Loading...

লালসালু (হার্ডকভার)

সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা ১০

সম্পাদক: আনিসুজ্জামান

স্টক:

১৫০.০০ ১১২.৫০

সাহিত্যকীর্তির গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্য আখ্যায়িকার শুরুম, একথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞতানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলোকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে।
সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীতি গ্রন্থমালার প্রথম সম্ভারের ১২টি বই এবং এর ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় সম্ভারে আরো ১২ টি বই দুই সেটে মোট ২৪ টি বই পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

‘লালসালু’ বইয়ের ভূমিকা:
পিতার কর্মসূত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-৭১) বাংলার অনেক মফস্সল শহরে বাস করেছেন এবং পড়াশোনা করেছেন, তবে নিজের কর্মজীবনের প্রায় সবটাই কাটিয়েছেন নগরে: কলকাতা, ঢাকা, করাচি, নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা, লন্ডন, বন ও প্যারিসে। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করেছিলেন এবং সেই সূত্রে বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান দূতাবাসে নিয়োগলাভ এবং জীবনের শেষে ইউনেসকোর কর্মগ্রহণ। সাহিত্যচর্চার শুরু স্কুলজীবনেই, প্রথম প্রকাশিত রচনা ঢাকা কলেজ বার্ষিকীতে মুদ্রিত একটি ছোটোগল্প (১৯৪১)। কলকাতায় যাওয়ার পরে (১৯৪৩) সওগাত, মোহাম্মদী ও বুলবুলেই কেবল নয়, পূর্বাশা, অরণি, চতুরঙ্গ ও পরিচয়ে তাঁর রচনা প্রকাশিত হয়, নিজেও একটি স্বল্পায়ু ইংরেজি সাময়িকী প্রকাশ করেন। কলকাতায় তিনি কাজ করতেন স্টেটসম্যান পত্রিকায়, শাহেদ সোহরাওয়াদীর সান্নিধ্য, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ঘনিষ্ঠতা এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্যের আনুকূল্য লাভ করেন। ওয়ালীউল্লাহর সংকল্প ছিল মুসলমান সমাজ নিয়ে লেখা, বিশেষ করে সেই সমাজের যে-অংশ গ্রামাঞ্চলে বাস করে সেই অংশের কথা লেখা। তিনি তা-ই করেছেন, তবে কোনো সংকীর্ণ মনোভাবের দ্বারা চালিত হননি। তাই তাঁর সাহিত্যকর্মে আমরা সর্বজনীন মানুষকেই পাই, কখনো কখনো তারা বিশেষ দেশকালসমাজের ছাপ বহন করে মাত্র। তিনি বিশেষ করে মৃত্তিকাসংলগ্ন হন পঞ্চাশের মন্বন্তর দেখার পরে, এ-কথাও এ-প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বহুপ্রজ লেখক ছিলেন না। লেখার বিষয়ে সহজে তাঁর তুষ্টি হতো না। এক লেখা বহুবার মাজাঘষা করতেন। তাই আশ্চর্য নয় যে, তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি দুটি গল্পগ্রন্থ-নয়নচারা (১৯৪৫, সঞ্জয় ভট্টাচার্যের আগ্রহে পূর্বাশা লিমিটেড থেকে প্রকাশিত), দুই তীর (১৯৬৫, আদমজী পুরস্কারে সম্মানিত); তিনটি উপন্যাস-লালসালু (১৯৪৯, উপন্যাসের জন্যে লেখক যখন ১৯৬০ সালের বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন, তখনো এটিই ছিল তাঁর একমাত্র উপন্যাস), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪) ও কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮); এবং তিনটি নাট্যরচনা-বহিপীর (১৯৬০, যদিও এর পাণ্ডুলিপি ১৯৫৫ সালে লাভ করে সি ই এন পুরস্কার), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪) ও সুড়ঙ্গ (১৯৬৪)। লালসালুই তাঁকে সর্বাধিক খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে; এর ফরাসি (১৯৬১) ও ইংরেজি (১৯৬৭) অনুবাদ যথাক্রমে প্যারিস লন্ডনে প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে বাংলাদেশ পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এটি আরো কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
