বইটি সম্পর্কে সামান্য কথা
মোগল ইতিহাস বরাবরই আমাকে আন্দোলিত করতো এবং এখনো করে। কখনো কখনো তাদের নিয়ে গর্ব করতাম। আবার কখনো বা দুঃখ পেতাম। ব্যক্তিগত জানার আগ্রহ থেকে প্রথমে একটি বই লিখে ফেলি। নাম দেই মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়। বইটির নামকরণ থেকেই বুঝা যায় যে, এতে শুধু মোগল ইতিহাসের সুখের দিনগুলো স্থান পেয়েছে। আমি ইচ্ছে করেই মোগল সাম্রাজ্যের বেদনাদায়ক অধ্যায় এড়িয়ে গেছি। ভেবেছিলাম যা লিখেছি তাই যথেষ্ট। আর না লিখলেও চলবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশক ও পাঠকদের অনুরোধে এ বইটি লিখায় হাত দেই। বইটি লিখতে শুরু করে টের পাই যে, আমার সামনে সমুদ্র। মনে সাহস সঞ্চয় করে লিখতে শুরু করি। নাম দিয়েছি মোগল সাম্রাজ্যের পতন। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায় লিখতে গিয়ে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, মোগল সাম্রাজ্যের পতন লিখতে গিয়েও হুবহু একই সমস্যার মুখোমুখি হই। সূত্র ছাড়া বই লিখা সম্ভব নয়। সমসাময়িক অথবা পরবর্তীকালে প্রকাশিত বই হচ্ছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। বইয়ের কোনো জাত নেই। কিন্তু ভারতের ইতিহাস বিষয়ক কোনো কোনো বইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ নেয়া হলে স্পষ্ট লেখকের ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। স্যার যদুনাথ সরকারের মতো ঐতিহাসিকগণও এ চক্র থেকে বের হতে পারেননি। ভারতে জন্মগ্রহণ এবং শত শত বছর ভারতে বসবাস করা সত্ত্বেও যদুনাথ সরকারের ভাষায় মোগলরা বিদেশি। মোগলরা বিদেশি হলে আমাদের পরিচয় দাঁড়ায় কি? ভারতীয়দের ভাষায় আমরাও বিদেশি। এজন্য বিজেপি শ্লোগান দেয় : বাবর কা আওলাদ কা বাহার করো, মন্দির কা নির্মাণ করো। যে জাতি কালা পানি আখ্যা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়াকে জাত যাওয়া বলে মনে করতো তাদের পক্ষে মোগলদের বিদেশি বলাই স্বাভাবিক। ভারতীয় ঐতিহাসিকরা স্বীকৃতি না দিলেও ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এইচভি হাডসন তার গ্রেট ডিভাইড শিরোনামে গ্রন্থে মোগলদের ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। হাডসন তার আলোচ্য বইয়ের ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন : : Later Muslim conquerors became absorbed by the land they ruled and Akber the Great was as much as Indian as Pandit Nehru. অর্থাৎ পরবর্তীকালের মুসলিম বিজেতাগণ তাদের শাসনাধীন ভূখণ্ডে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন এবং মহান আকবর ছিলেন পণ্ডিত নেহরুর মতো ভারতীয়।
আজ ভারতের দু’প্রান্তের দু’টুকরো ভূখণ্ডে আমাদের বসবাস। এতেই আমরা পরিতৃপ্ত। কিন্তু সংখ্যায় ক্ষুদ্র হলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ ভারতে মুসলমানদেরকে সাম্রাজ্য দান করেছিলেন। আমরা কেন এ সাম্রাজ্য হারালাম, নিজেদের বিবেককে একবার প্রশ্ন করা উচিত। আমার লক্ষ্য হচ্ছে অতীতের সঙ্গে পাঠকদের যোগসূত্র স্থাপনে সহায়তা করা। