জাহানারা বুলার কবিতার সকাল সন্ধ্যা:
প্রেম কবিতার চিরায়ত বিষয়। প্রকৃতি ও মানবের মহাশে^ত প্রেম। আসলে প্রেম কী কৃষ্ণের বাঁশি, রাধার উৎকন্ঠা। প্রেম হয়তো কালি ও কমল কিংবা ফুল ও ফল। তা যদি হয় বর্ণ কিংবা অক্ষর, হয় যদি অনুভবের আকর, শিবের জটা থেকে গঙ্গার মুক্তি। কবিতা তাহলে সংসার নাকি সন্ন্যাস? আর কবি কী শিব ও কৃষ্ণের সম্মিলিত শক্তি? প্রজ্ঞা ও প্রতিক্ষা দিয়ে হৃদয়ের অনুভবকে শব্দে বর্ণে উপমায় প্রকাশ হয়তো কবিতা। স্যারম্যান আলেকস মার্কিন কবি বলেছেন-কবিতা ক্ষোভ সময় স্বপ্ন আর প্রেমের সমর্থক। প্রেমের জতুগৃহে সবই এক শিব, কৃষ্ণ, চণ্ডীদাস, ইউসুফ, ফরহাদ। এই উপমহাদেশে নরনারীর সম্পর্ককে প্রেমের প্রতীকরূপ বলা হলেও এর আছে এক চিরায়ত রূপ এক শাশ^ত শক্তি। কোনো কবি যখন সেই প্রেম শক্তির মহীসোপানে পা রাখতে চান তখন মহাকাল তাকে ডাকে তাকে স্থান দেয়, বর দেয়। শুধু পুরুষ কী প্রেমের প্রতিভূ, তারই কী অধিকার প্রেম নিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির, না নারী ভারতবর্ষের প্রেমাধার। তার শক্তির মধ্যে সিংহভাগ অনির্বচনীয় প্রেম আর মমত্ব। আজকে এতগুলো চরণ প্রেমের দ্বৈতাদ্বৈত বিচারে ব্যয় করছি এ জন্যে যে কবি জাহানারা বুলা প্রেমকেই তার কবিতার প্রধান উপজীব্য করে তুলেছেন। প্রেমের গোলক ধাঁধায় কবি যখন পা দেন তখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দূরূহ হয়ে ওঠে। সমাজ সংসারে আরো কত পীড়ন উৎকন্ঠা মৃত্যু আর নৃশংসতা নির্দয় বিচ্ছেদ আর বিরহ কাতরতা। কীটস তার প্রেমিকা ফেনি ব্রাউনের উদ্দেশে লিখলেন-O immortal bird, you have not been born to die.
হে আমার পাখি তুমি জন্মাওনি মৃত্যুর জন্য। প্রকৃতির অনন্ত প্রবাহ বৃক্ষলতা পাতা ফুল ফল সবই কবিদের অনুভবে নতুন সৃষ্টির শাখা তৈরি করে। এক অনিন্দ্য শিল্পশৈলী তাদের সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সারথি হয়। আমি সম্প্রতি প্রতিকবিতা ও উত্তরাধুনিক কবিতার ক্লিশে সংজ্ঞার্থের বাইরে এসে প্রেম ও প্রকৃতির নিয়ম অনেক গুরুত্বের সংগে দেখেছি। এই বিক্ষন চর্চায় যে কজন কবি আমার পাঠে অন্তর্ভুক্ত জাহানারা বুলা তাদের একজন। ওর নতুন বইয়ের নামটিও আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ বড় দুঃসময়। অধিকাংশ কবি যেন শ্মশানচারিতায় মগ্ন। জটিল এক কাব্য মন্ত্রণালয়ের লালকিতাব দৌরাত্মে তরুণ ও নিমগ্ন কবিদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমি এই সৃষ্টিশীলদের পাশে দাঁড়িয়ে জীবন প্রকৃতি ও প্রেমের কারাবাস অংশ নিতে চাই। ইতঃপূর্বে জাহানারা বুলার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দিনদিন তার কাব্য যাত্রায় নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জারিত হচ্ছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে। শুধু প্রকৃতি ও প্রেমই কী কবির অভিজ্ঞ হবে। না তা নয়। কবি নিশ্চয় ভাববেন তার প্রতিপার্শ। ভাববেন তার বাঁচার ও যাপনের উচ্চারণ নিয়ে। শুধু ফুল তোলবার দিন তো এখন