জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দেবেন্দ্রনাথের সন্তানরা প্রায় সকলেই ছিলেন প্রতিভাবান আর কেউ-কেউ ছিলেন একটু খেয়ালি স্বভাবের। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের ‘নতুনদাদা' জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন সবচেয়ে চনমনে ধরনের আর নিত্য-নতুন কাজে উৎসাহী। চমৎকার পিয়ানো বাজাতে পারতেন, দেশী-বিদেশী সুর মিশিয়ে গান বানাতেন, নাটক লিখে বাড়ির ছেলেমেয়েদের দিয়ে তা অভিনয় করাতেন, ছােটোভাই রবিকে দিয়েও গান লেখাতেন। আবার তার একটা অন্যরকমের নেশা ছিল। চেনা-অচেনা, খ্যাত-অখ্যাত কোনাে লােকের চেহারা চোখে ধরলেই তাঁর স্কেচবুকে কয়েকটা আঁচড়ে এঁকে রাখতেন সেই মানুষটার প্রতিকৃতি বা পােট্রেট। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আঁকা খাতায় এমনই একটা প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে। তাতে শিল্পী লিখেছেন 'লালন ফকীর (শিলাইদহ বােটের উপর) 5th May 1889'। ভাবতে গেলে এমন কিছু ব্যাপার নয় এটা, কারণ ঐ স্কেচবুকে লালনের ছবির পেছনের পৃষ্ঠায় আঁকা আছে কীর্তনগায়িকা হরিমতির প্রতিকৃতি। এরকম কত মানুষের ছবিই তাে রয়েছে। কিন্তু জিনিসটা গুরুত্ব। পেয়ে গেল অন্য কারণে। লালন ফকির, যার পুরাে নাম লালন শাহ্ ফকির, পরবর্তীকালের মানুষের কাছে নানা কারণে হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত। মানে, ১৮৯০ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে।