ভূমিকা

জীব আর জড় নিয়েই বিশ্ব ভ্রহ্মাণ্ড গঠিত। আবার প্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়েই জীবজগৎ। মেরুদণ্ডী আর অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সমন্বয়ে প্রাণী জগৎ। মেরুদণ্ডী প্রাণীর ৭ম পর্বে আছে হোমোসেপিয়েন্স বা মানুষ। কাজেই মানুষও এক ধরণের প্রাণী এ কথা বিজ্ঞানের আলোকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু বিশেষ গুণে গুণান্বিত হয়েই আজকের এই মানব জাতি । প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না। পশু জন্মালেই পশু কিন্তু মানুষ আপ্রাণ চেষ্টায় মানুষ। কবি গুরুর ভাষায় ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছ বাঙ্গালী করে, মানুষ করোনি' –এ ধরণের বিভিন্ন উক্তি থেকে অন্ততঃ এটুকু প্রতিয়মান হয় যে, শুধুমাত্র বাহ্যিক আকৃতি দিয়েই মানুষ হওয়া যায় না। অতিরিক্ত কিছু গুণাবলীর প্রয়োজন হয় এবং সেই অতিরিক্ত গুণাবলীই হলো বিবেক বা মনুষ্যত্ব। মানুষ তার জ্ঞান, বিবেক, মনুষ্যত্বসহ নানা গুণে গুণান্বিত হয়েই সৃষ্টির সেরা জীব বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। মানুষ প্রাণী কূলের সর্বোৎকৃষ্ট জাতি। আর এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের উর্বর মস্তিষ্কের কারণে। কিন্তু এই মস্তিষ্কের কার্যাবলী প্রস্ফুটিত হয় জন্মের পর পরিবেশের সান্নিধ্যে। কাজেই মানুষের মানবিক গুণাবলী অর্জনে পরিবেশের ভূমিকা অপরিসীম। মানবিক গুণাবলী শিখতে হয়- শিখাতে হয়- অর্জন করতে হয়। পরিবেশের কারণে সেই শিক্ষা বা অর্জন যদি হয় ত্রুটিপূর্ণ তবে তার খেসারত গোটা মানব জাতিকেই দিতে হবে। অনেকে বর্তমানে মানবতার অবক্ষয়ের জন্য মানব সভ্যতাকে ত্বরান্বিতকারী বিভিন্ন সৃষ্টিকে প্রতিনিয়ত দায়ী করে থাকে। এটম বোম, ডিনামাইট, সমরাস্ত্র, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, গুগল ইত্যাদি কোন কিছুই এই অভিযোগের বাইরে নেই। নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য অজুহাত দেখাতে বা অন্যের উপর দোষ চাপাতে করিতকর্মা এই মানব জাতি; আর বাঙালী হলে তো কথাই নেই।