প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর বিয়ে হয়েছে তিনবার। একই বর-কনে তিনবার বিয়ের বিষয়টি অনেকের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করলো, কারো অবিশ্বাস্য মনে হলো, কারো কারো মনে হাস্য রসের সৃষ্টি করলো, কারো কারো হৃদয়কে আহত করলো। কিন' একই বর-কনের মধ্যে তিনবার বিয়ে হবে কেনো? এই কেনো-এর উত্তর দিতে গেলে সমাজের যে অসঙ্গতি ফুটে উঠবে তা অনেকের বিবেককে দংশন করবে আর পরের ঘটনাগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে।
প্রথমবার প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর বিয়ে হলো কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই, একেবারে আবেগের বশে। এ বিয়ের না থাকলো কোনো সাক্ষী, না থাকলো সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। দ্বিতীয়বার দু’জনে বিয়ে করলো এ্যাফিডেভিট করে, বিয়ের পর তারা দু’জনে উঠলো একটি আবাসিক হোটেলে। প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী আর সুশান্ত দত্ত। এই বর্ণ বৈষম্যই তাদের ভালোবাসার এবং ঘর বাঁধার প্রধান বাধা। আর এই বাধাই তারা বার বার অতিক্রম করতে চেয়েছে। প্রথমবার কার্তিক মাসে মন্দিরে ঠাকুর সাক্ষী রেখে বিয়ে করে এবং দ্বিতীয়বার কোর্টে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। কোর্টে এ্যাফিডেভিট করে তারা যখন আবাসিক হোটেলেই বাসররাত যাপনের জন্য সিট বুকিং দিলো তখন সামনে উপসি'ত হলো আরেক বিপদ। রাতেই তাদের দু’জনকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে গেলো। পরে অবশ্য এ্যাফিডেভিটের কাগজ দেখিয়ে তারা থানা থেকে মুক্তি পেলো।
তৃতীয়বার তাদের বিয়ে হলো ছোট্ট একটা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে, এ বিয়ের পর প্রিয়ন্তী মাথায় সিঁদুর পরলো। মাথায় সিঁদুর পরে স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গেলো কিন' ততদিনে বাবা মারা গেছে। ভাই-ভাবী তাদের গ্রহণ করলো না, বিধবা মা অসহায়, মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সময় চোখের জল ফেলা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিলো না।
সুশান্তর তার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করায় তার বাবার বিরাট অংকের পণ হাতছাড়া হলো। সে কোনোভাবেই সুশান্তকে মেনে নিলো না। দু’জনে সাবলেট নিলো রাজশাহী শহরের সাহেব বাজারে একটা বাসা। দু’জনে ইংরেজিতে অনার্স পাস করায় সহজে প্রাইভেট টিউশনিও জুটলো, টানাটানি করে কোনোরকমে দিন কেটে যাচ্ছিল। এর মধ্যে আরেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হলো। প্রিয়ন্তী যে ছেলেটিকে পড়ায় তার বাবা ডাক্তার, তিনি প্রিয়ন্তীকে একদিন মোবাইল করলেন, তার ছেলেকে আরো বেশি সময় দিয়ে পড়ানোর জন্য, সেই সঙ্গে আশ্বাস দিলেন তিনি সেজন্য অতিরিক্ত টাকা দিতেও রাজি আছেন। বিষয়টি সুশান্তর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করলো, প্রিয়ন্তীকে তার স্টুডেন্টের বাবা মোবাইল করবে কেনো?
সংসারে দারিদ্র, স্ত্রীর প্রতি অবিশ্বাস আর দুশ্চিন্তায় সুশান্তর শরীরের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়লো। একদিন সুশান্তর বাসায় ফেরার সময় অতিক্রান্ত হলো। প্রিয়ন্তীও তার জন্য দুশ্চিন্তায় ছটফট করছিলো। এমনসময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো, সুশান্ত হাসপাতালে। প্রিয়ন্তী হাসপাতালে ছুটে গেলো। প্রিয়ন্তী ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন, তাদের হাতে সময় ছিলো না, তাই সুশান্তকে বাঁচানো আর সম্ভব হলো না।
সুশান্তর লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রিয়ন্তীকে সুশান্ত মৃতদেহের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সে কিছুই বুঝতে পারলো না, কারণ এর আগে সে কোনো মৃতদেহ এবং তার বিধবা স্ত্রী দেখেনি। এসব সংস্কারের কাছে সে পরিচিত না। একদিন সুশান্ত তার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলো সেদিন তার মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবকিছু সে জয় করেছে, স্রষ্টার কাছ থেকে তার সব পাওয়া হয়ে গেছে।
কয়েকজন বিধবা মহিলা এলো, তারা প্রিয়ন্তীকে সুশান্তর মৃতদেহের কাছে নিয়ে গিয়ে তার মাথার সিঁদুর মুছে দিলো। তখন প্রিয়ন্তী কান্নায় গড়াগড়ি যাচ্ছে কিন' সেদিকে কারো কোনো দয়ামায়া বলতে কিছু নেই। সুশান্ত এখন লাশ যত তাড়াতাড়ি তার সৎকার করা যায় ততই পূণ্য।
একটা খাটিয়ার চার পাশে চারজন কাঁধে নিয়ে বল হরি, হরি বল বলে সুশান্তর মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সুশান্তর লাশ ভস্ম হলো। প্রিয়ন্তীকে পুকুরে নামিয়ে তার পরনের কাপড় বদলিয়ে সাদা শাড়ি পরানো হলো, শাঁখা খুলে দেয়া হলো। তারপর অনেকক্ষণ ধরে প্রিয়ন্তীকে বিধবার চাল-চলন সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করা হলো।
প্রিয়ন্তী বুঝতে পারলো যে সমাজ, সামাজিক, আর্থিক বা জম্মগত বৈষম্যর কারণে তাদের দু’জনের বৈবাহিক সম্পর্ককে মেনে নেয়নি, সুশান্তর মৃতুর পর তার শাঁখা, সিঁদুর খুলে, সাদা শাড়ি পরে বিধবা সাজিয়ে স্বামী-স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে স্বীকার করে নিলো, বর্ণ-গোত্র যা-ই হোক না কেনো সুশান্ত তার স্বামী। এখন সে সমাজে স্বীকৃত স্বর্গবাসী সুশান্তর বিধবা স্ত্রী।
জিল্লুর রহমান এর প্রিয়ন্তী এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 176.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Prionti by Zilur Rahmanis now available in boiferry for only 176.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.