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যগুলো ছিল পক্ষপাতমূলক ও একতরফা। তাই কখনো কখনো লিখতে গিয়ে থেমে গিয়েছি। ভেবেছি কার কথা লিখবো। ইতিহাস মোগলদের প্রতি সুবিচার করেনি। খুব সংকীর্ণ শোনালেও অনেক সময় আপন মনে বলেছি, শিখরা লিখেছে শিখদের জন্য, হিন্দুরা লিখেছে হিন্দুদের জন্য, খ্রিস্টানরা লিখেছে খ্রিস্টানদের জন্য। মোগল অথবা মুসলমানদের জন্য কি লিখার কেউ ছিল না? মুসলিম লেখকরা একেবারে লিখেননি তা নয়। তবে তাদের বইয়ের সংখ্যা অমুসলিমদের তুলনায় অতি নগণ্য। এসব বই আবার হয়তো ফারসি নয়তো উর্দু। ফারসি ও উর্দু বইগুলো অনুবাদ করা হয়েছে খুব কম। আবার অনূদিত বইগুলো পাওয়া যায় না। এসব মৌলিক দুর্বলতা ও ক্রটির ভেতর দিয়ে বইটি লিখেছি। শুরুতে ভেবেছিলাম বই লিখার মতো যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে না। দিন রাত ঘাটাঘাটি করে একটু আধটু তথ্য পেয়েছি। যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন এবং যাচাই বাছাই করে তথ্যগুলো গ্রহণ করেছি। যতটা ভালো করার আশা করেছিলাম, ততটা না হলেও আশা করি খুব খারাপ হয়নি।
সাহাদত হোসেন খান
সেপ্টেম্বর, ২০১৪
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায়
* যেসব কারণে মোগল সাম্রাজ্যের পতন
* সম্রাট আওরঙ্গজেবের সন্তানাদি
* শাহজাদা আজম শাহর সিংহাসনে আরোহণ
* আজম শাহর পাশে পুত্র বিদার বখত
* প্রথম বাহাদুর শাহ
* সিংহাসন দখলে বাহাদুর শাহর অগ্রযাত্রা
* আজম শাহর সঙ্গে বাহাদুর শাহর জাজাউয়ে যুদ্ধ
* রাজপুতদের সঙ্গে বাহাদুর শাহর প্রথম সংঘর্ষ
* মোহাম্মদ কাম বকশের সিংহাসনে আরোহণ
* হায়দরাবাদ যুদ্ধে কাম বকশের মৃত্যু
* বাহাদুর শাহর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাজপুত বিদ্রোহ
* দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সঙ্গে বিরোধের সূচনা
* শিখ বিদ্রোহী বান্দা সিং বাহাদুরের উপর্যুপরি অভিযান
* লাহোরে শিখদের বিরুদ্ধে বাহাদুর শাহর অগ্রযাত্রা
* শিখদের দুর্গ তছনছ এবং বান্দার পলায়ন
* বাহাদুর শাহর দরবারে ওলন্দাজ দূত
* লাহোরে বাহাদুর শাহ
দ্বিতীয় অধ্যায়
* বাহাদুর শাহর মৃত্যুর পর পুত্রদের মধ্যে বিরোধ
* তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শাহজাদা আজিমুশ্বানের মৃত্যু
* শাহজাদা জাহান শাহর মৃত্যু
* সম্রাট হিসেবে জাহান্দার শাহর সিংহাসনে আরোহণ
* দিল্লিতে জাহান্দার শাহ
* শাহজাদা ফররুখ শিয়ারের অগ্রযাত্রা
* শাহজাদা আজিজউদ্দিনের সঙ্গে ফররুখ শিয়ারের মোকাবিলা
* আগ্রার পথে জাহান্দার শাহর দিল্লি ত্যাগ
* আগ্রা যুদ্ধে জাহান্দার শাহর পরাজয়
* ফররুখ শিয়ারের সিংহাসনে আরোহণ
* জুলফিকার খানের মৃত্যু
* শাহী দরবারে ইরানি ও তুরানিদের আত্মবিনাশী শত্রুতা
* প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মৃত্যুদণ্ড
* রাজপুত রাজা অজিত সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান
* ভুয়া শিখ গুরু বান্দার দ্বিতীয় দফা বিদ্রোহ
* সিরহিন্দে মুসলিম গণহত্যা
* শিখদের দুর্গ তছনছ এবং বান্দার পলায়ন
* চুরামনের নেতৃত্বে জাঠ বিদ্রোহ
* ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যিক ছাড়
* সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে ফররুখ শিয়ারের প্রথম কলহ
