সূক্ষ্ম, তীক্ষ্ণ সংবেদনশীল চিত্ত জীবনকে যেভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার আলােড়নকে হৃদয়ে ধারণ করে, তা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই প্রবণতা দ্বারা যারা আচ্ছন্ন ও আবিষ্ট তারা শিল্পের কোনাে মাধ্যমকে তীব্র তেজে আঁকড়ে না-ধরে বাঁচতে পারেন না। কারণ আত্তীকৃত অনুভূতি ও অভিজ্ঞান প্রকাশের তাড়না তাদের অস্থির করে রাখে। এই পরিপার্শ্বকে আস্বাদন, আত্তীকরণ ও পুনরুৎপাদনের জন্য সাম্মি ইসলাম নীলার অদ্বয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে কবিতা। ধীরে এসাে বসন্ত এই বাস্তবতাকেই মূর্ত করে তুলেছে। কুয়াশার তােড়ে ভেসে যাওয়া ডাকনাম, মুখর গানের মঞ্চের অন্তর্গত নৈঃশব্দ্য, পুরনাে দেয়ালঘড়ি বা অতিক্রান্ত কালপর্ব থেকে আলগােছে উঠে আসা পিতৃসান্নিধ্যের আবছায়া ও আশ্বাস নীলার কবিতায় একাত্ম হয়ে পাঠকমনে অপূর্ব এক শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। | জীবন-পর্যবেক্ষণের ধারালাে গভীরতা প্রায় সর্বপরিব্যাপ্ত এক মহিমা নিয়ে বিন্যস্ত হয়ে থাকে সাম্মি ইসলাম নীলার কবিতায়। মনুষ্যচৈতন্যে ছড়িয়ে থাকা প্রসারিত বিষাদের যে ধূসরতা— তা কতটা অনুভব করতে পারে পরিপার্শ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রকৃতি ও তার অনুষঙ্গ, এই ভাবনা তাঁকে ব্যাকুল করে তােলে। প্রিয়তম ফড়িং তার ক্ষুদ্র চোখে কতটা দেখতে পায় যাবতীয় হাহাকার'—এই ভাবনায় কবি উৎকণ্ঠ। জীবন ও মৃত্যু, মধ্যবর্তী কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে মুদ্রিত হতে থাকে নীলার কবিতা-পরম্পরায়। জটিল জীবনকে সহজভাবে অনুধাবনের সামর্থ্য তাঁর কবিতায় একটি নির্ভার কিন্তু নির্ভরশীল আবহ সৃষ্টি করে। চেনাজানা নিত্যব্যবহার্য শব্দপুঞ্জে গুঞ্জরিত হয় অমায়িক কাব্যব্যঞ্জনা।