লালসালু উপন্যাসে মজিদ মহব্বতনগরে এসে একটি কবর দেখতে পায় এবং তাকে মোদাচ্ছের পীরের মাজার বলে দাবি করে মাজারকে অবহেলা করার জন্যে স্থানীয় মানুষকে তিরস্কার করে। লালসালু দিয়ে আবৃত করে এই মাজারকে সে প্রতিষ্ঠা করে, সেই সঙ্গে লাভ করে আত্মপ্রতিষ্ঠা। খালেক ব্যাপারী বিত্তবান মানুষ-তারা পরস্পরকে সমর্থনদান করে। মাঝে মাঝে তার নিজের মনেই মাজারকে নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়। কবরে শায়িত ব্যক্তির পরিচয় সে জানে না বলেই কেমন এক নিঃসঙ্গতা তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু এ-ভীতি ক্ষণিকের, কেননা এ-মাজারই তার সকল প্রতিপত্তির উৎস। সেই প্রভাব বজায় রাখতে মজিদ একই সঙ্গে পিতাপুত্রের খতনা দেয়, কেউ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কৌশলে সেখানে মসজিদ গড়ে তোলে, অন্য পীরের আবির্ভাব ঘটলে তাকে পর্যুদস্ত করে, এমনকি খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী আমেনাকে—যাকে দেখে সে একদা আকৃষ্ট হয়েছিল—তার সংসার থেকে নির্বাসিত করে।
মহব্বতনগরে মজিদ প্রথমে বিয়ে করে রহীমা নামের এক সুঠামদেহ বিধবাকে, পরে কিশোরী জমিলাকে। নিঃসন্তান রহীমা এ-বিয়ে মেনে নেয়, জমিলার প্রতি তার বাৎসল্যরসের স্ফুরণ হয়। জমিলা নিজের কিশোরীসুলভ চঞ্চলতা ত্যাগ করতে পারে না, তার হাসি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়ে মজিদের অনুরাগীদের চিত্তচাঞ্চল্য ঘটায়। মজিদের শাসন জমিলাকে সংযত করতে ব্যর্থ হয়। শেষে মজিদ শাস্তি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। মাজারপ্রাঙ্গণে-ঠিক তার আগে অবাধ্যতার চরম প্রকাশ ঘটিয়ে জমিলা থুতু দেয় মজিদের বুকে। আসন্ন প্রলয়ের সংকেত পেয়ে মজিদ মাজারপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করে বিপর্যস্ত, ক্লান্ত ও ঘুমন্ত জমিলাকে আবিষ্কার করে-তার পোশাক অবিন্যস্ত, এক পা মাজারের ওপরে। বিমূঢ় মজিদ প্ৰায় আকস্মিকভাবেই সংজ্ঞাহীন বিদ্রোহিণী জমিলাকে কোলে করে ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। স্ত্রীদের পেছনে ফেলে তারপর সে নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা করে।
মজিদের এই পরিণাম তাকে দুৰ্বত্ত-চরিত্র হতে দেয়নি। উপন্যাসের মধ্যে তার নিঃসঙ্গতার যে-ইঙ্গিত রয়েছে, তারই চরম পরিণতি এখানে। রহীমার সহনশীলতা ও আনুগত্য, জমিলার বিদ্রোহ, খালেক ব্যাপারীর আত্মকেন্দ্রিকতা-এসবই লেখক চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তারপরও বলা যায় যে, ওয়ালীউল্লাহ চিত্রাঙ্কন করেছেন এমন এক এলাকার যেখানে শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, যেখানে মানুষের ধর্মভয় ও সংস্কারকে সহজে ব্যবহার করা যায়। কারো-না-কারো স্বার্থে, যেখানে প্রচলিত জীবনধারা সম্পর্কে মানুষ প্রতিবাদহীন। তবে এই উপন্যাসে উদ্দেশ্যমূলকতা নেই। আছে শিল্পীর চোখে দেখা বাস্তব জীবনচিত্র। এখানে বিষয়ের সঙ্গে একান্ত হয়ে গেছে। ভাষা: প্রমিত কথ্য বাংলার ঠাটের মধ্যে আঞ্চলিক ও মুসলমান সমাজে আবশ্যিক আরবি-ফারসি শব্দের মিশেল আছে। সংলাপ আঞ্চলিক ভাষায় গঠিত, কিন্তু সম্পূর্ণই বোধগম্য। ওয়ালীউল্লাহকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে তাঁর সংযম—তা বর্ণনার, চরিত্রচিত্রণের, কাহিনিবিন্যাসের। আশ্চর্যনয় যে, কেবল বাংলাভাষী অঞ্চলে নয়, তার বাইরেও লালসালু বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে, লেখকের মননশীলতা ও আধুনিকতা তাঁর বর্ণিত গ্ৰাম্যজীবন থেকে এত দূরবতী বলেই এর শিল্পসার্থকতা এত মুগ্ধ করে পাঠককে।
আনিসুজ্জামান
বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Lalsalu,Lalsalu in boiferry,Lalsalu buy online,Lalsalu by Syed Waliullah,লালসালু,লালসালু বইফেরীতে,লালসালু অনলাইনে কিনুন,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ এর লালসালু,9789842001253,Lalsalu Ebook,Lalsalu Ebook in BD,Lalsalu Ebook in Dhaka,Lalsalu Ebook in Bangladesh,Lalsalu Ebook in boiferry,লালসালু ইবুক,লালসালু ইবুক বিডি,লালসালু ইবুক ঢাকায়,লালসালু ইবুক বাংলাদেশে
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ এর লালসালু এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 128 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Lalsalu by Syed Waliullahis now available in boiferry for only 128 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৯৫ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2019-02-01
প্রকাশনী অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
ISBN: 9789842001253
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌
লেখকের জীবনী
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ (Syed Waliullah)

