Loading...

পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প (হার্ডকভার)

অনুবাদক: জাফর আলম

স্টক:

১২৫.০০ ১০০.০০

একসাথে কেনেন

ভারত বিভাগের সময় দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত হয় ভারত ও পাকিস্তান। প্রাণ হারায় লাখ লাখ অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশু। ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। উদ্বাস্তু হয় পাঞ্জাব, কাশ্মীর ও বাংলার লাখ লাখ মানুষ। সেই ভয়াবহ দাঙ্গার বিরুদ্ধে যাঁরা কলম ধরেছিলেন, উর্দুভাষী লেখক কৃষণ চন্দর তাঁদের অন্যতম। পেশোয়ার এক্সপ্রেস-এর গল্পগুলো যেন তারই এক জীবন্ত দলিল। গল্পের নাম উন্মাদ এবার গল্লে কুস্তিগির তার ঘাড়ে হাত রেখে এমন ভাবে ধাক্কা দিল যে, তিনি চৌকাঠের বাইরে গিয়ে পড়ে গেলেন। আর ভজে এগিয়ে গিয়ে তার পেটে ছুরি বসিয়ে দিল। আর রাম নারায়ণ দড়াম করে মেঝেতে পড়ে গিয়ে ছটফট করতে থাকেন। তার মা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন। ভজে তার পেটেও ছুরি বসিয়ে দেয়। তিনি ছেলে রাম নারায়ণের ওপরে পড়ে যান। তারপর নারায়ণের স্ত্রীর পালা। চার ছেলের মা। দেখতে কুশ্রী। তাকে মুসলমান হিসেবে ধর্মন্তরিত করার জন্যও কেউ রাজি হতো বলে মনে হয় না। এক বছরের ছোট ছেলেটা বিছানার ওপরে শুয়ে ছিল। তার চোখেমুখে এসব ঘটনার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে আসলে ঘুমিয়েছিল। রশিদ ছুরি বের করে তাকে মারত যেতেই আমি তাকে বাধা দিয়ে থামিয়ে দিই। রশিদ প্রশন্ করে, ‘কী হলো সাপের বাচ্চা’।

আমি বললাম, ‘বাদ দাও। বড় হলে ওকে আমরা খুন করব।’
‘না,না, ‘ভজে নরম গলায় বলল।
আমি কড়া ভাষায় বললাম, ‘না’ ওকে ছেড়ে দাও।’ আসলে আমার ছোট ছেলে ইয়াকুবের কথা মনে পড়ে যায়। ওরও বয়স এখন এক বছর। বাচ্চাটাকে ছেড়ে আমরা মালামাল দেখতে শুরু করি। দেড়-দুই হাজার টাকার অলংকার, নগদ আট শ টাকা পেয়েছি। নিজেরদের মধ্যে সেগুলো আমরা ভাগাভাগি করে নিই। কাপড়ের সিন্দুকে বাচ্চাদের জামাকাপড়। ওরা তখনও স্কুল থেকে ফিরে আসেনি। রাম নারায়ণের বিয়ের কাপড়চোপড় সিন্দুকে সযত্নে রাখা ছিল। বিয়ের সময় পাওয়া তার বউয়ের কাপড়চোপড়ও ছিল। এসবও আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাযেটায়ারা করে নিই। আমার ভাগে পড়েছে ছয়টা রেশমি শাড়ি, আর একটা সুতির কাপড়। গহনার মধ্যে আমার বইয়ের পরার জন্য এক জোড়া কানের দুল, কপালের ঝুমুর আর একটা রূপার গ্লাস। লুটের মাল বাধাছাঁদা করে নিয়ে আমরা ‘নারায়ে তকবির’ স্লোগান দিয়ে উঠি। বাইরে বাগানে , রক্তে লাল ড্রেনের পাশে পড়ে ছিল রাম নারায়ণ, তার মা ও বউয়ের লাশ। লালা বাঁশিরাম ক্ষত্রিয়ের লোহার দরজার গেটের সামনে পড়ে ছিল তার বউয়ের লাশ। সে নিজেকে বাঁচাবার জন্য তিনতলা থেকে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আশপাশের বাড়িঘরে কোনো সাড়াশব্দ নেই। সব দোকানপাট বন্ধ। অলিগলি আরবাজারে কোথাও কোনো লোকজন নেই। জনমানবশূন্য। এদিকে-সেদিকে মুসলিম লিগের ঝান্ডা উড়ছে। আমরা নানা গলিঘুজি দিয়ে বিভক্ত হয়ে নিজের নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিই। গল্লে কুস্তিগির মস্তি গেটের দিকে চলে যায়। ভজা আকবরি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমি ও রশিদ ভাই দাতা দরবারের পেছনে চাচা নুর ইলাহির বাড়ির দিকে এগোতে থাকি।ওখানে এখন অনেক মুসলমানের ভিড়। তারা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিচ্ছে। জানা গেল, দর্শননগরে হিন্দু মহাসভার সমর্থক একটি দল দাদা দরবারে পেছন দিকে ঢুকে মুসলিম এলাকায় হামলা চালিয়েছে এবং বাড়িঘরেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা ছুটতে ছুটতে বাড়ির দিকে যেতে থাকি। পথে চাচা নুরের সঙ্গে দেখা। তিনি আজহারি করতে করতে বলতে লাগলেন, ‘সব ধ্বংস হয়ে গেছে বাবা, সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’