নেই। কিন্তু ফুলকে কী করে দশভূজার সাথে সাথে বিসর্জন দিই। নজরুলই আমাদের বলেছেন- মম এক হাতে বাঁকা বাশের বাঁশরি, আর হাতে রণতূর্য। জাহানারা বুলা লক্ষ্য রেখেছেন তার কলমের দিকে এবং বিশ^কর্মার অপরাজেয় প্রতিরূপের দিকে। ভূজঙ্গের ফণায় যেন তার মৃত্যু না হয়, যেন সমুদ্র মন্থিত বিষই আমাদের পানীয় না হয়। যেন অমৃত আকণ্ঠ পান করার সৌভাগ্য হয়। জাহানারা বুলার ঈশ^র তার হৃদয়ে। তিনি ঈশ্বরকে প্রেমের সমার্থক করে তুলেছেন। মানবিক সত্তার। জল পড়ে, পাতা নড়ে। কী বিষময় এখানে। রবীন্দ্রনাথ কী বিষময়ে তাকিয়ে রইলেন, কান পেতে অনন্তকে অনুভব করলেন। সেই অনুভবের সুন্দর কালো কবিতায় চিরবহমান। প্রকৃতি বিনাশের যে কুঠার তা পরশুরামের নয় বরং তা সম্রাজ্যবাদী শক্তির আনবিক আক্রোশ খচিত এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিভাস। কবি পাহারা দেয় সত্যতাকে, মানুষের আত্মাকে, বৈষ্ণব পদাবলী, কৃষ্ণ কীর্তন, ভগবতগীতা এই উপমহাদেশে যে প্রেম ও প্রার্থনায় ঈশ^র প্রাপ্তির কথা বলেছেন- তা কী সবই মিথ্যে? না। আমরা কী জানি না কর্মই কাঞ্চন। আমরা কী জানি না মোহ আসে ঈর্ষা ও হিংসার অন্ত্রদেশ থেকে। জাহানারা বুলা ঐহিত্যানুগ। চিরায়ত প্রেম যা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, ব্যক্তি ও সমাজকে নির্মল করে। কবি জানেন যে কালিতে কবিতা লেখা হয় তা হচ্ছে আত্মার রক্ত। সভ্যতার দোয়াত থেকে নেয়া। হৃদয় এবং কবিতা দুটো যেন সহোদর-সহোদরা। তার কোনো আকার নেই। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।’ লালন সারাজীবন এই পাখিটিকে দেখতে চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথও দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু অলি বারবার আসে অলি বারবার ফিরে যায়।
জাহানারা বুলার উচ্চারণে ছত্রিশ রাগ বাগিনীর উৎসরণের প্রচেষ্টা যেমন আছে আছে নিজের অনুভবে নৈরাত্মের নির্বিকল্পা সমাধি। ওর কবিতায় চরণগুলো তুলে দিলে এত যে কথা বলতাম তার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। পাঠক কবির শঙ্ঘধ্বাময় উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে:
‘আমার কেবল একটিই হৃদয় চাই
হৃৎপিন্ড তাদের দিও
তোমার ঘন নিঃশ্বাস শুনে
অবশ হওয়ার মনস্তত্ব
আমার নেই।’
মনে হতে পারে আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু নয় আত্ম আগ্রহের ভেতরে একটা প্রচ্ছন্ন চিরায়ত রূপ আছে। হৃৎপিন্ড এবং হৃদয় দুটো শব্দ। কিন্তু তাৎপর্যের মাত্রায় একটি দৃশ্যমানতায় পরিগ্রাহ্য অন্যটি অপরিমেয় অদৃশ্য কিন্তু অনুভব জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গুরুত্বপূর্ণ তৃষ্ণা নিয়ে কবি জাহানার বুলা কাজ করেছেন। প্রেমের ভাগ্য যে নৈবেদ্য নয় সংগীতে তা কবি জানেন।
আরেকটি কবিতা। ‘অন্ধত্ব প্রেমের প্রতিকূল শব্দ নয়’- এই লেখাটিতে কিছু স্টেটমেন্ট আছে, আছে ব্যক্তি অভিজ্ঞতার আলো।
‘প্রেম ছাড়া অন্য যে কোনো শব্দ
আমার কাছে দুর্বোধ্য
যে সকল শব্দে আমার কবিতারা থাকতে পারে না।
