ভূমিকা
দূরের আকাশের চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-তারা চিরকালই মানুষের মনে অপরিসীম কৌতূহল জাগিয়েছে। মহাকাশের রহস্য মানুষ উদঘাটন করতে চেষ্টা করেছে আদিকাল থেকে। সেই বোকা পণ্ডিতের কাহিনীটা আমাদের সবারই জানা।পণ্ডিত রাতের বেলা পথ চলেছেন-দৃষ্টি তাঁর আকাশের দিকে।আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের ভাবনায় তিনি মশগুল।এদিকে পথে ছিল এক খাদ; আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে পথ চলতে চলতে তিনি পড়ে গেলেন সেই খাদে।এই কাহিনীর শিক্ষামূলক দিকটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না-আশপাশে না তাকিয়ে শুধু দূরের বিষয় নিয়ে ব্যস্থ থাকলে বিপদ ঘটতে পারে।তবে সেই সাথে যেসব পণ্ডিত ঘর-সংসারের চিন্তা ছেড়ে কেবলই আকাশের ভাবনা-চিন্তায় মন দেয় তাদের জন্য করুণার দিকটিও এখানে স্পষ্ট।বহুকাল ধরে জ্ঞানী মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা অনেকটা এরকমই ছিল। তার কারণ, আকাশের বিষয় যে তাদের জীবনে কখনো কাজে লাগবে তা ছিল মানুষের কল্পনারও অতীত।কিন্ত আজ এ অবস্থা একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে বেরিয়ে পড়েছে মানুষ; চাঁদের বুকে নেমে ঘুরে বেড়িয়েছে। মহাকাশে ঘরপাক খাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের বদৌলতে আমরা সহজেই দূরদেশে টেলিফোনে কথা বলতে পারছি, টেলিভিশনে ছবি দেখছি নানা দেশের। মহাকাশের বার্তা পেয়ে আমরা জানতে পারছি ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর-খরা ও বন্যার সতর্কবাণী। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে আশ্চর্য স্পষ্ট ছবি তুলে আনছেন সৌরজগতের অতি দূরের গ্রহ-উপগ্রহের। চাঁদের মেরু অঞ্চলে পানি আর মঙ্গলগ্রহের বুকে প্রাণের চিহ্ন থাকতে পারে-খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদ আর মঙ্গলগ্রহের বুকে মানুষের আন্তানা গাড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।সূর্যের গায়ে সৌরকলঙ্কের খবর থেকে জ্যোতির্বিদরা খবর দিচ্ছেন পৃথিবীর আবহাওয়ায় বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় তার কোন ছাপ পড়বে কিনা। তাঁরা বলছেন সূর্যের বিকিরণে যদি শতাংশের ভগ্নাংশমাত্র হেরফের ঘটে তাহলেই বদলে যেতে পারে পথিবীর জলবায়ূ। নভোযান থেকে আশ্চর্য সব খবর আসছে মানুষের জন্য। বৃহস্পতির ওপর আছড়ে পড়েছে ধূমকেতুর কিছু খণ্ড-তার স্পষ্ট ছবি দেখছি আমরা পৃথিবীতে বসে। এমনি ধূমকেতু বা গ্রহাণু যে কোন সময় এসে পড়তে পারে পৃথিবীর ওপর। অতীতে এমন ঘটেছে-ভবিষ্যতেও যে ঘটবে তা প্রায় নিশ্চিত, তবে কখন তা কেউ বলতে পারে না।মহাকাশের বিষয়ে তাই আজ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ।গ্রহ-তারার জগৎ সম্বন্ধে ভাল করে জানার জন্য ঢাকায় একটি মহাকাশ-কেন্দ্র ও প্ল্যানেটেরিয়াম বসাবার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।মহাকাশ বিষয়ে মানুষের জ্ঞান আজ অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে। প্রতি বছরই জানা যাচ্ছে নতুন নতুন চমক লাগানো খবর।পৃথিবীর ওপর বসছে আরো জোরালো নতুন নতুন দূরবীন-আলোক -দূরবীনের সঙ্গে যোগ হচ্ছে বেতার-দূরবীন, অবলাল-রশ্মি দূরবীন, এক্স-রশ্মি দূরবীন, গামা-রশ্মি দূরবীন; মহাকাশেও বসছে নানারকম শক্তিশালী দূরবীন।এই শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে গুরু করে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার আমাদের মহাকাশ সম্বন্ধে কয়েকটি অসাধারণ বই উপহার দিয়েছেন; নব্বইয়ের দশকের গোড়া পর্যন্ত তাঁর রচনা এদেশের মানুষকে মহাকাশ সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখেয়েছে। আজ আর তিনি নেই; তাবে কিছু মহাকাশ-উৎসাহী তরুণ তাঁর সেই চর্চার ধারাকে আজো জিইয়ে রেখেছে।আজকের দিন পর্যন্ত মহাকাশ সম্বন্ধে আমরা যেটুকু জেনিছি তা এ বইতে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের এ বিষয়ে কৌতূহল মেটাতে এটি সাহায্য করবে।এ বইযের রচনাগুলি যখন জনকণ্ঠ সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখনই অনেক শুভানুধ্যায়ী এগুলিকে পুস্তকাকারে প্রকাশের অনুরোধ জানান।প্রকাশের আগে জ্যোতির্বিদ্যা-বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এ. আর. খান বইটির পাণ্ডুলিপি পড়ে নানা সুপরামর্শ দিয়েছেন। সেজন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আবদুল্লাহ আল-মুতী
সূচিপত্র
*রঙিন ছবি
*মহাকাশে কি ঘটছে
*পৃথিবী ছাড়ালেই চাঁদ
*আমাদের কাছের পড়শিরা
*আরো দূরের অভিযান
*মাপজোখের উঁচুতলা নিচতলা
*স্বর্গ-নরক কত দূর
*আকাশ জুড়ে তারার মেলা
*তারার ভিড়ে একটি নৃত্য
*কৃষ্ণবিবরের অতল অন্ধকারে
*পড়শির খোঁজে দুরে কোথাও
*আকাশ যদি ভেঙ্গে পড়ে
*শেষের সেদিন আসবে যখন
*মহাকাশ নিয়ে মহাসঙ্কট
পরিশিষ্ট
*সৌরজগতের গ্রহদের সম্বন্ধে কিছু তথ্য
*মিটারের সিঁড়ি ভেঙ্গে ওঠা আর নামা
*কবে কী ঘটেছে বা ঘটবে
*কোন্ শব্দ কী বোঝায়
ড. আবদুল্লাহ আল-মুতী এর মহাকাশে কী ঘটছে এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 225.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। mohakashe ki gotche by D. Abdullah Al Mutiis now available in boiferry for only 225.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.