* উজির সৈয়দ আবদুল্লাহ খানকে ধ্বংসের চক্রান্ত
* ওবায়দুল্লাহ খান মীর জুমলার সৈন্যদের বিদ্রোহ
* সৈয়দ হোসেন আলীর সঙ্গে যুদ্ধে দাউদ খান নিহত
* ইতিকাদ খানের আকস্মিক উত্থান
* সৈয়দদের বিরুদ্ধে ফররুখ শিয়ারের নয়া ষড়যন্ত্র
* দিল্লির উদ্দেশে হোসেন আলী খানের অগ্রযাত্রা
* দিল্লিতে সৈয়দ হোসেন আলী খান
* সম্রাট ও সৈয়দ আবদুল্লাহর মধ্যে শেষ কলহ
* সম্রাট ফররুখ শিয়ারের শেষদিন
* সম্রাট ফররুখ শিয়ারের করুণ মৃত্যু
তৃতীয় অধ্যায়
* সম্রাট রফি-উদ দারাজাত
* নেকুশিয়ারকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা
* চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী আগ্রা যুদ্ধ
* রফি-উদ-দৌলার সিংহাসনে অধিষ্ঠান
* আগ্রা দুর্গ ও নেকুশিয়ারকে সমর্পণ
* সম্রাট মোহাম্মদ শাহ
* মোগল সাম্রাজ্যে ভাঙনের চূড়ান্ত সূচনা
* এলাহাবাদে বিদ্রোহ
* সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে নিজাম-উল-মুলকের বিদ্রোহ
* নিজাম-উল-মুলকের সঙ্গে যুদ্ধে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিপর্যয়
* সৈয়দ হোসেন আলীকে চক্রান্ত করে হত্যা
* মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা
* মোহাম্মদ শাহর সঙ্গে যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল্লাহ খানের পরাজয়
* নিজাম-উল-মুলকের সঙ্গে সম্রাটের বিরোধের সূচনা
* হায়দরাবাদে নিজাম-উল-মুলকের স্বাধীনতা ঘোষণা
* দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের সঙ্গে নিজামের উপর্যুপরি যুদ্ধ
* মালব ও গুজরাটে মারাঠাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
* রাজপুত রাজা অজিত সিংয়ের বিদ্রোহ
* আওয়াদে সাদাত খানের স্বাধীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা
* দিল্লিতে মোগলদের সঙ্গে মারাঠাদের প্রথম যুদ্ধ
চতুর্থ অধ্যায়
* নাদির শাহর ভারত আক্রমণ
* কারনাল যুদ্ধে মোহাম্মদ শাহর শোচনীয় পরাজয়
* কর্ণাটকে মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম
* সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর
* পাঞ্জাবে আদিনা বেগের ক্ষণে ক্ষণে খোলস বদল
* আধিপত্য বিস্তারে ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
* ফরাসিদের সঙ্গে হায়দরাবাদের চতুর্থ নিজামের জোট গঠন
* সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর
* ১৭৫৭ সালের দিল্লি যুদ্ধ
* পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
* জাঠ রাজা সুরুজ মলের বারবার আক্রমণ
* পাঞ্জাবে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আবদালির বিজয়
* পাঞ্জাবে শিখ সাম্রাজ্য
* আবদালির নাতি শাহ জামানের ভারত অভিযান
*
* সীমান্ত প্রদেশে আফগানদের সঙ্গে শিখদের যুদ্ধ
* শিখ সাম্রাজ্যের স্থপতি রনজিৎ সিং
* রনজিৎ সিংয়ের জীবনে মুসলিম আজিজউদ্দিনের গুরুত্ব
* সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম
* ফারজানা জেবুন্নিসার অবিশ্বাস্য বীরত্ব
* মধ্য ভারত দখলে মারাঠাদের সঙ্গে ব্রিটিশদের অনবরত যুদ্ধ
* সম্রাট দ্বিতীয় আকবর
* সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর শিখ বিরোধী জেহাদ
* শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর
* ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ: ভারতে মুসলিম শাসনের অবসান
* বাহাদুর শাহর বংশধরদের লালকেল্লার মালিকানা দাবি
লেখক পরিচিতি
সাহাদত হোসেন খান ১৯৫৬ সালের পহেলা মে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে উতীর্ণ হন। তারপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ এবং নরসিংদী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর তার আগ্রহ সহজাত। সেই আগ্রহ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে নিয়ে বহু বই লিখেছেন। সাংবাদিকতা তাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ১৯৮৭ সালে তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি চার বার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মোগল ইতিহাস বরাবরই আমাকে আন্দোলিত করতো এবং এখনো করে। কখনো কখনো তাদের নিয়ে গর্ব করতাম। আবার কখনো বা দুঃখ পেতাম। ব্যক্তিগত জানার আগ্রহ থেকে প্রথমে একটি বই লিখে ফেলি। নাম দেই মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়। বইটির নামকরণ থেকেই বুঝা যায় যে, এতে শুধু মোগল ইতিহাসের সুখের দিনগুলো স্থান পেয়েছে। আমি ইচ্ছে করেই মোগল সাম্রাজ্যের বেদনাদায়ক অধ্যায় এড়িয়ে গেছি। ভেবেছিলাম যা লিখেছি তাই যথেষ্ট। আর না লিখলেও চলবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশক ও পাঠকদের অনুরোধে এ বইটি লিখায় হাত দেই। বইটি লিখতে শুরু করে টের পাই যে, আমার সামনে সমুদ্র। মনে সাহস সঞ্চয় করে লিখতে শুরু করি। নাম দিয়েছি মোগল সাম্রাজ্যের পতন। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায় লিখতে গিয়ে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, মোগল সাম্রাজ্যের পতন লিখতে গিয়েও হুবহু একই সমস্যার মুখোমুখি হই। সূত্র ছাড়া বই লিখা সম্ভব নয়। সমসাময়িক অথবা পরবর্তীকালে প্রকাশিত বই হচ্ছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। বইয়ের কোনো জাত নেই। কিন্তু ভারতের ইতিহাস বিষয়ক কোনো কোনো বইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ নেয়া হলে স্পষ্ট লেখকের ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। স্যার যদুনাথ সরকারের মতো ঐতিহাসিকগণও এ চক্র থেকে বের হতে পারেননি। ভারতে জন্মগ্রহণ এবং শত শত বছর ভারতে বসবাস করা সত্ত্বেও যদুনাথ সরকারের ভাষায় মোগলরা বিদেশি। মোগলরা বিদেশি হলে আমাদের পরিচয় দাঁড়ায় কি? ভারতীয়দের ভাষায় আমরাও বিদেশি। এজন্য বিজেপি শ্লোগান দেয় : বাবর কা আওলাদ কা বাহার করো, মন্দির কা নির্মাণ করো। যে জাতি কালা পানি আখ্যা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়াকে জাত যাওয়া বলে মনে করতো তাদের পক্ষে মোগলদের বিদেশি বলাই স্বাভাবিক। ভারতীয় ঐতিহাসিকরা স্বীকৃতি না দিলেও ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এইচভি হাডসন তার গ্রেট ডিভাইড শিরোনামে গ্রন্থে মোগলদের ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। হাডসন তার আলোচ্য বইয়ের ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন : : Later Muslim conquerors became absorbed by the land they ruled and Akber the Great was as much as Indian as Pandit Nehru. অর্থাৎ পরবর্তীকালের মুসলিম বিজেতাগণ তাদের শাসনাধীন ভূখণ্ডে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন এবং মহান আকবর ছিলেন পণ্ডিত নেহরুর মতো ভারতীয়।
আজ ভারতের দু’প্রান্তের দু’টুকরো ভূখণ্ডে আমাদের বসবাস। এতেই আমরা পরিতৃপ্ত। কিন্তু সংখ্যায় ক্ষুদ্র হলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ ভারতে মুসলমানদেরকে সাম্রাজ্য দান করেছিলেন। আমরা কেন এ সাম্রাজ্য হারালাম, নিজেদের বিবেককে একবার প্রশ্ন করা উচিত। আমার লক্ষ্য হচ্ছে অতীতের সঙ্গে পাঠকদের যোগসূত্র স্থাপনে সহায়তা করা। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যগুলো ছিল পক্ষপাতমূলক ও একতরফা। তাই কখনো কখনো লিখতে গিয়ে থেমে গিয়েছি। ভেবেছি কার কথা লিখবো। ইতিহাস মোগলদের প্রতি সুবিচার করেনি। খুব সংকীর্ণ শোনালেও অনেক সময় আপন মনে বলেছি, শিখরা লিখেছে শিখদের জন্য, হিন্দুরা লিখেছে হিন্দুদের জন্য, খ্রিস্টানরা লিখেছে খ্রিস্টানদের জন্য। মোগল অথবা মুসলমানদের জন্য কি লিখার কেউ ছিল না? মুসলিম লেখকরা একেবারে লিখেননি তা নয়। তবে তাদের বইয়ের সংখ্যা অমুসলিমদের তুলনায় অতি নগণ্য। এসব বই আবার হয়তো ফারসি নয়তো উর্দু। ফারসি ও উর্দু বইগুলো অনুবাদ করা হয়েছে খুব কম। আবার অনূদিত বইগুলো পাওয়া যায় না। এসব মৌলিক দুর্বলতা ও ক্রটির ভেতর দিয়ে বইটি লিখেছি। শুরুতে ভেবেছিলাম বই লিখার মতো যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে না। দিন রাত ঘাটাঘাটি করে একটু আধটু তথ্য পেয়েছি। যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন এবং যাচাই বাছাই করে তথ্যগুলো গ্রহণ করেছি। যতটা ভালো করার আশা করেছিলাম, ততটা না হলেও আশা করি খুব খারাপ হয়নি।
সাহাদত হোসেন খান
সেপ্টেম্বর, ২০১৪
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায়
* যেসব কারণে মোগল সাম্রাজ্যের পতন
* সম্রাট আওরঙ্গজেবের সন্তানাদি
* শাহজাদা আজম শাহর সিংহাসনে আরোহণ
* আজম শাহর পাশে পুত্র বিদার বখত
* প্রথম বাহাদুর শাহ
* সিংহাসন দখলে বাহাদুর শাহর অগ্রযাত্রা
* আজম শাহর সঙ্গে বাহাদুর শাহর জাজাউয়ে যুদ্ধ
* রাজপুতদের সঙ্গে বাহাদুর শাহর প্রথম সংঘর্ষ
* মোহাম্মদ কাম বকশের সিংহাসনে আরোহণ
* হায়দরাবাদ যুদ্ধে কাম বকশের মৃত্যু
* বাহাদুর শাহর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাজপুত বিদ্রোহ
* দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সঙ্গে বিরোধের সূচনা
* শিখ বিদ্রোহী বান্দা সিং বাহাদুরের উপর্যুপরি অভিযান
* লাহোরে শিখদের বিরুদ্ধে বাহাদুর শাহর অগ্রযাত্রা
* শিখদের দুর্গ তছনছ এবং বান্দার পলায়ন
* বাহাদুর শাহর দরবারে ওলন্দাজ দূত
* লাহোরে বাহাদুর শাহ
দ্বিতীয় অধ্যায়
* বাহাদুর শাহর মৃত্যুর পর পুত্রদের মধ্যে বিরোধ
* তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শাহজাদা আজিমুশ্বানের মৃত্যু
* শাহজাদা জাহান শাহর মৃত্যু
* সম্রাট হিসেবে জাহান্দার শাহর সিংহাসনে আরোহণ
* দিল্লিতে জাহান্দার শাহ
* শাহজাদা ফররুখ শিয়ারের অগ্রযাত্রা
* শাহজাদা আজিজউদ্দিনের সঙ্গে ফররুখ শিয়ারের মোকাবিলা