শুনেছি প্রেম শব্দটি বিশ^স্ততায়
বেঁধে রাখে জীবন, কখনো দেখিনি
তবুও সহজবোধ্য এই শব্দের মধ্যেই
ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ি অনায়াসে।’
‘প্রেম’ সহজবোদ্ধ শব্দ। গৌতম বুদ্ধের নির্বানে প্রেম এক জটিল কিন্তু প্রায়োগিক জায়গায় প্রাঞ্জল ‘সহজিয়া’ পর্বে বৌদ্ধিক অনুশাসনে প্রেম এক সর্বব্যাপী সঞ্চারণশীল সত্তার প্রবাহ যা জনে জনে বিতরণযোগ্য। কবি জাহানারা বুলা প্রেমকে সহজিয়া মতবাদের সাযুজ্য করেছেন। আগে বরাদ্দ কবিতায় উদাহরণ দিয়েছি। বরাদ্দ কবিতার শেষ লাইন থেকে একণু উদ্ধৃত করবো- পৌরুষ ছাড়া পুরুষ হওয়া যায়
সূত্রটা শিখে নিও তার কাছে
যে মহাশূন্যে ঘর বাঁধতে জানে।
আমি জাহানারা বুলার ‘প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা’ গ্রন্থের মুখবন্ধের আলোচনার প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম ঘরহীন ঘরের ঐশ্বর্যের কথা। এক ঐতিহ্যিক জায়গা থেকে বুলা তার কবিতার পথ তৈরি করেন এবং লালন, হাসনের যে মরমী চিন্তার তার আঁচে নিজের চেতনাকে ঝলসে খাঁটি করার ক্ষমতা বুলার আছে। হাসন রাজা যখন বলেন-
‘কি ঘর বানাইমু আমি
শূন্যের মাঝার
লোকে বলে বলেরে
ঘর বাড়ি ভালা না আমার।’
আমাদের অন্তিম ঘর যে শূন্যতায়। অসীম নিরাকার পরিব্যাপ্তিতে যে আমরা লীন হবো সেই সত্যের অন্বেষণ কবির আজ। জাহানার বুলা দীর্ঘপথ পরিক্রমায় আমাদের জানান দেন প্রেমের অন্তরাগহন সত্তায় লুকানো আছে বিশ্বরূপ। জাহানার বুলা মরুমার কথা বলেন। সেই সরাসরি সোজাসাপ্টা উচ্চারণের মধ্যেই শিল্পের ব্যাঞ্চন সুপক্ক ও তৃপ্তিকর এবং মনোরঞ্জক। এক প্রতিবাদ যা লুকিয়ে থাকে বক্তব্যের গহীনে। নারী নয় পণ্য, যৌন সামগ্রীর কোনো বিধায়ক। বরং যে সংসারের এমন এক ঐন্দ্রজালিক বাঁশি যা শুধু কৃষ্ণ বাজায় না রাধাও বাজায়। জাহানারা বুলা বলতে চান কবি যে হোক নারী। একই সাথে সে শিব ও সতী। এই সাথে প্রকৃতি ও প্রেম। জাহানারা বুলা প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে পারে, দেখতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে। এখানেই তার কবিতার সকাল সন্ধ্যা। এখানেই তার কবিতার শস্যভূমি।
-রেজাউদ্দিন স্টালিন
প্রেম কবিতার চিরায়ত বিষয়। প্রকৃতি ও মানবের মহাশে^ত প্রেম। আসলে প্রেম কী কৃষ্ণের বাঁশি, রাধার উৎকন্ঠা। প্রেম হয়তো কালি ও কমল কিংবা ফুল ও ফল। তা যদি হয় বর্ণ কিংবা অক্ষর, হয় যদি অনুভবের আকর, শিবের জটা থেকে গঙ্গার মুক্তি। কবিতা তাহলে সংসার নাকি সন্ন্যাস? আর কবি কী শিব ও কৃষ্ণের সম্মিলিত শক্তি? প্রজ্ঞা ও প্রতিক্ষা দিয়ে হৃদয়ের অনুভবকে শব্দে বর্ণে উপমায় প্রকাশ হয়তো কবিতা। স্যারম্যান আলেকস মার্কিন কবি বলেছেন-কবিতা ক্ষোভ সময় স্বপ্ন আর প্রেমের সমর্থক। প্রেমের জতুগৃহে সবই এক শিব, কৃষ্ণ, চণ্ডীদাস, ইউসুফ, ফরহাদ। এই উপমহাদেশে নরনারীর সম্পর্ককে প্রেমের প্রতীকরূপ বলা হলেও এর আছে এক চিরায়ত রূপ এক শাশ^ত শক্তি। কোনো কবি যখন সেই প্রেম শক্তির মহীসোপানে পা রাখতে চান তখন মহাকাল তাকে ডাকে তাকে স্থান দেয়, বর দেয়। শুধু