প্রসঙ্গ-কথা
[প্রথম সংস্করণ]
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলা সাহিত্য ও সংগীত জগতে নবধারা সৃষ্টি করে গেছেন। শুধু সাহিত্য-সংগীতে নয় সাংবাদিকতা, রাজনীতি, চলচ্চিত্র জগতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। সমাজ-সংস্কারক হিসাবেও তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। তিনি মাত্র বাইশ বছরের সাহিত্যিক জীবনে কবিতা-গান-উপন্যাস-প্রবন্ধ-ছােটগল্প-নাটক-নাটিকা রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে গেছেন। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। তাঁর প্রদর্শিত পথ ধরে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে পরাধীন জাতি—এগিয়ে যায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের দিকে।

নজরুল ‘বিদ্রোহী কবি' হিসাবে সমধিক পরিচিত হলেও সংগীতের যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন তা সংগীত ভুবনে নবপ্রাণ সঞ্চারিত করেছে। সংগীত-সৃষ্টি সম্পর্কে নজরুলের আত্মবিশ্বাস লক্ষ্যণীয় : ... সাহিত্যে দান আমার কতটুকু তা আমার। জানা নেই। তবে এইটুকু মনে আছে সংগীতে আমি কিছু দিতে পেরেছি।' নজরুল বাংলা সাহিত্যের একজন সব্যসাচী লেখক যিনি সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ করেছেন। নজরুল শিশু-কিশােরদের মন-মানসিকতা ও স্বপ্নক-সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারতেন বলেই তিনি সার্থক শিশুতােষ রচনা করতে সমর্থ হয়েছেন, তার প্রতিফলন দেখতে পাই তঁার শিশুতােষ কবিতা-গান-নাটকনাটিকাতে।

নজরুলের হৃদয়গ্রাহী শিশুতােষ রচনার প্রথম গ্রন্থ ‘ঝিঙে ফুল'। এ গ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘ঝিঙে ফুল অত্যন্ত জনপ্রিয় শিশুতোেষ কবিতা যা কাব্যিক সৌন্দর্যে অনবদ্য। এ ছাড়া খুকী ও কাঠবেরালি’, ‘খাদু-দাদু, ‘প্রভাতী’, ‘লিচু-চোর', সংকল্প’, ‘খােকার গল্প বলা’, ‘চিঠি’, ‘ঠ্যাং ফুলী’, ‘পিলে-পটকা', মা, কালাে জামরে ভাই’, ‘শিশু-যাদুকর’ ও ‘কিশােরের স্বপ্ন’ প্রভৃতি কবিতা অত্যন্ত আবেদনশীল যা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। নজরুল ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একজন বিশিষ্ট লেখক। পুতুলের বিয়ে গ্রন্থটিতে নজরুল সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি ও বাংলাদেশের লােক-সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরেছেন।