নাদিরাকে এসিড নিক্ষেপের প্রায় মাস দুয়েক কেটে গেছে। এই দু’মাসে ওর জীবন পালটে যায় একেবারেই। নিহিতা মরে যাওয়ার পর চঞ্চল নাদিরা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আর এখন তো সে রুম থেকেই বের হয় না । শুধু তাই নয়, বারান্দা বা জানালার ধারে কাছেও সে যায় না। নাদিরার প্রকৃতি খুব পছন্দ। অথচ এখন সে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
সকাল সকাল জানালার পর্দা ভেদ করে রুমে আলো আসতেই নাদিরা উঠে পড়ে। আজ বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙে গেল তার । এই দু’মাস তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে ঘুমিয়ে। জেগে থাকতে ভালো লাগে না। ঘুমের মাধ্যেই যেন সে শান্তি খুঁজে পায়!
আজ খুব করে ইচ্ছে করছে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারটা টেনে বসতে। গাছগাছালি, পশুপাখি দেখতে। ইচ্ছেকে দমিয়ে না রেখে পা বাড়ায় সে। বারান্দার দরজা খুলতেই ওর মনটা জুড়িয়ে গেল। মনে হচ্ছে, প্রকৃতির ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগছে! লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে চেয়ার টেনে বসলো নাদিরা। মাথার ওড়নাটা সরিয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো সে । ওর আফসোস হচ্ছে, কেন সে এতদিন রুম বন্দি হয়ে ছিল! কত সুন্দর এই প্রকৃতি!
ঘন্টাখানেক পর একটু দূরে থাকা বাড়িটা থেকে মুনমুন খালা বের হন। তিনি ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে বারান্দার দিকে তাকান। নাদিয়াকে দেখে বেশ অবাক হন, আরো কাছে এসে ওকে ভালো করে দেখার চেষ্টা করেন। নাদিরা তা বুঝতে পেরে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। তারপর দ্রুত রুমে চলে যায়। নাদিরা তো চায় না তাকে কেউ দেখুক!
সে নিজেই নিজের চেহারা দেখতে ভয় পায়, অন্যের সামনে কীভাবে তা দেখাতে যাবে! এসব ভাবতে ভাবতে নাদিরার নিজের চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করে। এই দু’মাসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা দেখার সাহস সে করেনি। কিন্তু আজ খুব করে ইচ্ছে করছে । গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে। কাঁপাকাঁপা হাতে সে আয়নায় থাকা পর্দাটা সরায়। প্রায় সাথে সাথেই নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় সে।
নাদিরা ধীরেধীরে তার চোখ জোড়া খুললো। পলকহীন চোখে কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকানোর পর কয়েক কদম পিছপা হলো সে। তার চোখ দুটো ছলছলে হয়ে উঠেছে। কিন্তু চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে না! সে ধীরপায়ে পেছনে চলে যায় । টেবিলের উপরে থাকা ফটো ফ্রেমটা হাতে নেয় সে। যেখানে আছে তার আর নিহিতার ছবি। ফ্রেমে থাকা নিজের ছবিটার দিকে তাকায় নাদিরা । পরক্ষণেই আয়নার দিকে তাকায়। তার রাগ হয়, ভীষণ রাগ ।
আয়নায় থাকা মেয়েটিকে সে সহ্য করতে পারছে না । রাগে, দুঃখে সে তার হাতে থাকা ফ্রেমটি ছুড়ে মারে আয়নার দিকে । সাথে সাথে আয়নার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায় । নাদিরা মেঝেতে বসে পড়ে, মুখে দু'হাত চেপে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। ঠিক তখনই একটি ছেলে কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- এভাবে কাঁদছো কেন? মানুষের চেহারাটাই কি আসল? মনটা কিছুই না?
সাজি আফরোজ এর প্রেমের নেশা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 331.80 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Premer Nesha by Saji Afrozis now available in boiferry for only 331.80 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.