পুরুষ কী প্রেমের প্রতিভূ, তারই কী অধিকার প্রেম নিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির, না নারী ভারতবর্ষের প্রেমাধার। তার শক্তির মধ্যে সিংহভাগ অনির্বচনীয় প্রেম আর মমত্ব। আজকে এতগুলো চরণ প্রেমের দ্বৈতাদ্বৈত বিচারে ব্যয় করছি এ জন্যে যে কবি জাহানারা বুলা প্রেমকেই তার কবিতার প্রধান উপজীব্য করে তুলেছেন। প্রেমের গোলক ধাঁধায় কবি যখন পা দেন তখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দূরূহ হয়ে ওঠে। সমাজ সংসারে আরো কত পীড়ন উৎকন্ঠা মৃত্যু আর নৃশংসতা নির্দয় বিচ্ছেদ আর বিরহ কাতরতা। কীটস তার প্রেমিকা ফেনি ব্রাউনের উদ্দেশে লিখলেন-O immortal bird, you have not been born to die.
হে আমার পাখি তুমি জন্মাওনি মৃত্যুর জন্য। প্রকৃতির অনন্ত প্রবাহ বৃক্ষলতা পাতা ফুল ফল সবই কবিদের অনুভবে নতুন সৃষ্টির শাখা তৈরি করে। এক অনিন্দ্য শিল্পশৈলী তাদের সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সারথি হয়। আমি সম্প্রতি প্রতিকবিতা ও উত্তরাধুনিক কবিতার ক্লিশে সংজ্ঞার্থের বাইরে এসে প্রেম ও প্রকৃতির নিয়ম অনেক গুরুত্বের সংগে দেখেছি। এই বিক্ষন চর্চায় যে কজন কবি আমার পাঠে অন্তর্ভুক্ত জাহানারা বুলা তাদের একজন। ওর নতুন বইয়ের নামটিও আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ বড় দুঃসময়। অধিকাংশ কবি যেন শ্মশানচারিতায় মগ্ন। জটিল এক কাব্য মন্ত্রণালয়ের লালকিতাব দৌরাত্মে তরুণ ও নিমগ্ন কবিদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমি এই সৃষ্টিশীলদের পাশে দাঁড়িয়ে জীবন প্রকৃতি ও প্রেমের কারাবাস অংশ নিতে চাই। ইতঃপূর্বে জাহানারা বুলার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দিনদিন তার কাব্য যাত্রায় নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জারিত হচ্ছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে। শুধু প্রকৃতি ও প্রেমই কী কবির অভিজ্ঞ হবে। না তা নয়। কবি নিশ্চয় ভাববেন তার প্রতিপার্শ। ভাববেন তার বাঁচার ও যাপনের উচ্চারণ নিয়ে। শুধু ফুল তোলবার দিন তো এখন নেই। কিন্তু ফুলকে কী করে দশভূজার সাথে সাথে বিসর্জন দিই। নজরুলই আমাদের বলেছেন- মম এক হাতে বাঁকা বাশের বাঁশরি, আর হাতে রণতূর্য। জাহানারা বুলা লক্ষ্য রেখেছেন তার কলমের দিকে এবং বিশ^কর্মার অপরাজেয় প্রতিরূপের দিকে। ভূজঙ্গের ফণায় যেন তার মৃত্যু না হয়, যেন সমুদ্র মন্থিত বিষই আমাদের পানীয় না হয়। যেন অমৃত আকণ্ঠ পান করার সৌভাগ্য হয়। জাহানারা বুলার ঈশ^র তার হৃদয়ে। তিনি ঈশ্বরকে প্রেমের সমার্থক করে তুলেছেন। মানবিক সত্তার। জল পড়ে, পাতা নড়ে। কী বিষময় এখানে। রবীন্দ্রনাথ কী বিষময়ে তাকিয়ে রইলেন, কান পেতে অনন্তকে অনুভব করলেন। সেই অনুভবের সুন্দর কালো কবিতায় চিরবহমান। প্রকৃতি বিনাশের যে কুঠার তা পরশুরামের নয় বরং তা সম্রাজ্যবাদী শক্তির আনবিক আক্রোশ খচিত এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিভাস। কবি পাহারা দেয় সত্যতাকে, মানুষের আত্মাকে, বৈষ্ণব