একাত্তরের দিনগুলি বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ
১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে জাহানারা ইমাম একাত্মতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মৃত্যু, দুঃস্বপ্নভরা বিভীষিকার মধ্যে তার ত্যাগ ও সতর্ক সক্রিয়তা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ হয়ে আছে। শহীদ রুমীর মা পরিণত হন শহীদ জননীতে। মুক্তিযুদ্ধে সন্তান বিয়োগের বেদনাবিধুর মাতৃহৃদয় এবং যাতনা মূর্ত হয়েছে তাঁকে কেন্দ্র করে।
গত শতকের নব্বই দশকে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির উত্থানে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় তার পটভূমিতে ১৯ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হলে তিনি আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলন পরিচালনা করেন। তারই নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় গণআদালত।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনোজগতে পৌছে দিয়েছেন তার অধীত জ্ঞান সম্ভার।
Ekattorer Dinguli,Ekattorer Dinguli in boiferry,Ekattorer Dinguli buy online,একাত্তরের দিনগুলি,একাত্তরের দিনগুলি বইফেরীতে,একাত্তরের দিনগুলি অনলাইনে কিনুন,জাহানারা ইমাম এর একাত্তরের দিনগুলি,9789845982306,Ekattorer Dinguli Ebook,Ekattorer Dinguli Ebook in BD,Ekattorer Dinguli Ebook in Dhaka,Ekattorer Dinguli Ebook in Bangladesh,Ekattorer Dinguli Ebook in boiferry,একাত্তরের দিনগুলি ইবুক,একাত্তরের দিনগুলি ইবুক বিডি,একাত্তরের দিনগুলি ইবুক ঢাকায়,একাত্তরের দিনগুলি ইবুক বাংলাদেশে,Ekattorer Dinguli by null
জাহানারা ইমাম এর একাত্তরের দিনগুলি এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 425.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Ekattorer Dinguli by nullis now available in boiferry for only 425.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন |
হার্ডকভার | ৩১২ পাতা |
প্রথম প্রকাশ |
2018-02-01 |
প্রকাশনী |
চারুলিপি প্রকাশন |
ISBN: |
9789845982306 |
ভাষা |
বাংলা |
ক্রেতার পর্যালোচনা
1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা
-
পর্যালোচনা লিখেছেন 'Mijun Uddin Masud'
পটভুমি:বইটি ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে লেখা, যার শুরু ১৯৭১ সালের ১ মার্চ এবং সমাপ্তি সেই বছরের ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা শহরের অবস্থা ও গেরিলা তৎপরতার বাস্তব চিত্র এতে উঠে এসেছে। বইটিতে তার সন্তান শফি ইমাম রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা দেয় এবং তার মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান।
রিভিউ :
#বইটি_ভালো_লাগার_কারণ
একাত্তরের দিনগুলি’ জাহানারা ইমামের লেখা এক অনবদ্য সৃষ্টি, যা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। যার মধ্যে জাহানারা ইমাম তৎকালীন Urban warfare কে দুর্দান্ত ভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনের দুর্ধষ সব অপারেশনকে পাঠকের চোখে জীবন্ত করে তুলেছেন। পাশাপাশি মাতৃ হৃদয়ের স্নেহ,ভালোবাসা,মধ্যবিত্ত জীবনের দৈনন্দিন বিষয়াদি শিল্পনিপুনতার সহিত ফুটিয়ে তুলেছেন পাঠক হৃদয়ের মণিকোঠায় । তাই স্বভাবতই মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের অবগাহন করার আগ্রহ থেকেই আমার বইটির প্রতি ভালো লাগা এবং ভালোবাসা জন্মায়।
#প্রেক্ষাপট_বিশ্লেষণ
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’-তে মার্চ-ডিসেম্বর মাসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং বর্ণিত মাসগুলির মধ্যে ১৬৮ দিনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
এই বইয়ের কাহিনীকে আমরা কয়েকটি স্তরে ভাগ করতে পারি:
(১)মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বাংগালী মধ্যবিত্ত সমাজের সমর্থন
(২)ঢাকা নগরীর চিত্র,পাশাপাশি গ্রামের আংশিক পরোক্ষ চিত্র
(৩) ক্র্যাক প্লাটুনের কাহিনী।
(৪) পারিবারিক বন্ধন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আপামর বাংগালির সমর্থন আমরা বইয়ের পাকিস্তানি ফ্ল্যাগ আর জিন্নাহর ছবি পোড়ানো,লেখক সংগ্রাম শিবির গঠন,জয়নুল আবেদীনের হেলালে ইমতিয়াজ, ডা. মোবারক হোসেনের "তকমা ই পাকিস্তান" উপাধি বর্জন এসবের মাধ্যমে দেখতে পাই।
২২ এপ্রিলের বর্ণনা, ‘বাজারের পরিবেশ মোটেই ভালো লাগলো না।দগ্ধ, বিধ্বস্ত বাজারের মাঝে মাঝে দোকানি লোকগুলো কেমন যেন অস্বাভাবিক নির্বাক বসে আছে। চোখে বাবা দৃষ্টি, সারা বাজার পানিতে থৈ থৈ। জানেন মামী, গতকাল নাকি বিহারিরা ঠাটারি বাজারে কয়েকজন বাঙালী কসাইকে জবাই করেছে।’
এর মাধ্যমে আমরা ঢাকার ভয়াবহ চিত্র উপলব্ধি করি।
