বিবেক ও জ্ঞান দেয়া সত্ত্বেও শয়তানের প্রলােভনে পড়ে মানুষ সিরাতে মুসতাকীম হতে বিচ্যুত হতে পারে এ জন্য বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠিয়ে মানব জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত পথে চলতে সহায়তা করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর হতে নবী-রসুলের মাধ্যমে আল্লাহর পথ ও বিধিবিধানের অনুসরণে মানব প্রজাতির ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক পরিত্রাণ আশা করা যায়। আল্লাহ কর্তৃক নবী-রসুল প্রেরণের ধারাবাহিকতায় মুহাম্মদ (স.) শেষ ও শ্রেষ্ঠ রসুল। তার নবুয়তের ধারাক্রমে ইসলাম একটি স্বয়ং সম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে আল্লাহর স্বীকৃতির ঘােষণা আসে ওহি প্রেরণের শেষপ্রান্তে। এটি সত্য যে, নবুয়তের ও রিসালাতের ধারা বন্ধ হওয়ায় তার পর। আর কোনাে নবী ও রসুল আসবেনা এই ধরাধামে। কিন্তু মহানবী (স.) সারা বিশ্বের মানবগােষ্ঠীর জন্যে প্রেরিত রসুল হিসেবে তার প্রচারিত ইসলামের কার্যক্রম চলতে থাকবে প্রলয় পর্যন্ত। তিনি সর্বোত্তম আদম সন্তান ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হওয়ায় অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে দীপ্তিমান থাকবেন কাল থেকে কালান্তরে। তাই তার। সিরাহ-এর অধ্যয়ন ও চর্চা বিশ্বইতিহাসের পরিমণ্ডলে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। আর মহানবীর (স.) সিরাহ বা চরিত ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই মুসলমানদের ইতিহাসচর্চার উদ্ভব ঘটেছে। তিনি ঐতিহাসিক যুগে আগমন করেছেন এ বিশ্বে। ফলে আল-কুরআন ও সুন্নাহ ব্যতীত তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানার উপকরণ ও উপাদান তমসাবৃত্ত নয়, বরং স্বচ্ছতা ও প্রাচুর্যে দেদীপ্যমান। আরবিসহ সময় ও কালের পরিক্রমায় প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর সিরাহ-এর ওপর প্রচুর গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বাংলা ভাষায়ও রসুলে আকরাম (স.)-এর চরিত্র ইতিহাসের ওপর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অসংখ্য গ্রন্থ ও পুস্তিকা প্রণীত ও প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহানবী (স.)-সিরাতের ওপর সারওয়ার-ই-কায়েনাত মুহাম্মদ (স.) শিরােনামের এই রচনাটি আমার অন্তর্বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রকাশমাত্র। এটি ইতিহাসের পরিছায়ায় তথ্য ও বিশ্বাসনির্ভর একটি সিরাত গ্রন্থ। ছাত্র-ছাত্রীসহ অনুসন্ধিৎসু পাঠকগণ মহানবী (স.)-এর জীবনের ধারাবাহিক ঘটনাবলি এবং ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন এই গ্রন্থের পাঠ থেকে। প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত থাকতে পারে এবং তাতে করে এটির স্বকীয়তায় কোনাে ব্যত্যয় ঘটবেনা বলে আমি বিশ্বাস করি। মহানবী (স.)-এর সিরাত রচনার এই ক্ষুদ্রতম প্রয়াস আমার পারলৌকিক জীবনের পাথেয় হিসেবে কবুলের আবেদন আল্লাহ রাব্বল আলামীনের নিকট বিনয়াবনতচিত্তে পেশ করছি।