পদাবলী, কৃষ্ণ কীর্তন, ভগবতগীতা এই উপমহাদেশে যে প্রেম ও প্রার্থনায় ঈশ^র প্রাপ্তির কথা বলেছেন- তা কী সবই মিথ্যে? না। আমরা কী জানি না কর্মই কাঞ্চন। আমরা কী জানি না মোহ আসে ঈর্ষা ও হিংসার অন্ত্রদেশ থেকে। জাহানারা বুলা ঐহিত্যানুগ। চিরায়ত প্রেম যা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, ব্যক্তি ও সমাজকে নির্মল করে। কবি জানেন যে কালিতে কবিতা লেখা হয় তা হচ্ছে আত্মার রক্ত। সভ্যতার দোয়াত থেকে নেয়া। হৃদয় এবং কবিতা দুটো যেন সহোদর-সহোদরা। তার কোনো আকার নেই। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।’ লালন সারাজীবন এই পাখিটিকে দেখতে চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথও দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু অলি বারবার আসে অলি বারবার ফিরে যায়।
জাহানারা বুলার উচ্চারণে ছত্রিশ রাগ বাগিনীর উৎসরণের প্রচেষ্টা যেমন আছে আছে নিজের অনুভবে নৈরাত্মের নির্বিকল্পা সমাধি। ওর কবিতায় চরণগুলো তুলে দিলে এত যে কথা বলতাম তার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। পাঠক কবির শঙ্ঘধ্বাময় উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে:
‘আমার কেবল একটিই হৃদয় চাই
হৃৎপিন্ড তাদের দিও
তোমার ঘন নিঃশ্বাস শুনে
অবশ হওয়ার মনস্তত্ব
আমার নেই।’
মনে হতে পারে আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু নয় আত্ম আগ্রহের ভেতরে একটা প্রচ্ছন্ন চিরায়ত রূপ আছে। হৃৎপিন্ড এবং হৃদয় দুটো শব্দ। কিন্তু তাৎপর্যের মাত্রায় একটি দৃশ্যমানতায় পরিগ্রাহ্য অন্যটি অপরিমেয় অদৃশ্য কিন্তু অনুভব জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গুরুত্বপূর্ণ তৃষ্ণা নিয়ে কবি জাহানার বুলা কাজ করেছেন। প্রেমের ভাগ্য যে নৈবেদ্য নয় সংগীতে তা কবি জানেন।
আরেকটি কবিতা। ‘অন্ধত্ব প্রেমের প্রতিকূল শব্দ নয়’- এই লেখাটিতে কিছু স্টেটমেন্ট আছে, আছে ব্যক্তি অভিজ্ঞতার আলো।
‘প্রেম ছাড়া অন্য যে কোনো শব্দ
আমার কাছে দুর্বোধ্য
যে সকল শব্দে আমার কবিতারা থাকতে পারে না।
শুনেছি প্রেম শব্দটি বিশ^স্ততায়
বেঁধে রাখে জীবন, কখনো দেখিনি
তবুও সহজবোধ্য এই শব্দের মধ্যেই
ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ি অনায়াসে।’
‘প্রেম’ সহজবোদ্ধ শব্দ। গৌতম বুদ্ধের নির্বানে প্রেম এক জটিল কিন্তু প্রায়োগিক জায়গায় প্রাঞ্জল ‘সহজিয়া’ পর্বে বৌদ্ধিক অনুশাসনে প্রেম এক সর্বব্যাপী সঞ্চারণশীল সত্তার প্রবাহ যা জনে জনে বিতরণযোগ্য। কবি জাহানারা বুলা প্রেমকে সহজিয়া মতবাদের সাযুজ্য করেছেন। আগে বরাদ্দ কবিতায় উদাহরণ দিয়েছি। বরাদ্দ কবিতার শেষ লাইন থেকে একণু উদ্ধৃত করবো- পৌরুষ ছাড়া পুরুষ হওয়া যায়
সূত্রটা শিখে নিও তার কাছে
যে মহাশূন্যে ঘর বাঁধতে জানে।
আমি জাহানারা বুলার ‘প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা’ গ্রন্থের মুখবন্ধের আলোচনার প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম ঘরহীন ঘরের ঐশ্বর্যের কথা। এক ঐতিহ্যিক জায়গা থেকে বুলা তার কবিতার পথ তৈরি করেন এবং লালন, হাসনের যে মরমী চিন্তার তার আঁচে নিজের চেতনাকে ঝলসে খাঁটি করার ক্ষমতা বুলার আছে। হাসন রাজা যখন বলেন-
