ক্রেতার পর্যালোচনা

1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা

• পর্যালোচনা লিখেছেন 'Arfia Jahan'

  উপন্যাসঃ অপ্রেমের রাতগুলো দীর্ঘ হয় লেখকঃ আফসানা আশা ধরনঃ রোমান্টিক প্রকাশনীঃ এশিয়া পাবলিকেশনস প্রচ্ছদঃ সজীব ওয়ার্সী মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৪০.০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৪৪ প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০২১ * "অপ্রেমের রাতগুলো দীর্ঘ হয়" নামটা কিছুক্ষণ আমাকে ভাবিয়েছে। অপ্রেম বলে কিছু হয় কি! হয় হয়তো। প্রেমের বিপরীতে অপ্রেম হলে, অপ্রেমের রাতগুলো দীর্ঘই হবে হয়তো। * বইটি যখন আমি পড়া শুরু করি, তখন গভীর রাত। একটা উপন্যাস পড়া শেষ করে আর ঘুম আসছিলো না দেখে ভেবেছিলাম অপ্রেমের দু একপাতা পড়ে চোখে ঘুম নামলেই ঘুমিয়ে পড়বো। কিন্তু বইয়ের মাঝে এতোটাই হারিয়ে গিয়েছিলাম যে, পড়া শেষ করে দেখি চারপাশে আলো ফুটে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ছয়টা পেরিয়ে গেছে। সময়ের খেঁই হারিয়ে ফেলার ঘটনা আমার সাথে খুব কম ঘটে। লেখিকার প্রতি মু্গ্ধ হয়ে লেখিকার আইডি খুঁজে বের কে একটা মেসেজ লিখে অনুভূতি জানিয়ে দিয়েছিলাম। সকালে বাইরে কাজ ছিলো, দেখে সেদিন আমার আর ঘুমানো হয়নি। * গল্পটা টানাহাতি নামের ছোট্ট এক শহরে, দুই বন্ধু নামের এক বাড়িতে থাকা মানুষগুলোর। আনন্দিতা, ঝিলিক, আসিফ, দিয়া, বৃষ্টি নামের কিছু মানুষের। যাদের জীবনটা প্রেম, ভালোবাসার রঙে রাঙা ছিলো। গল্পের মূল চরিত্র আনন্দিতা ও ঝিলিক হলেও আফিস, দিয়া, বৃষ্টি পার্শ্বচরিত্র হিসেবে গল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। খুবই ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর বন্ধুত্বে গড়ে উঠেছিলো 'দুই বন্ধু' নামক একটি বাড়ি। সেখানে আনন্দিতা ও ঝিলিকের খুনসুটি ভরা প্রেমের যাত্রা শুরু। আনন্দিতা ও ঝিলিকের সাধারণ একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প কিভাবে পরিস্থিতির চাপে নতুন নতুন মোড় নেয়, তাই নিয়ে লেখা উপন্যাস 'অপ্রেমের রাতগুলো দীর্ঘ হয়'। কিছুটা রহস্যের গন্ধে ভরা গল্পটি প্রতি মুহুর্তে আমাকে ভাবিয়েছে। বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর বেড়ে চলার সাথে সাথে বেড়েছে পরবর্তী ঘটনা জানার আগ্রহ। লাইনগুলো গো-গ্রাসে গিলেছি তাদের পরিণতি জানার ব্যস্ততায়। কিন্তু শেষ পাতায় এসে মনে হলো, যাহ, শেষ হয়ে গেলো! গল্পটির ধাপে ধাপে চরিত্র সম্পর্কে আমার মন্তব্য বদলাতে বাধ্য হয়েছি। গল্পের মূল চরিত্র আনন্দিতার মধ্যে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মানের কিছুটা কমতি ছিলো। গল্প পড়ার সময় আমি মনে মনে চেয়েছি আনন্দিতার বদলে যাওয়া উচিত। প্রত্যক মানুষের অন্তত নিজের আত্মসম্মানটুকু খোয়ানো কোনোভাবে উচিত নয়। তা সে যতোই হোক প্রিয় মানুষ। নিজের আত্মসম্মান শুধুই নিজের। আবার যখন বদলে যেতে লাগলো, তখন তার প্রতি অজানা অভিমানও জন্মালো। গল্পের এমন অনেক চরিত্র আছে, যাদের চাইলেই দোষী হিসেবে গণ্য করা যায়, আবার পরিস্থিতির স্বীকার হওয়া কিছু অভাগাও বলা যায়। * গল্পে লাস্ট এন্ট্রির 'মেলভিন হোম' চরিত্রটি আমার সবচেয়ে পছন্দের। একজন বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বের যুবকের কিছুটা একগুয়ে স্বভাব, বেপরোয়া কথাবার্তা, সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ। * লেখিকার শব্দচয়ন নতুন করে কিছু বলার নেই। সাধারণ কথাকেও অসাধারণ আঙ্গিকে তুলে ধরার গুনসম্পন্ন একজন ব্যক্তি তিনি। গল্পের প্রতিটি চরিত্র খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। পাঠকদের গল্পের মধ্যে ডুবিয়ে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত প্রচন্ড আগ্রহসহ নিয়ে যাওয়ার কাজটি যথার্থভাবেই করেছেন। লেখিকার প্রথম প্রকাশিত বই এটি। অথচ বইটি পড়ে আপনার মনে হবে, লেখালিখি কাজটি লেখিকা হয়তো যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। * প্রিয় উক্তি- * চোখ খুলে তাকাও‌ মেয়ে, ভালো বাসো প্রাণ খুলে। কেউ হয়তো থাকবে, কেউ থাকবেনা। কিন্তু ভালোবাসা কোনোদিন মিথ্যে হবে না। * পুরনো ডালেই নতুন পাতা থাকবে, ফুলও ফুটবে, শীতের ঝরাপাতার জন্য শোক করলে গাছটাইতো মরে যাবে। * পৃথিবীতে হাজার রঙের মানুষ হাজার কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে। সবার কাছেই অন্যেরটা অবোধ্য। তবুও মানুষ বাঁচে, হাসে। * কখনও কখনও ভরসার জায়গাটা একদিনেই তৈরি হয় আবার কেউ কেউ আজীবন পাশে থেকেও কাছের মানুষটা হতে পারে না। (লেখনিতে - আরফিয়া)

  June 20, 2022