“যুক্তির মধ্য দিয়ে পূনজর্ন্ম আমার। চমৎকার এই পৃথিবী, জীবনকে করে যাবো আশিবার্দ। ভালোবাসবো- যারা আমার ভাই। শিশুময় প্রতিশ্রুতিগুলি এখন আর নেই। বুড়ো বয়সে আর মৃত্যুকে এড়িয়ে থাকবার আশাও নেই। আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন ঈশ্বর, আমি বন্দনা করি ঈশ্বরের।”
কবিতার অকালপক্ক ঈশ্বর-র্যাঁবো। মাত্র সাঁইত্রিশ বছরের জীবন। এই সময়ে তার কি বোধ উপলদ্ধি এই যেন জীবনের তীরে বিদ্ধ পক্ক দার্শনিক। উপরোক্ত লাইনগুলিতে তার চিন্তা বিশেষ ভাবে ধরা পড়ে। যুবক অনার্যের অনুবাদও প্রাণবন্ত এবং প্রাঞ্জল। কবি এখানে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের কথা বলেছেন। তিনি শিশুর প্রতিশ্রুতি গুলোর মত বস্তুবাদী চিন্তাধারাকে পাশকাটিয়ে এক ঈশ্বরের বন্দনায় লিপ্ত থাকতে চেয়েছেন। আমরা জানি র্যাঁবো মৃত্যুর সময় আল্লাহ করিম আল্লাহ করিম বলে পরলোক গমন করেন। তবে তিনি সংশয় বাদী ছিলেন।
যুবক অনার্য অনুবাদিত ‘নরকে এক ঋতু’ কাব্যগ্রন্থটি অনেকগুলো টানা গদ্য লেখা কবিতায় ভরপুর।
‘একদা এই জীবনছিল’-কবিতায় কবি বলেছেন ‘একদিন সন্ধ্যায় সুন্দরকে কোলে বসিয়েছিলাম- সে বিব্রত-দেখি তাকে আমি করেছি আহত। ন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি দাঁড়ালাম।’
কি অসাধারণ বোধ। ‘সুন্দর’ কবিতা ও জীবনের বড় অনুষঙ্গ। আধুনিক কবিতার নানা প্রকরণে আঙ্গিকে কি যে পরিবর্তন ব্যাঁবোর বলার ভঙ্গিতে ধরাপড়ে। কবি সাঁইত্রিশ বছর জীবনে দরজা খোলা নরক দিয়েই ফিরে যেতে চেয়েছেন নান্দনিক শান্তির মদিরায়। ফলে তার কবিতায় আধুনিকতার নানা অনুষঙ্গ সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে।
“কলুষিত রক্ত”- কবিতায় কবি লিখেছেন ‘বেঁচে থাকবো বলে আমি আর শরীরকেও কাজে লাগাইনি। আলস্যপনাতে আমি ডিঙিয়ে গেছি ব্যাঙকেও আর এভাবেই সর্বত্র বেঁচে বর্তে রয়ে গেছি।’চিত্রকল্প উপমা সংযোগে কবিতা। উপরোক্ত চিত্রকল্পে আলস্যপনার সাথে ব্যাঙ উপমাটি যুতসই।
‘নরকের রাত’ কবিতায় র্যাঁবো লিখেছেন; তাঁর নানা অভিজ্ঞতা। বাস্তবতা-পরাবাস্তবতা, অতিবাস্তবতার মিশেলে।
‘হা খোদা, জীবনের ঘড়ি টানিভেগ্যাছে একটু আগেই। আমি এই পৃথিবীতে নেই আর। -ধর্মবিদ্যা খুবই মারাত্নক জিনিস। নরকটা নিশ্চয়ই নিচেই আছে আর স্বর্গ রয়েছে উপরে। উল্লাস, দুঃস্বপ্ন, ঘুম আগুনের ঘরের ভিতর।’
কবি ঠিকই বলেছেন, “ধর্ম বিদ্যা খুবই মারাত্মক জিনিস”-এখনো এই শতাব্দীতে দাড়িয়ে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, ধর্মের অপব্যাখ্যা, মৌলবাদের উত্থান আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলে। ফলে কবির উপরোক্ত লাইনগুলো দার্শনিকের বাক্যই মনে হয়। সমকালেও তার আবেদন অফুরন্ত।
‘প্রথম প্রলাপ’ কবিতায় তিনি বৈবাহিক জীবনের যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন। ‘দ্বিতীয় প্রলাপ’ কবিতায় তিনি লিখেছেন “কি আমি পান করতে পারতাম
ওয়াইজ নদীটির তীরে নৈশব্দের ঘেরা দেবদারু, ঘাস যার নেই কোনফুল, মেঘবতীআকাশ”
কবি মাত্রই প্রকৃতি প্রেমিক। আধুনিক কবিতা নৈশব্দের পাশ ঘেসে এক ধরনের ভালোলাগা তৈরী করে । তখন নৈশব্দের শব্দপাঠকের হৃদয়ে দোলা দেয় । র্যাঁবো উপরোক্ত লাইনগুলোতে যে দৃশ্যকল্পের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তা অসাধারণ। যেখানে নদী, মাটি, বৃক্ষ, আকাশ এক সূতোয় গাঁথা।
জাঁ আর্তুর র্যাঁবো এর নরকে এক ঋতু এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 104.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। noroke ek writu by Jha Artur Rabois now available in boiferry for only 104.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.