আমি ঘাবড়ে গিয়ে জিগ্যেস করি, ‘কী হয়েছে চাচা?’
‘হিন্দুরা আমাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তোমার চাচি আগুনে পুড়ে মারা গেছে‘, নুর চাচা কপাল চাপড়াতে থাকেন।
‘আর আমার বউয়ের কী খবর,’ আমি ভীতি মেশানো গলায় জানতে চাই। ‘কাফেররা ওকে খুন করেছে’।

বাড়ি পুড়ে ছাই। তখনো আগুন পুরোপুরি নেভেনি। দরজার কাছে আমার বউয়ের লাশ পড়ে ছিল। হামলাকারীরা ওর মাথাটা পুরোপুরি থেঁতলে দিয়েছে। আমার বড় ছেলে সাত বছরের দাউদ আমার বউয়ের পাশেই নিথর পড়ে আছে। ওর ঘাড়ের ওপরের আঘাতটা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। আমি বাচ্চাদের জন্য কাপড় এনেছি। বউয়ের জন্য মাথার ঝুমুর আর বেনারসি শাড়ি! হায় আল্লাহ, এ কেমন সর্বনাশ! আমি নুর চাচাকে জিগ্যেস করি, আমার অবোধ ছোট ছেলে দুধের শিশু ইয়াকুব সুস্থ আছে কি না! নুর চাচা বলল, ‘কাফেররা প্রথমে ওকে ছেড়ে দেয়ছিল; কিন্তু হামলাকারীরা একজন বলল, এ তো সাপের বাচ্চা। তারপর তারা ওর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই দেখো, তোমার ইয়াকুবের হাড়-মস্তক জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ ‘চাচা, তোমরা সবাই কি মরে গিয়েছিলে? মহল্লায় কি কোনো পুরুষ ছিল না? আমরা সবাই লুটপাটের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কে জানত, এই অসভ্য হামলাকারীরা আমাদের অবর্তমানে নিরস্ত্র মেয়েদের ওপর হামলা চালাবে? আমি শাড়ি, গয়না এবং রুপোর গ্লাস ইত্যাদি আমার বউয়ের সামনে এনে রাখলাম। তার লাশ ছুঁয়ে শপথ নিয়ে বললাম, ‘আয়েশা, তোমার নামে শপথ করে বলছি, আমি তোমার খুনের বদলা যদি না নিউ, তা হলে আমি আমার পিতার সন্তান নই, এটা শুয়োরের বাচ্চা।’ এ কথা বলে ছুরি হাতে নিয়ে আমি গলির বাইরে চলে যাই। রশিদ আমার সঙ্গে সঙ্গে আসছিল। চাচা নুর চিৎকার করে ওঠেন, ‘কোথায় যাচ্ছ, পুলিশ আসছে’।‘পুলিশের মা-বোনের গুষ্টি কিলাই। আমি তখন সরাসরি শাহ আলমি এলাকার দিয়ে যাচ্ছি। কার হিম্মত আছে আমাকে বাধা দেয়?
Peshoyer Express Dangar Golpo,Peshoyer Express Dangar Golpo in boiferry,Peshoyer Express Dangar Golpo buy online,Peshoyer Express Dangar Golpo by Krishon Chandra,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প বইফেরীতে,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প অনলাইনে কিনুন,কৃষণ চন্দর এর পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প,Peshoyer Express Dangar Golpo Ebook,Peshoyer Express Dangar Golpo Ebook in BD,Peshoyer Express Dangar Golpo Ebook in Dhaka,Peshoyer Express Dangar Golpo Ebook in Bangladesh,Peshoyer Express Dangar Golpo Ebook in boiferry,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প ইবুক,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প ইবুক বিডি,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প ইবুক ঢাকায়,পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প ইবুক বাংলাদেশে
কৃষণ চন্দর এর পেশোয়ার এক্সপ্রেস দাঙ্গার গল্প এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 110.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Peshoyer Express Dangar Golpo by Krishon Chandrais now available in boiferry for only 110.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৮০ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2022-12-27
প্রকাশনী প্রথমা প্রকাশন
ISBN:
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

কৃষণ চন্দর
লেখকের জীবনী
কৃষণ চন্দর (Krishon Chandra)

উর্দু সাহিত্যের অমর কথা শিল্পী কৃষণ চন্দর। উর্দু গল্পকে এক নতুন দিক দেখাতে কৃষণ চন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অবদান কৃষণ চন্দর। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় প্রগতিশীল লেখক সংঘের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, কৃষণ চন্দর তাতে অংশ নেন। তাঁকে সেই সম্মেলনে প্রগতিশীল লেখক সংঘ পাঞ্জাব শাখার সম্পাদক মনােনীত করা হয়। শিক্ষকতা করার সময় তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ সময় তিনি ভগত সিং এর দলে যােগ দেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং দু’মাস জেল খাটেন। কৃষণ চন্দর তার ৬৩ বছরের জীবনের ৪০ বছর উর্দু সাহিত্যের উন্নয়নে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি অবিচ্ছিন্নভাবে লিখেছেন গল্প, উপন্যাস নাটক, চিত্ৰকাহিনী, চিত্রনাট্য ও শিশু সাহিত্য। লিখেছেন পাঁচ হাজারের অধিক উর্দু ছােট গল্প । এ ছাড়া লিখেছেন ৮টি উপন্যাস। বিভিন্ন বিষয়ে ত্রিশটি গ্রন্থ এবং তিনটি রিপাের্টাজ। কৃষণ চন্দর ছিলেন খুবই উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। তিনি ধর্মীয় রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্ত সংকীর্ণ দৃষ্টি থেকে মুক্ত ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় গােড়ামীর তিনি সারাজীবন বিরােধিতা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট বই