Syed Waliullah (তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায়, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট) তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা; মা নাসিম আরা খাতুনও সমতুল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন, সম্ভবত অধিক বনেদি বংশের নারী ছিলেন তিনি। ওয়ালীউল্লাহর আট বছর বয়সের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটে। দুই বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় দুই ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর সম্পর্ক কখনোই অবনতি হয় নি। তার তেইশ বছর বয়সকালে কোলকাতায় চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান। তার পিতৃমাতৃবংশ অনেক শিক্ষিত ছিলেন। বাবা এম এ পাশ করে সরাসরি ডেপুটি মেজিস্ট্রেট চাকুরিতে ঢুকে যান; মাতামহ ছিলেন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করা আইনের স্নাতক; বড়ো মামা এমএবিএল পাশ করে কর্মজীবনে কৃতি হয়ে খানবাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন এবং স্ত্রী ওয়ালীউল্লাহর বড়ো মামী ছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ পরিবারের মেয়ে, উর্দু ভাষার লেখিকা ও রবীন্দ্রনাথের গল্প নাটকের উর্দু অনুবাদক। ১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক, এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবং অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাশে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ওয়ালীউল্লাহ ঢাকায় এসে প্রথমে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদক ও পরে করাচি কেন্দ্রের বার্তা-সম্পাদক (১৯৫০-৫১) হন। ১৯৫১-৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ১৯৬৭-৭১ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ছিলেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ দুটি গল্পগ্রন্থ নয়নচারা (১৯৫১), দুই তীর ও অন্যান্য গল্প এবং তিনটি নাটক বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪) ও সুড়ঙ্গ (১৯৬৪) রচনা করেছেন। ছোটগল্প ও নাটকেও তিনি সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় ভন্ডামি, মানসিক ও চারিত্রিক স্খলন ইত্যাদিকে প্রতিভাসিত করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর, ১৯৮৩) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর প্যারিসে তাঁর মৃত্যু হয় এবং প্যারিসের উপকণ্ঠে মদোঁ-স্যুর বেল্ভু-তে তিনি সমাহিত হন।

সংশ্লিষ্ট বই