ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে আলােচিত-সমালােচিত চরিত্রের নাম মুহাম্মাদ বিন তুঘলক। ইতিহাসের পাগলা রাজা, যার জ্বালায় নাকি অতিষ্ঠ ছিল সাম্রাজ্যের সবাই। পাগলা রাজার মৃত্যুতে নাকি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল ভারতবর্ষের মানুষ। আরও আছে রাজধানী স্থানান্তর, দিল্লি জনশূন্য করা, দক্ষিণ ভারতের অভিযান, তামা, পেতলের প্রতীকী মুদ্রার প্রচলন, খুরাসান বাহিনী গঠন, চীন দখলের অভিপ্রায়, তেইশটি বিদ্রোহের মুখােমুখি হওয়া, প্রথম জীবনের ইশ্বরে অবিশ্বাস আর পরে কট্টর মুসলিম হয়ে যাওয়া – কোনটা মিথ আর কোনটা মিথ্যা, কোনটা বা সত্যি, সেটাই দেখানাের চেষ্টা করেছেন ডক্টর আগা মাহদি হুসাইন। বাবাকে হত্যার যে দায় তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বারবার, সেটাও খণ্ডিয়েছেন তিনি। এই ছােট পরিসরে লেখক মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের চরিত্রের সমস্ত কলঙ্ক মুছে | ফেলার চেষ্টা করেছেন। তিনি দূর্দান্ত এক কাজ করেছেন এলােমেলাে হয়ে থাকা সমস্ত তথ্য এক জায়গায় এনে এই বিশাল কাজটি করে। চরিত্রের কলঙ্ক মুছে ফেলার তাগিদ থেকেই তিনি সমস্ত ইতিহাস ঘেটেছেন, বিভিন্ন লেখকের, ঐতিহাসিকের, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তার উদ্দেশে সফল হয়েছেন। সে হিসেবে আগা মাহদি হুসাইনকে ঠিক নিরপেক্ষ বলা চলে না। ড. আগা মাহদি হুসাইন প্রচলিত ইতিহাসকে পুনরায় আঁতসী কাচের নিচে এনেছেন, সে সময়কার ঐতিহাসিকদের লেখনি আবার নিরীক্ষা করেছেন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের রেশ ধরে । দিল্লির সুলতানদের উত্থান-পতনের কারণগুলাে বেশ যুক্তিযুক্ত। লেখক পুরনাে ধারণা ভেঙে দেয়ার জন্য যে যুক্তিগুলাে উপস্থাপন করেছেন, তা সবসময় সঠিক বলে মনে হয় না। সম্ভবত মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের মুদ্রাব্যবস্থা নিয়ে করা নিরীক্ষা এই কথার প্রমাণ দেয় আরও পরিষ্কারভাবে। এটা মনে রাখা প্রয়ােজন সুলতান তামার মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন কৃত্রিম মান নির্ধারণ করে।