মানুষের শ্রমশক্তি যে কতটা সৃজনশীল তা চোখ মেললেই বােঝা যায়। উৎপান প্রক্রিয়া সেই সৃষ্টিশীলতারই অভিব্যক্তি। সমাজ ব্যবস্থার রূপান্তরের প্রশ্নটি তাই উৎপাদনব্যবস্থার বিকাশের প্রক্রিয়ার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সভ্যতার অগ্রগতি, সংস্কৃতির বিকাশ, চিন্তার জগতে পরিবর্তন ইত্যাদি সব কিছুই উৎপাদনব্যবস্থার পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। এই পরিবর্তন আবার নির্ভর করে উৎপাদিকা শক্তি (Forces of production) ও উৎপাদন সম্পর্কের (Relation of Produotion) পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর। উৎপাদিকা শক্তি বলতে বােঝায় দৈহিক শ্রম, উৎপাদনের হাতিয়ার (যা শ্রমই সৃষ্টি করে) ও প্রকৃতিদত্ত সম্পদের (যা শ্রমশক্তি প্রয়ােগের অপেক্ষায় থাকে) যােগফলকে। আর উৎপাদন সম্পর্ক হচ্ছে উৎপাদনের উপাদানসমূহের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক উৎপাদনের উপকরণসমূহের সঙ্গে মালিকের ও শ্রমিকের, মালিকের সঙ্গে শ্রমিকের, মালিকের সঙ্গে মালিকের, শ্রমিকের সঙ্গে শ্রমিকের সম্পর্ক। এই সম্পর্কই নির্ধারণ করে সামাজিক অর্থনৈতিক এমন একটি চরিত্র, যা থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন শ্রেণি ও গােষ্ঠীর সম্পর্ক। এই সম্পর্ক দুই ধরনের হয়-বৈর ও অবৈর। মালিকানা ব্যক্তির হলে সম্পর্ক হবে বৈর, আর সামাজিক হলে অবৈর। প্রাকৃতিক ও অর্জিত সম্পদের মালিকানা সামাজিক হলে সমাজে ও রাষ্ট্রে অবিচার ও শােষণ পীড়ন থাকবে না। মার্কসীয় দর্শন | এরকম একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থার কথাই বলে, যার নাম সমাজতন্ত্র। অর্থাৎ একটি নিকৃষ্ট সমাজকে উৎকৃষ্ট সমাজে রূপান্তরিক করাই মার্কসের মূল লক্ষ্য। এই রূপান্তরের নৈতিক ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বিপ্লবের ধারণার। কেননা বৈপ্লবিক পরিবর্তনই বাস্তবায়িত করতে পারে রূপান্তরের এই ভাবনা।