কৈশোর থেকে একাল অবধি জীবনের প্রবাহমান ক্ষয়জাত নরম পলিমাটির মতো সারাক্ষণ গাঁয়ের মানুষের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি আমি! আমার ছিন্নপত্রের অলকানন্দা জীবনের ঝড়জলে ভেসে-ভেসে দোদুল্যমানতার ঋণাত্মক খ্যাপা-বুনো হাঁসের মতো উড়েছি ওদের সাথে এক মানবিক আকাশে অনেক দিন অনেক রাত! অতি সাধারণ দলিত মানুষের কষ্টজীবনের হাত ধরে তাদের সাথে অনিদ্রার দেহাতি গান গেয়েছি সকাল থেকে সন্ধ্যা, রাত থেকে ভোর অবধি! আমার মা শিখিয়েছিলেন আমায়, এক সপ্তরঙা চতুবর্ণা হৃদয়ের রক্তলেখায় পলিময় চরে জেগে ওঠা জীবনের গান গাইতে। যে জীবনঘষা আগুনরঙের দহে পুড়তে পুড়তে আমি চড়ে বেড়িয়েছি আমার দ্বীপগাঁ থেকে বিশ্বচরাচর। আর জীবন সেলুলয়েডে ধারণ করেছি ঐসব মানুষের কর্ষিত জীবনজমির ফসল। যে জীবন দহনের রক্তবীজ পেয়েছি যেখানেই আমি, তাই তুলে এনেছি এখানে! এ বইয়ে আসলে ঐসব মানুষের স্বপ্নময় রাতঘুমের সুবর্ণরেখার জীবন চিত্রায়ণ তুলে ধরা হয়েছে, যাকে বলা যেতে পারে গল্প, কাহিনী কিংবা হতে পারে ঐসব সপ্তপদী মানুষের জীবনপথের কাব্যগাথা।
বৈশ্বিক সুখ আর কষ্টবাতাসে উড়ে উড়ে এসব মানবিক ফুলের নেকটার-কথন তুলে ধরেছি আমি শ্রমজীবী নপুংশক মৌমাছির মতো এ জীবন কাব্যকথায়। তাই এখানে যেমন দেখা মিলবে কৈশোরিক স্কুলবন্ধু, গাঁয়ের জেলে, কিষাণ, নদী, নৌকো, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রবাহমান মানুষের সুখ দুঃখগুলোকে। এ গল্পকাব্যের পাতায় পাতায় মিলবে দলিত মানুষের শোক-জীবনের বীজরক্তের দাহহীন তীব্রতায় জ্বলতে থাকা মানবিকতার দুঃখঋণে মরতে থাকা বোধের ঘ্রাণ। আমার জীবনপথের সপ্তরঙা কাহিনী বলতে গিয়ে সামনে চলে এসেছে মানুষ আর তার ধর্ম, হিন্দুত্ব আর মুসলমানিত্ব, ধার্মিকতা আর নির্ধার্মিকতার কথামালা। এ গ্রন্থে গ্রথিত সব জীবনকাব্যই আসলে মানুষের স্বপ্নদ্বীপের মানবিক বোধের সুুঁইসুতোয় গাঁথা এক ভালবাসার গল্প!
বিশ্বচরাচরে চলার পথের অনাদিকালের হৃদয়ঘন উৎস মাঝে বর্ষাস্রোতে ভাসমান জেদি কচুরিপানার মতো ভেসেভেসে এ জীবনকাব্য হৃদয়ে ধারণ করেছি আমি! মায়ের ভালবাসার স্বাপ্নিক উলের কাঁটায় স্বপ্নবোনা জীবনগহীনে, প্রান্তিক মানবিক বোধগুলোকে নিয়ে একাকি হেঁটে-হেঁটে এ কাহিনীকাব্যের ইট-পাথর, বাঁশ-খুঁটি সংগ্রহ করেছি একান্ত নিভৃতে। আলোকিত যৌক্তিক জীবনের অন্ধ সাগর জলের অমরাবতীর তীরে দাঁড়িয়ে গভীর রাতের একফালি বাঁকা চাঁদের ঘ্রাণতায় জীবনকে ঘষে দেখেছি আমি এ গল্পগুলোর মাঝে। পথকাঁটার নির্বাসনের সুখ আকাশে ভেসেভেসে রহস্যঘেরা ধাঁধাঁময় জীবনপথের প্রশ্নগুলো ছেঁকে আনার চেষ্টা করেছি এ কাহিনীকাব্যে। এ জীবনের গল্পে ভালোবাসাময় জলের অতলে ডুবে ¯্নহোকুল শপথের কলকল ধ্বনিকে তুচ্ছ করে হেঁটেছি সপ্তপদী পিচ্ছিল আর বন্ধুর পথে। বুকের ভেতরের সুপ্ত ক্ষয়িষ্ণু পাথরের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে জেগে ওঠা নির্বাসিত দলিত বিবর্ণ ঘাসপাতাদের তুলে এনেছি আমার নানাবিধ গল্পের অনুসঙ্গ হিসেবে। আমার গল্পের চরিত্রগুলো এবং সম্ভবত আমি নিজেও মানুষের কষ্টবাতাসের একগুচ্ছ যন্ত্রণায় ভেসে গেছি পদ্মা-মেঘনার বেনোজলে প্রতিনিয়ত। তারপরো মানুষের ভালবাসার পিঠের শিরদাঁড়া ধরে জেগে থেকেছি আমি সারাদিন সারারাত প্রতিনিয়ত। ধর্ম বিধৌত প্রেত সময়ের হিংসা-নদীর বিষাক্ত কালোজল টলাতে পারেনি আমায় গাল্পিক সৎভাষণে একটুও। তাইতো বারবার জীবন সড়কের কত অজানা মানুষের চিরচেনা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বালাতে চেষ্টা করেছি আমি এ গল্পগুলোর মাঝে প্রতি মুহূর্তে নানা প্রতিকুলতার মাঝেও!
দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইর বিখ্যাত লেখক ‘রাশিপুরাম কৃষ্ণস্বামী আইয়ার নারায়নস্বামীর’ লেখা জীবনভিত্তিক কাহিনীকাব্য গধষমঁফর উধুং অনুপ্রাণিত করেছে আমায় ‘জলদাস গাঁ-অসমাপ্ত কথামালা’ লিখতে। প্রয়াত ঐ অদেখা লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ আমি! আমি অনেকগুলো গল্প লিখে ক্রমান্বয়ে তা ঢাকা আর কোলকাতা থেকে প্রকাশ করবো, এমন প্রত্যাশা ছিল মননে আমার! আকম্মিক ২০২০-সনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লণ্ডলণ্ড হয়ে যায় সব পরিকল্পনা আমার! ঠিক এই সময় কলকাতার ফেসবুক বন্ধু মুনমুন চৌধুরী পরিচয় করালো আমায় “বইরাগে”র সাথে। আমার দুচারটে লেখা দেখে ই-বুক প্রস্তাবে এগিয়ে এলেন “বইরাগ” এর ফেসবুক বন্ধুরা আমার এ জীবনকাব্য সিরিজ প্রকাশে। তাই আমার সকল কৃতজ্ঞতার অর্ঘ্য উপাচার তাঁদের জন্যে রইল সংরক্ষিত এ বুকে!
আমার জীবনের এক চিমটি রোদ, এক দৌঁড়ের ক্লান্তিকর দুপুর, একমুঠো শীতবিকেল, মেঘনার এক আঁজলা ঘোলাজল, একবোঝা সুখ-দুঃখ, এক আকাশ রূপোলী চাঁদজোৎস্না, এক পশলা গুমোট মেঘ, এক দিঘী টলটলে সুখবাতাস, এক বৈশ্বিক সূর্যালোক, এক ধোঁয়াশাপূর্ণ নাক্ষত্রিক রাত, এক নদী কলকলে বুক-বাগানের ঝরনাজল, আর আমার মায়ের এক আঁচল ভালবাসায় স্নাত আমার এ জীবনপথের কাব্য গল্পমালা! যা তুলে দিলাম দুই বাংলার বাংলাভাষিক পাঠকদের হাতে।
জাহাঙ্গীর হোসেন
এর গল্পসমগ্র ১ এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। by is now available in boiferry for only TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.