চোদ্দ বছরের বিশাল অদেখার পরে হঠাৎ করেই সেদিন সােহেলির সাথে কাকতলীয়ভাবে আমার দেখা হয়ে গেল। মনের পুরনাে স্মৃতিপটের ধংসস্তুপ ঠেলে এক ধাক্কায় খােলসহীনভাবে বেরিয়ে এল আমার আঠাল্লো-উনিশ বছর বয়সের সেই ভালাে-মন্দ'য় গােলপাকানাে সুখ কিংবা দুখময় স্মৃতিগুলাে, যেস্মৃতিগুলোর সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে সােহেলি। যেন খুবই কাছাকাছি কোনাে সময়ের ফ্রেমে বাঁধানাে দুজনের একটি যুগল ছবি, যে-ছবিটি আজ আমি বড় যত্ন করে মেলে ধরেছি আমার মনের দুয়ারে। দুচাকা, তিন ঢাকা, ঢারি ঢাকা, সব চাকাই স্থবির হয়ে আছে। পিপত্রে মতাে সারি সারি রাশি রাশি পা। পিপড়ে তাে তবু পিলপিল করে চলে; কিন্তু এই বাহনগুলাে আটকে আছে তাে আছেই। জট খেলার সকল সম্ভাবনাই যে আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে যতদূর চোখ যায় স্থবির হয়ে থাকা বহনগুলোকে অসহায়ের মতাে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গরমে ঘামে নাভিশ্বাস হচ্ছে চালক এবং যাত্রীদের প্রাণ। কাঠফাটা রােদ। গগনবিদারী আর্তচিৎকারে প্রকৃতি গলা ফাটিয়ে মরলেও বিধাতার আকাশের কোনাে-এক কোণে বিন্দুমাত্র মেঘের ছায়াও দৃষ্টিগােচর হয় না। শেষ কবে যে ধরণী মাতা বৱষার জলে সিক্ত হয়েছিল তাও ভুলে যেতে বসেছি। একে তাে আকাশ থেকে বর্ণিত হচ্ছে গনগনে আগুনের তাপদাহ, অন্যদিকে যানবাহনের ইঞ্জিনের উত্তাপে চারদিক থেকে আগুনের হলকা ছড়িয়ে পড়ছে। দুদিন ধরে গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটাও বিকল হয়ে আছে। সরকারি গাড়ি, উপরওয়ালার কখন মর্জি হয় উপরওয়ালাই জানেন। তাই যাত্রাপথে আমাকেও অসহনীয় তাপদাহ ভােগ করতে হচ্ছে।