* আগ্রার পথে জাহান্দার শাহর দিল্লি ত্যাগ
* আগ্রা যুদ্ধে জাহান্দার শাহর পরাজয়
* ফররুখ শিয়ারের সিংহাসনে আরোহণ
* জুলফিকার খানের মৃত্যু
* শাহী দরবারে ইরানি ও তুরানিদের আত্মবিনাশী শত্রুতা
* প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মৃত্যুদণ্ড
* রাজপুত রাজা অজিত সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান
* ভুয়া শিখ গুরু বান্দার দ্বিতীয় দফা বিদ্রোহ
* সিরহিন্দে মুসলিম গণহত্যা
* শিখদের দুর্গ তছনছ এবং বান্দার পলায়ন
* চুরামনের নেতৃত্বে জাঠ বিদ্রোহ
* ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যিক ছাড়
* সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে ফররুখ শিয়ারের প্রথম কলহ
* উজির সৈয়দ আবদুল্লাহ খানকে ধ্বংসের চক্রান্ত
* ওবায়দুল্লাহ খান মীর জুমলার সৈন্যদের বিদ্রোহ
* সৈয়দ হোসেন আলীর সঙ্গে যুদ্ধে দাউদ খান নিহত
* ইতিকাদ খানের আকস্মিক উত্থান
* সৈয়দদের বিরুদ্ধে ফররুখ শিয়ারের নয়া ষড়যন্ত্র
* দিল্লির উদ্দেশে হোসেন আলী খানের অগ্রযাত্রা
* দিল্লিতে সৈয়দ হোসেন আলী খান
* সম্রাট ও সৈয়দ আবদুল্লাহর মধ্যে শেষ কলহ
* সম্রাট ফররুখ শিয়ারের শেষদিন
* সম্রাট ফররুখ শিয়ারের করুণ মৃত্যু
তৃতীয় অধ্যায়
* সম্রাট রফি-উদ দারাজাত
* নেকুশিয়ারকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা
* চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী আগ্রা যুদ্ধ
* রফি-উদ-দৌলার সিংহাসনে অধিষ্ঠান
* আগ্রা দুর্গ ও নেকুশিয়ারকে সমর্পণ
* সম্রাট মোহাম্মদ শাহ
* মোগল সাম্রাজ্যে ভাঙনের চূড়ান্ত সূচনা
* এলাহাবাদে বিদ্রোহ
* সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে নিজাম-উল-মুলকের বিদ্রোহ
* নিজাম-উল-মুলকের সঙ্গে যুদ্ধে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিপর্যয়
* সৈয়দ হোসেন আলীকে চক্রান্ত করে হত্যা
* মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা
* মোহাম্মদ শাহর সঙ্গে যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল্লাহ খানের পরাজয়
* নিজাম-উল-মুলকের সঙ্গে সম্রাটের বিরোধের সূচনা
* হায়দরাবাদে নিজাম-উল-মুলকের স্বাধীনতা ঘোষণা
* দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের সঙ্গে নিজামের উপর্যুপরি যুদ্ধ
* মালব ও গুজরাটে মারাঠাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
* রাজপুত রাজা অজিত সিংয়ের বিদ্রোহ
* আওয়াদে সাদাত খানের স্বাধীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা
* দিল্লিতে মোগলদের সঙ্গে মারাঠাদের প্রথম যুদ্ধ
চতুর্থ অধ্যায়
* নাদির শাহর ভারত আক্রমণ
* কারনাল যুদ্ধে মোহাম্মদ শাহর শোচনীয় পরাজয়
* কর্ণাটকে মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম
* সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর
* পাঞ্জাবে আদিনা বেগের ক্ষণে ক্ষণে খোলস বদল
* আধিপত্য বিস্তারে ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
* ফরাসিদের সঙ্গে হায়দরাবাদের চতুর্থ নিজামের জোট গঠন
* সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর
* ১৭৫৭ সালের দিল্লি যুদ্ধ
* পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
* জাঠ রাজা সুরুজ মলের বারবার আক্রমণ
* পাঞ্জাবে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আবদালির বিজয়
* পাঞ্জাবে শিখ সাম্রাজ্য
* আবদালির নাতি শাহ জামানের ভারত অভিযান
*
* সীমান্ত প্রদেশে আফগানদের সঙ্গে শিখদের যুদ্ধ
* শিখ সাম্রাজ্যের স্থপতি রনজিৎ সিং
* রনজিৎ সিংয়ের জীবনে মুসলিম আজিজউদ্দিনের গুরুত্ব
* সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম
* ফারজানা জেবুন্নিসার অবিশ্বাস্য বীরত্ব
* মধ্য ভারত দখলে মারাঠাদের সঙ্গে ব্রিটিশদের অনবরত যুদ্ধ
* সম্রাট দ্বিতীয় আকবর
* সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর শিখ বিরোধী জেহাদ
* শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর
* ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ: ভারতে মুসলিম শাসনের অবসান
* বাহাদুর শাহর বংশধরদের লালকেল্লার মালিকানা দাবি
লেখক পরিচিতি
সাহাদত হোসেন খান ১৯৫৬ সালের পহেলা মে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে উতীর্ণ হন। তারপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ এবং নরসিংদী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর তার আগ্রহ সহজাত। সেই আগ্রহ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে নিয়ে বহু বই লিখেছেন। সাংবাদিকতা তাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ১৯৮৭ সালে তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি চার বার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
Mugol Samrajyer Poton,Mugol Samrajyer Poton in boiferry,Mugol Samrajyer Poton buy online,Mugol Samrajyer Poton by Shahadat Hossain Khan,মোগল সাম্রাজ্যের পতন,মোগল সাম্রাজ্যের পতন বইফেরীতে,মোগল সাম্রাজ্যের পতন অনলাইনে কিনুন,সাহাদত হোসেন খান এর মোগল সাম্রাজ্যের পতন,9789849029900502,Mugol Samrajyer Poton Ebook,Mugol Samrajyer Poton Ebook in BD,Mugol Samrajyer Poton Ebook in Dhaka,Mugol Samrajyer Poton Ebook in Bangladesh,Mugol Samrajyer Poton Ebook in boiferry,মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইবুক,মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইবুক বিডি,মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইবুক ঢাকায়,মোগল সাম্রাজ্যের পতন ইবুক বাংলাদেশে
সাহাদত হোসেন খান এর মোগল সাম্রাজ্যের পতন এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 600.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Mugol Samrajyer Poton by Shahadat Hossain Khanis now available in boiferry for only 600.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
সাহাদত হোসেন খান এর মোগল সাম্রাজ্যের পতন এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 600.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Mugol Samrajyer Poton by Shahadat Hossain Khanis now available in boiferry for only 600.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.