বাংলাগান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য চেতনা । অতি প্রাচীন এই ধারার প্রবহমানতা আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে মানুষকে যেমন আকৃষ্ট করেছে তেমনি দীর্ঘ স্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে জীবনধারাকে প্রভাবিত করেছে। সংস্কৃতি বিদ্যার মননশীল ধারা হিসেবে বাংলাগান তাই জাতিসত্ত্বার দর্পণ । বৈদিক সংগীতের আলােচনাতে বাঙালিদের নিন্দারছলে পাখির সঙ্গে তুলনার ইঙ্গিত রয়েছে। ৮ম-১০ম শতাব্দীর চর্যাপদ প্রবন্ধগীতি হিসেবে বাঙালির রাগসংগীত ধারার আদি উৎস মানা যায় । রাগ সৃষ্টি, সংগীত-ব্যক্তিত্ব পরম্পরা আঞ্চলিকতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাঙালির রাগসংগীত চর্চার ঐতিহ্য স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু চর্যাগানের বাণীতে লােকজীবন ও সংস্কৃতির স্বচ্ছ ধারণাও পাওয়া যায়। এসকল গানের বাণী থেকে লােকসংগীতের মৌখিক ধারা অনুরূপ চেতনার বিষয়টি যে আরও প্রাচীন তা অনুমান করা যায়। লােকসংগীতের তান্ত্রিকতা ও জীবনবােধের মার্গদর্শন সহজ-সরল সুরে পরিবেশিত হয় যা আধুনিক কালেও অনুসরণীয় । রাগসংগীত এবং লােকসংগীতের মধ্যে ভাব ও ভাষার আদান-প্রদান আদিকাল থেকেই রয়েছে। অভিন্ন স্রোতে মানবিক মূল্যবােধ ও অনুপ্রেরণার বাহন হিসেবে লােকসংগীত বাংলাগানের ধারায় প্রবহমান। লােকসংগীতের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সমাজ জীবনের অঙ্গ হিসেবে নানান প্রতিকুল অবস্থায় টিকে রয়েছে। এই সকল গানে নদী প্রভাবিত জীবন তরঙ্গো আধ্যাত্মিক ও জাগতিক সাধনার আন্তরপ্রেরণা লক্ষ করা যায় । জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাগান সমম্বিত হয়েছে বিভিন্ন তত্ত্ব, জিজ্ঞাসা ও আরাধনার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির মানবিক চেতনা গীত হচ্ছে লােকসংগীত ধারা।