কষি প্রধান বাংলাদেশ। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ লােক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কর্মির পাশাপাশি শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠলেও আমাদের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে কৃষি থেকে এবং জাতীয় অর্থনীতির মূল বুনিয়াদই কৃষি নির্ভর। কৃষির উপর এ নির্ভরশীলতা শুধু আজকের অর্থনীতিরই মূল বৈশিষ্ট্য নয়, পূর্বেও আমরা এর উপর নির্ভরশীল ছিলাম এবং সে সময় সরকারের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব । আজকের দিনের মত ভূমি মালিকগণ সরাসরি সরকারী তহবিলে রাজস্ব জমা নিতেন । তাদের রাজস্ব প্রদান করতে হতাে এলাকার জমিদারকে। জমিদারের সঙ্গে সরকারের এবং জমিদার ও রায়তদের মধ্যে চুক্তি অনুসারে রায়তগণ এলাকার জমিদার এবং উক্ত জমিদার দেশের সরকারকে রাজস্ব প্রদান করতেন। জমিদারীর আয়তন, রাজস্ব প্রদানের পরিমাণ ও দক্ষতার জন্য জমিদারগণ রাজা, মহারাজা খেতাবে ভূষিত হতেন। শুরুত্বের দিক থেকে, তালুকদার, রাজা, মহারাজা যেই হােক না কেন তাদের আসল পরিচয় ভূমি মালিক বা ভূস্বামী। এলাকার রায়তদের নিকট থেকে বন্দোবস্ত অনুসারে রাজস্ব আদায় এবং সরকারকে বন্দোবস্ত বা ধার্যকৃত রাজস্ব সঠিকভাবে প্রদান করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। এ দায়িত্ব পালন করার পর তাদের হাতে যে উত্ত সুস্থ থাকতাে তা দিয়ে জমিদারীর মান-মর্যাদা, শান-শওকত ও পদমর্যাদা বজায় রাখতেন। এর মধ্যে যে জমিদার যত কড়াকড়িভাবে রায়তদের নিকট থেকে অধিকহারে রাজস্ব আদায় করে সরকারকে সঠিকভাবে প্রদান এবং অধিক উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পেরেছেন তারাই সমাজে প্রবল প্রতাপে বসবাসে সক্ষম হয়েছেন। তারাই ছিলেন এলাকার মানুষের হর্তাকর্তা ও রক্ষক। বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে এ ধরনের ভূস্বামীদের অস্তিত্ব দেখতে পাই। বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাস আমাদের জানা আছে। রাজশাহীর জমিদারদের মধ্যে পুঠিয়ারাজ সবচেয়ে পুরাতন । মোগল শাসক আকবরের আমলে পুঠিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। পুঠিয়ার রাজা বাংলার বারভূইয়াদের একজন ছিলেন। মােগল শাসনামলে জমিদারগণ বাংলার নবাবকে কর প্রদান করতেন এবং দিল্লীর সম্রাটের অনুমােদন সাপেক্ষে বাংলার নবাব জমিদারী প্রদান করতে পারতেন। এক্ষেত্রে বাংলার নবাবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন।