মার্কেজের সাহিত্য বলেন কিংবা আলোচনা দুইটাই বাংলাদেশের জন্যে প্রাসঙ্গিক। দুশ বছর না হলেও কলাম্বিয়া প্রায় সাড়ে চারশ বছর স্প্যানিশদের দ্বারা কলোনাইজড ছিলো। কলোনাইজড হওয়ার যে অভিজ্ঞতা কিংবা রেজাল্ট তার কমবেশি হইলেও অনেকখানি মিল থাকে অন্য কলোনাইজড দেশগুলার সাথে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বাধীনতা লাভের পরও যে একটা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়, সেই দেশে তা মার্কেজ ছোটবেলা থেকেই দেইখা আসছেন। তার মনে হইছে, এই জিনিসগুলারে ইগনোর করা হয়তো ঠিক হবে না এবং তিনি তার উপন্যাসে করেনও নাই। যে রাজনৈতিক আবহাওয়ার ভিতর দিয়া বড় হইছেন তিনি- ড্রাগস, খুন, রাহাজানি, ভোটচুরি সবকিছুকেই তিনি মহাকাব্যিক টোনে টাচ কইরা গেছেন, যে স্পর্শটা আরও মজবুত হইছিলো তার ওয়ান হান্ড্রের্ড ইয়ার্স অফ সলিট্যুড-এ। বাংলাদেশেও ‘সম্ভবত’ পরিস্থিতি খুব একটা আলাদা কিছু না। তবে আমাদের এই দেশে জিনিসগুলা যেমন সাহিত্য করা কিংবা লেখালেখি ধীরে ধীরে এতই কঠিন হয়া উঠতেছে, আমাদের সাহিত্যরে বাইরে রিপ্রেজেন্ট করাটাও সম্ভবত আরও কঠিন হইয়া ঊঠবে। এই কথা বলার যথেষ্ট কারণ আছে। আপনি যখন মার্কেজের লেখাগুলা পড়বেন আপনার মনে হবে কিংবা অন্য কারো লেখা পড়লেও মনে হবে, আরে! এই মার্কেজের মতোই আরও বহুত লেখক আছেন বাংলাদেশে যারা অন্তত ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়া হইলেও বিশ্বমানের কাজ করছেন। মনে হইতে পারে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা শহীদুল জহির কিংবা আরও অনেকজন যাদের ভালো মানের ইংরেজিতে অনুবাদ করা গেলে হয়তো সারভেন্তেসের পরে মার্কেজরে সবাই যেমনে লুফে নিছে, তেমনি রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলাভাষার আরও কয়েকজনরে বিশ্বসাহিত্যের লুফে নিতে অসুবিধা হইতো না। উপন্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের শক্তিমত্তাটা হয়তো আরও একটু ব্যাপক আকারে জানান দেয়া যাইতো। এই জিনিসটা ঘটলে বাংলাদেশিদের ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য করার উদীয়মান যে টেন্ডেন্সি তাও হয়তো কমতো। কারণ, মার্কেজরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তারা স্প্যানিশেই লেখালেখি করার জোর পাইছেন, যেটাতে তাদের স্প্যানিশ ভাষারই বিস্তৃতি বাড়ছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটতে পারতো। আর দিনশেষে, এক ভাষার সাথে আরেক ভাষার শব্দ-সাহিত্য অনুবাদ হইলে ভাষা আসলে মারা যায় না, বরং ভাষাগুলাই শক্তিশালী হয়। কালচারাল আদানপ্রদানের এই একটা সুন্দর বৈশিষ্ট্য। লেখালেখির ক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস, এই ফিল্ডটাকে আরও শক্তিশালী কইরা দিছে বলে আমার লাগে, তা বিশেষত ইন্টারনেট-মিডিয়ার জোরে। এখন গড়ে গড়ে লেখক।
যতবেশি কন্টেন্ট, ততবেশি লেখক। আলাদা পার্টিকুলার কোন লেখকের যে অস্তিত্ব তা ধীরে ধীরে হারায়া যাইতেছে, রোলা বার্থের ’৬৭-র যে কথা “লেখক মইরা গেছে”, তা এই দেশে দুই হাজার বিশে আইসা যেন আরও প্রকট হয়া উঠতেছে। অন্তত আপনি যদি একটা ফেসবুক পেজও খুলেন নামমাত্রে, আপনার একটা লেখা দরকার। সবাই লিখতে ব্যস্ত, নট নেসেসারিলি তা সাহিত্য হইতে হবে, একটা কন্টেন্ট থেকে শুরু করে, একটা স্ট্যাটাস, বাংলা, ইংরেজি যাই হোক না কেন, এক্সপ্রেশন বা নিজেরে প্রকাশ করা এত সহজ হয়া উঠছে, নিজের ‘ইমেজ’ কিংবা সবাই যখন নিজেরে ‘লেখক’ ভাবতে আরম্ভ করে তখন সেই ‘লেখক’ পরিচয়টাই ক্যানো জানি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়া উঠে, তখন লেখক আসলে কী লেখছে বা তার লেখা কী তার আর অত গুরুত্ব থাকে না। লেখার থেকে ‘লেখক’ ইমেজটাই মুখ্য হয়া উঠে। আর লাখ লাখ ইমেজের ভিড়ে যেমন কোন ইমেজরেই আলাদা কইরা চিনা যায় না, তেমনি কোন লেখকরেও আলাদা কইরা চিনা যায় না। এইরকমই ক্রাইসিসে এখনও আমরা পুরাপুরি পড়ি নাই বরং বলা চলে ধীরে ধীরে আগাইতেছি। একটা টাইমে লেখার আসলে তেমন কোন গুরুত্ব থাকবে না। টেক্সটের সংজ্ঞা খুব দ্রুতই পাল্টাতে শুরু করছে। সবকিছুই ধীরে ধীরে ‘লেখা’ হইয়া উঠতেছে। তবে আপনি যদি লেখারে একটা “কনজ্যুমার প্রোডাক্ট” হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন তবে সেইটার টিকে থাকার সম্ভাবনা বহুগুণে বাইড়া যাবে। লেখার নিজের টিকে থাকার তাগিদেই লেখার সাথে রয়ালিটি যুক্ত হবে, আর্থিক মূল্য যুক্ত হবে, এবং যা শুরু হইতেছেও এবং যেইটার প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে, পড়তেছে, পড়বে এবং যেইটা মার্কেজ তার আশপাশের তরুণদের মধ্যে দেখছেন, যেইটা নিয়া তিনি খেদও প্রকাশ করছেন, যেই কারণে তার শেষের দিকের লেখাগুলা লিখতে খুব কঠিনই লাগতো।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এর ইন্টারভিউ সিরিজ ১১ (গাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজ) এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 100 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Interview Series 11 (Gabriela García Márquez) by Gabriel Garcia Marquezis now available in boiferry for only 100 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.