ক্র্যাক প্লাটুন খালেদ মোশারফ এর প্রতিষ্ঠিত একটি গেরিলা কমব্যাট টিম,যেটি ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল। নিখুঁত প্ল্যানিং, দুর্দান্ত সাহস আর মোরালিটির কম্বিনেশন ছিল তাঁদের টিমে।
#পছন্দের_চরিত্র
আমার সবচাইতে পছন্দের চরিত্র রুমী।বইয়ের কাহিনীও রুমীকে ঘিরে বহুলাংশে আবর্তিত। লেখিকার ছেলে হিসেবে নয়,বরং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বইয়ে "রুমী" চরিত্রটি কী-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। নৈতিকতার ক্লাইমেক্সে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ বাদ দিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার ফ্যাসিনেশন রুমিকে আমাদের সামনে "সুপার হিরো " হিসেবে উপস্থাপন করে।
আর ঠিক এই ঘটনাটিই বইটিকে কালোত্তীর্ণ করে তুলেছে। "যা দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে" এই লাইনটিই লেখিকাকে সার্থক জননী হিসেবে উপস্থাপন করেছে শুধু রুমীর নয়,সকল শহীদের জননী হিসেবে প্রতিকী আবহ তিনি নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। একারণেই তিনি শহীদ জননী।
#বইটি_সকলের_যে_কারণে_অধ্যয়ন_করা_উচিত
বইয়ের শেষ দিকে সেপ্টেম্বরের যখন ইয়াহিয়া খান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তখন শরীফ ইমাম ছেলের জন্য পাপীদের কাছে প্রানভিক্ষা চাননি লেখিকা। রুমীর জন্য চান নি প্রানভিক্ষা। এই ঘটনাকে বইটি শুধু কালোর্ত্তীণ নয়,আমার মতে সকল দেশের সকল সময়ের অন্যতম সেরা দিনলিপির স্বীকৃতি এনে দেয়। বাংলা সাহিত্যের এই অমুল্য রত্ন তাই সকলেরই অধ্যয়ন করা উচিত বলে মনে করি।
তাই-
"স্বাধীনতা তুমি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি”
এই লাইন দুটিই বইটির পুরো পটভুমিকে তুলে আনে। স্বাধীনতার মাতৃরুপকে আমাদের সামনে উন্মোচন করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের আবহে আমাদের ৭১ এর চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে।
June 30, 2022
লেখকের জীবনী
জাহানারা ইমাম (Jahanara Imam)
শহীদ জননী হিসেবে অধিক পরিচিত জাহানারা ইমাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অনন্য নাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও তার বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক হিসেবে বাংলাদেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের মাঝে তিনি অন্যতম। জাহানারা ইমামের জন্ম অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায়, ১৯২৯ সালের ৩ মে। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হলেও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা আবদুল আলী তাকে পড়ালেখা করান। পরবর্তীতে পুরকৌশলী স্বামী শরীফ ইমামও তাঁর পড়ালেখায় উৎসাহ যোগান। ১৯৪৫ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন। চাকরিজীবন শুরু করেন বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্কলার এই কৃতি নারী ষাটের দশকের ঢাকার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মহলে তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্য ছিলেন সুপরিচিত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমী ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। অসম্ভব মেধাবী রুমী তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেছে নিলে তিনি তাকে অনুপ্রেরণা যোগান ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গোপনে সাহায্য করে চলেন যোদ্ধাদের। যুদ্ধে রুমী ধরা পড়লেও তাঁর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি ও তাঁর স্বামী ক্ষমা চাইতে রাজি হননি ঘাতকদের কাছে। তিনি এই যুদ্ধ চলাকালে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত দিনলিপি, যা পরবর্তীতে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নামে প্রকাশিত হয় এবং বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত জাহানারা ইমাম এর বই সমগ্র পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে, এর একটি বড় কারণ হলো তাঁর রচনার হৃদয়গ্রাহীতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে তোলেন ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক কর্মীবৃন্দ, তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় সমর্থনে গড়ে তোলেন গণ আদালত। জাহানারা ইমাম এর বই সমূহ হলো ‘অন্য জীবন’, ‘গজকচ্ছপ (শিশুতোষ)’, ‘সাতটি তারার ঝিকিমিকি (শিশুতোষ)’, ‘ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস’, ‘প্রবাসের দিনলিপি’ ইত্যাদি। মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মিশিগানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।