সব মিলিয়ে ছিয়াশিটা ফ্ল্যাট। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটই রথী-মহারথীদের বসবাসের জায়গা। অবস্থান বেশ অভিজাত এলাকায়। গাড়ি ছাড়া মেহমান এলে অনুমতির অপেক্ষায় তাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয় গেইটের বাইরে। গাড়িওয়ালা মেহমানদের কথা অবশ্য আলাদা খাতির। চব্বিশ ঘন্টা সিকিউরিটি গার্ড থাকে কয়েকজন। হাইফাই এই বিল্ডিঙে নিজস্ব জিম আর সুইমিং পুলেরও ব্যবস্থা রয়েছে, যদিও তা কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়।
যেহেতু বেশির ভাগই উঁচ তলার মানুষজন এখানে থাকেন, তারা চাননি আশেপাশে মুদির দোকান বা চায়ের দোকান বসুক। মধ্যবিত্ত কর্মজীবি মানুষের আড্ডাস্থল ছিল বিল্ডিঙের সামনে এক অফিসের কর্মচারিদের চা-নাস্তার দোকান, তাও কয়েক বছর আগে জোরপূর্বক উঠিয়ে দেয়া হল। ইনারা মুদির দোকানে গিয়ে খরচাপাতি করবার লোক নন। তাদের জন্যে আছে সুপার সপ। প্রতেক্যেরই আছে নিজস্ব গাড়ি আর ড্রাইভার, আর ছুটা বুয়ারও অভাব নেই। নিজের কাজ নিজে করবার মানসিকতাও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে আর নেই। সময়টাই এমন বদলেছে।
এমন সময়ে বিল্ডিং কমিটি থেকে ঘোষণা এল যে খুব প্রয়োজন। ছাড়া সবাই নিজের ঘরেই থাকুন, ছুটা বুয়া এবং ড্রাইভারদের আপাতত ছুটি দিয়ে দিন। বাইরের থেকে কোন বহিরাগতের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হল। প্রথম সপ্তাহেই নানান ফ্ল্যাট থেকে রাগারাগি এবং প্রতিবাদ আসতে থাকল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কিছু বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা বুঝতে পারলেন, এই বৈশ্বিক মহামারীতে সুস্থ থাকতে হলে, এর বিকল্প নেই।
শুরু হল “মন পাখির বাসা” নামক কমপ্লেক্সের ভেতরে মনুষ্য চিড়িয়াখানা। শত বছর ধরে মানুষ অন্যান্য বন্য জীব-জন্তুদের সেখানে আটকে রেখে নিজেদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে রেখে এসেছে। আজ তারাই নিজেদের ঘরের চিড়িয়াখানায় আটকা পড়ল, স্বইচ্ছায়, কোন উপায়ন্তর না দেখে।
ধরে নিন, লেখকও সেই সুবিশাল কমপ্লেক্সের এক বাসিন্দা। রথী-মহারথী না হলেও, তিনি সেখানে বসবাস করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। একা একা ছয় মাস ঘর বন্দি থেকে, আশেপাশের অনেক কিছুই তার চোখে পড়লো না, তিনি অন্যের ঘরে উঁকি মারবার মতন কুরুচি সম্পন্ন নন। একা একা থাকবার ফলেই হয়তো তিনি চোখ কান খোলা রাখেন অন্যদের তুলনায় বেশি। অনেক কাহিনী বুঝে ফেললেন তিনি তার দিক থেকে। তার মানে এই নয় যে এর সবই সম্পূর্ন সত্য হবে। এটাকে একপাক্ষিক কাহিনী হিসাবেই ধরে নিন। হতে পারে এটা তার কল্পনা। ছয় মাস ঘরবন্দি থাকলে, মাটি, মানুষ, আকাশ, জীব জন্তু, নদী, পাহাড়- সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে, সুস্থ মানুষের। মগজেও নানান বিভ্রম তৈরি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কি তা হয়েছে না হয়নি, সে তর্কে আজ বরং না যাই।
গল্প শুনি, কেমন?
ফারিয়া প্রেমা এর মন পাখির বাসা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 255.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। mon pakhir basa by Faria Premais now available in boiferry for only 255.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.