ইবনে খালদুন এবং তাঁর অমর গ্রন্থ ‘মুকাদ্দিমা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত এক নাম। এই আধুনিক জমানাতেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উছিলায় বিভিন্ন চেহারায় মধ্যযুগের এই পণ্ডিত আমাদের সামনে হাজির হন। যেমন একেবারে হাল আমলে সাংবাদিক ও গবেষক নুরুল কবির যখন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে [Deposing of a dictator] লিখতে বসেন, তখনও দেখা যাচ্ছে তিনি দুইজন বিখ্যাত মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করছেন : হাওয়ার্ড জিন এবং ইবনে খালদুন। আমরা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাজির করার সময় খালদুনের নাম জপতে দেখেছি। ফলে বােঝাই যাচ্ছে, ইবনে খালদুন একেক জনের কাছে একেক চেহারায় হাজির হতে পারেন। কেউ কেউ তাঁকে ম্যাক্স ওয়েভার, কার্ল মার্ক্স ও দুর্খেইমদের পূর্বসূরি হিসেবে দাবি করেন, কেউ বলেন তিনি গ্রেকোইসলামি দর্শনের মানুষ, কেউ বলেন তিনি সমাজবিজ্ঞানীর জনক, কেউ বলেন তাঁর মধ্যে আদি-মার্ক্সবাদী উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়, কেউ বলেন তিনি আসলে প্রাচ্যবাদের আবিষ্কার ও ফসল, কেউ বলেন তিনি সুফি, কেউ বলেন তিনি আসলে গোঁড়া মুসলমান। ফলে চৌদ্দ শতকের এই পণ্ডিতের নামের সাথে ইতিহাসবেত্তা, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং সর্বোপরি একজন দার্শনিক সব উপাধি জড়িয়ে আছে। তার পরিচয়ের এমন বাহার ও বিচিত্রতা তার কাজকর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে আন্দাজ পেতে সাহায্য করে। ইবনে খালদুনের জীবন-চিন্তা-ভাবনা-দর্শন বিষয়ে রচিত এই গ্রন্থের লেখক রবার্ট আরউইন একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ, ঔপন্যাসিক এবং আরবি সাহিত্য বিশেষজ্ঞ। তিনি একজন প্রাচ্যবাদীও বটে, এবং এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদের ‘অরিয়েন্টালিজম'-এর একজন কড়া সমালােচক। সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদীদের ক্ষমতাবিস্তারের অভিযানে প্রাচ্যবাদের একটা হাতিয়ারসুলভ ভূমিকা ছিল, সাইদের এই দাবির সাথে তিনি একমত নন। বরঞ্চ তিনি মনে করেন সাইদ কিছু ক্ষেত্রে