‘কি ঘর বানাইমু আমি
শূন্যের মাঝার
লোকে বলে বলেরে
ঘর বাড়ি ভালা না আমার।’
আমাদের অন্তিম ঘর যে শূন্যতায়। অসীম নিরাকার পরিব্যাপ্তিতে যে আমরা লীন হবো সেই সত্যের অন্বেষণ কবির আজ। জাহানার বুলা দীর্ঘপথ পরিক্রমায় আমাদের জানান দেন প্রেমের অন্তরাগহন সত্তায় লুকানো আছে বিশ্বরূপ। জাহানার বুলা মরুমার কথা বলেন। সেই সরাসরি সোজাসাপ্টা উচ্চারণের মধ্যেই শিল্পের ব্যাঞ্চন সুপক্ক ও তৃপ্তিকর এবং মনোরঞ্জক। এক প্রতিবাদ যা লুকিয়ে থাকে বক্তব্যের গহীনে। নারী নয় পণ্য, যৌন সামগ্রীর কোনো বিধায়ক। বরং যে সংসারের এমন এক ঐন্দ্রজালিক বাঁশি যা শুধু কৃষ্ণ বাজায় না রাধাও বাজায়। জাহানারা বুলা বলতে চান কবি যে হোক নারী। একই সাথে সে শিব ও সতী। এই সাথে প্রকৃতি ও প্রেম। জাহানারা বুলা প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে পারে, দেখতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে। এখানেই তার কবিতার সকাল সন্ধ্যা। এখানেই তার কবিতার শস্যভূমি।
-রেজাউদ্দিন স্টালিন
Protiti Bristir Fota Eka,Protiti Bristir Fota Eka in boiferry,Protiti Bristir Fota Eka buy online,Protiti Bristir Fota Eka by Jahanara Bula,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট),প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) বইফেরীতে,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) অনলাইনে কিনুন,জাহানারা বুলা এর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট),9789849696537,Protiti Bristir Fota Eka Ebook,Protiti Bristir Fota Eka Ebook in BD,Protiti Bristir Fota Eka Ebook in Dhaka,Protiti Bristir Fota Eka Ebook in Bangladesh,Protiti Bristir Fota Eka Ebook in boiferry,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) ইবুক,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) ইবুক বিডি,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) ইবুক ঢাকায়,প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) ইবুক বাংলাদেশে
জাহানারা বুলা এর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 173.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Protiti Bristir Fota Eka by Jahanara Bulais now available in boiferry for only 173.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
জাহানারা বুলা এর প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা একা (অফসেট) এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 173.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Protiti Bristir Fota Eka by Jahanara Bulais now available in boiferry for only 173.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.