আমাদের গল্পের শুরুটা মাঝ হেমন্তের শহুরে সকাল দিয়ে। ভাের-সকালে বাতাসের গন্ধটা ভালাে লাগে ওর। চারপাশের জীবনগুলাে যখন ঘুমের শেষ অধ্যায়টা শুরু করে, ও তখন বিছানার আয়েশি উষ্ণতা ছেড়ে ছাদে এসে দাঁড়ায়। তবে রােজ যে সকালে ওঠা হয় এমনটা নয়। ভােরের আলাে ফুটতে তখনাে অনেক দেরী। ছাদে এসে দুহাতে চোখের ঘুম ভাঙে রাহাত। সকালের ঘুমটা ওর খুব প্রিয়। তাই চেষ্টা করেও ঘুমের ঘাের পুরােপুরি কাটেনা। প্রকান্ড একটা হাই মুখে নিয়ে ছাদের শ্যাওলা ধরা রেলিংয়ে সতর্ক হাতে ভর দিয়ে দাঁড়ায় ও। চোখ দু'টো বড় বড় করে গুরুমস্তিষ্কের আলসেমি ভাঙানাের প্রাণন্ত চেষ্টা চালায়। সভ্য এ শহরে গাছপালা তেমন একটা নেই। তবু শেষ কার্তিকের এই হীম হীম সকালে একরাশ মিষ্টি বাতাস ছুঁয়ে যায় ওকে। এই বাতাসটাই যত ভালােলাগার কারণ। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সেগুন গাছটা একটু দুলে ওঠে যেন। পাশেই ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া পুরনাে একটা চেয়ার। পায়ের ওপর পা মুড়ে আয়েশ নিয়ে ওতে বসে রাহাত। | ছাদটা পুরনাে হলেও বেশ গুছানাে। এক কোণে রাহাতের চিলেকোঠার ঘর। বাকি ছাদটা জুড়ে পেয়ারা, কমলালেবু, আঙুর, তুলসি, এ্যালােভেরা, পুদিনা, বেলি, জবা, নাম না জানা বর্ণিল পাতাবাহার, মেহেদী, জামরুল গাছে ভরা। প্লাস্টিকের ড্রাম কেটে লাগানাে হয়েছে ওগুলাে। সিড়ি ঘরটার ছাদে তিনুলার একটা কাঠের ফ্রেম। কয়েকটা কবুতর পরিবারের বসবাস ওতে। একটা লােহার সিড়ি কোমর বাঁকিয়ে উঠে গেছে ওই ছাদটা পর্যন্ত।