনেমা হিসেবে পড়াই ভালো। পুরো গল্পটাই তেমনই, ব্যতিক্রম বলতে এখানে উপন্যাসের নায়ক নায়িকা কেউই একটি প্রেম ভালোবাসায় আবদ্ধ থাকেনি। বরং নিত্যনতুন প্রেমের ঘনঘটা ছিল। তবেলেখকের বর্ণনা শৈলী প্রাঞ্জল হওয়াতে এসব কিছু নিয়ে অভিযোগ করার কিছু থাকে না। বইতে তেমন বানান ভুল চোখে পড়েনি। প্রচ্ছদে নতুনত্ব আছে, ভালো লেগেছে। . ➤ এই বইটি কাদের জন্যঃ- যারা রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস পছন্দ করেন। যারা সামাজিক বার্তা সমৃদ্ধ বই পড়তে চান। যারা লেখক জিল্লুর রহমানের ভক্ত ও শুভাকাঙ্খী। সর্বোপরি বই পড়ুয়া সকল পাঠকের জন্য "সিক্রেট ডায়েরি" হতে পারে আপনার বই তাকের অপরিহার্য সংযোজন। বই পড়ার সময় আপনি বুঝতেই পারবেন কাহিনি কোন দিকে যাচ্ছে। আপনি হয়তো এটাই ভেবে বসে থাকবেন যে এটা সাধারণ একটা হত্যা বা আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু আপনার ধারণা কে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে দিয়ে কাহিনী ঘুরে যাবে অন্যদিকে৷ তাই আর দেরি না করে আজই বইটি সংগ্রহ করুন!

  March 18, 2024