প্রতিদিনের সংবাদপত্র আমরা ভরিয়ে তুলি মূলত দুঃসংবাদ দিয়ে। আমরা যারা সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে সংবাদের চেয়ে দুঃসংবাদের মূল্য বােধকরি বেশি। তাই একথা স্বীকার করতেই হবে, আমাদের মানসিক সহন ক্ষমতা সমাজের অন্য যে কারও চেয়ে একটু বেশিই। সিঙ্গেল কলাম, ডবল কলাম, থ্রি সি, ফোর সি, বক্স নিউজ, স্কুপ নিউজ, লিড, সেকেন্ড লিড- এসব পেশাগত শব্দের দাঁড়িপাল্লায় আমরা সব ঘটনা-দুর্ঘটনাকে মাপি। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে যা এসব শব্দবন্ধ ছাপিয়ে যায়। আমাদের মােটা চামড়ার সহনশীলতাকে অতিক্রম করে যাওয়া সেসব ব্যতিক্রমী দুর্ঘটনা আমাদের নির্বাক করে দেয়। এ রকম একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর গতকালের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। যখন কিছু মানুষ অনেক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, ধর্মের নামে, বর্ণের নামে অন্য দেশ ও তার সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য তখন আমরা তাকে গণহত্যা বলি । আর যখন অনেক মানুষ মিলে একজন মানুষকে হত্যা করে তখন তাকে কি বলব, গণখুন? সংবাদপত্রের ভাষায় আমরা বলি গণপিটুনিতে নিহত! কিন্তু গতকালের সংবাদটিকে তা বলা দুঃসহ। বরং বলা উচিত গণখুনিদের হাতে গণখুন সংঘটিত! | রড, লাঠিসােটা, ইটের টুকরাে দিয়ে উন্মত্ত গণখুনিরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এক অপ্রকৃতিস্থ নিরীহ মহিলাকে স্রেফ শিশু চুরির সন্দেহে! রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর হাশেম রােডে গত পরশু ঘটেছে এই লােমহর্ষক ঘটনা। শিশু চুরি করেছে এই সন্দেহে ব্যস্ততম রাজপথে হাজারও মানুষের সামনে দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন লােক মানসিক বিকারগ্রস্ত মাকসুদাকে (৪০) পিটিয়ে খুন করে। যে শিশু চুরির সন্দেহে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই শিশুর বাবা আবদুল বাশার এবং মা ইয়াসমিন বলেছেন, তাদের দুই সন্তান জান্নাত (৫) ও ফাহিম (২) হাশেম রােডে তাদের বাসার কাছেই খেলছিল। এ সময় হঠাৎ এক মহিলা তাদের দুই সন্তানকে কোলে তুলে নিলে অজানা আশংকায় তারা চিকার দেন। চিৎকার শুনে রাস্তার লােকজন জড়াে হয়ে যায়। তারা মাকসুদাকে মারধর শুরু করল। আমরা ঠেকিয়ে রাখতে পারলাম না। পরিস্থিতি দেখে আমরা হতবাক। প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে জানা যায়, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয়। তারা অপ্রকৃতিস্থ মাকসুদাকে শিশুচোর বলে চিৎকার করতে করতে মারধর শুরু করে।