বাংলাদেশ সংস্কৃতির দেশ ছিল; কিন্তু এখন অপসংস্কৃতির দেশ। কায়েমিস্বার্থবাদীরা অপসংস্কৃতিকেই সংস্কৃতি বলছেন। বাংলাদেশে উন্নত সংস্কৃতিচিন্তা ছিল, এখন সংস্কৃতি আমাদের এক হারানাে প্রত্যয়। কেবল নাচ-গানবিনােদনকেই এখন সংস্কৃতি বলে প্রচার করা হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত-চর্চায় দেশের জনগণের বৃহত্তর অংশ একাত্মতা বােধ করে না। নজরুলসঙ্গীত-চর্চার অবস্থাও। একই রকম। রাজধানী ঢাকায় পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তা নিয়ে। রাজনীতিবিদদের, বিশিষ্ট নাগরিকদের ও রাজনীতিতে সক্রিয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির মধ্যে কোন্‌টি কতখানি আছে? সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক অবস্থাই বা কেমন? ব্রিটিশ শাসিত বাংলায় সৃষ্টি হয়েছিল এক রেনেসাঁস। পাকিস্তানকালেও চলমান ছিল সেই রেনেসাঁস। রেনেসাঁসের ধারাবাহিকতায় দেখা দিয়েছিল গণজাগরণ। স্বাধীন বাংলাদেশে সার্বিক বিশৃঙ্খলা ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে সেই রেনেসাস ও গণজাগরণ আর থাকেনি। শিল্প-সাহিত্যে ও গবেষণায় এবং রাজনীতিতে এখন যেসব চিন্তা কাজ করছে, তাতে উন্নত ভবিষ্যত সৃষ্টির অনুকুল কী আছে? বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে প্রতিষ্ঠিত রাখার ও উন্নত করে চলার কার্যক্রম ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই আর চালু নেই। বাংলাদেশকেও স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে গড়ে তােলা হচ্ছে না। বাংলাদেশ চলছে সাম্রাজ্যবাদের অন্ধ অনুসারী হয়ে। দেশের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্র গঠনের ও মনুষ্যত্ব-বিকাশের পরিপন্থি। ১৯৮০-র দশক থেকে কিছু লােক জনমনে ধর্মপ্রবর্তক ও ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা জাগাবার জন্য প্রচারকার্যে তৎপর ছিলেন। একাজে বিবিসি রেডিও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ক্রমাগত উস্কানি দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যে দার্শনিক-বৈজ্ঞানিকদের ও রেনেসাঁসের মনীষীদের প্রতিও জনমনে জানার আগ্রহ ও শ্রদ্ধাবােধ অবশিষ্ট নেই। এখন আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে কেবল সম্পত্তি অর্জন ও বাংলাদেশ ছেড়ে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলােতে চলে যাওয়ার প্রতি। ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার যেমন হচ্ছে তেমনি হচ্ছে অপব্যবহারও। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই চলছে নৈতিক চেতনার ক্রমাবনতি। দুর্নীতি বাড়ছে, অন্যায়-অবিচার বাড়ছে, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার ও আইন-কানুন উন্নত করার কোনাে চিন্তা নেই।