বিস্ময়পীড়িত মনে অজস্র প্রশ্নের আকুলি। আপন পরিবেশকে ঘিরে মানব মনে অনন্ত 6িাসা আমি কে? 'আমি কোথা থেকে এসেছি? আমি কোথায় যাব? এ জগতে আমার স্থান কোথায়? 'আমার করণীয় কি? এসব মূলগত প্রশ্ন সাহিত্য ও দর্শন দু'য়েরই উপজীব্য বিষয়। বিস্ময় থেকে দর্শন ও সাহিত্যের জন্য হলেও অকপট বিস্ময়ে তা চিরকাল সীমিত থাকেনি, মানব চেতনার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে তা সবিস্ময় সংশয় ও সমালোচনার পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। বিস্ময়ের আমেজ চিরদিনই সৃষ্টির পশ্চাতে কাজ করেছে, কেননা বিস্ময়াচ্ছন্ন মনে এক অস্বস্তি সৃষ্টি করে আমাদের কার্যে প্ররােচিত করে। সংশয় ও সমালােচনা ও বিস্ময়-পথের বিভিন্ন বাঁক, জিজ্ঞাসা-স্তরের বিভিন্ন হাতিয়ার। প্রাচীনকালের দর্শনে দেখি বিস্ময়াহত মানুষ প্রজ্ঞার অপরিসীম শক্তিতে বিশ্বাস। করে জীবনজগৎকে জানবার চেষ্টা করছে, নীতি, রাজনীতি ও ওয়ান-নীতিকে বুঝবার প্রয়াস পাচ্ছে। মধ্যযুগে প্রজ্ঞা ও প্রত্যাদেশ, কর্ম ও বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে প্রত্যাদেশ ও বিশ্বাসই প্রভুত্ব করেছে। আধুনিক যুগের দর্শনে প্রতিষ্ঠিত বিধিনিষেধের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে প্রবল সংশয়, প্রজ্ঞার সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে সুতীক্ষ্ণ সমালােচনা, সাম্প্রতিককালের দর্শনে সবকিছু ছাপিয়ে মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠা, ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্থাৎ, মানববাদ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সাহিত্যের দিকে নজর দিলেও আমরা দেখব প্রাচীন সাহিত্যে : হােমারের ‘ইলিয়াড ও ওডেসি'; বাল্মিকীর 'রামায়ণ' ও ব্যাসের 'মহাভারত' প্রভৃতি সুপ্রাচীন গ্রন্থে মানুষ দেবদেবীদের ক্রিয়াকলাপে, জগতের নৈসর্গিক রূপে বিমােহিত, নির্বাক। নিঃসংশয়ে মানুষ বিরাটের কাছে মস্তক নত করেছে, সম্পূর্ণ ভীতিবিহ্বল না হলেও শ্রদ্ধাজড়িত কণ্ঠে ফরিয়াদ ক্ষুরিত হয়নি। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে ধর্মাধ্যুষিত, সামন্ত শাসিত, নিয়তির প্রভাবপুষ্ট জীবনের চিত্র পাওয়া যায়। মধ্যযুগের সাহিত্যে মরমিবাদের উত্তুঙ্গ আধ্যাত্মিকতা তার ঘাটতি অনেকটা পূর্ণ করেছে। আধুনিক যুগে নব চেতনার যে উন্মেষ ঘটেছে, তা আজও অজস্র ধারায় সাহিত্যে বহমান। বিচিত্র চেতনার ঐতিহ্যবাহী ইংরেজি সাহিত্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, প্রাচীন যুগে বিগ্রহ গাথামূলক কাব্য, মধ্যযুগের ধর্মমূলক অনুবাদ গ্রন্থ ও কাব্য, আধুনিক যুগে রেনেসাঁর আর্তিতে প্রােজ্জ্বল। এ যুগে নতুন চেতনা নতুন রূপায়ণে নিবেদিত।