অনেক গুণে গুণান্বিত এক মানুষ রফিকুর রশীদ। তিনি শিশুসাহিত্যিক, কথাসাহিত্যিক, কবি, ছড়াশিল্পী, সুবক্তা। কলেজে অধ্যাপনায় রয়েছে তাঁর বিপুল সুখ্যাতি। সাহিত্যাঙ্গনে অভিযাত্রা ছড়ার হাত ধরে, সেই সত্তর দশকের গোড়ায়। ক্রমে কথাসাহিত্যের মধুর-মোহন জীবন-ঘনিষ্ঠতা ও সুপরিসর আঙ্গিক-সৌষ্ঠব প্রবলভাবে মাতিয়ে তোলে তাঁকে।
এই সহজাত মানসপ্রবণতার টানে কথাসাহিত্যের বিশাল প্রান্তরে নিরন্তর পরিভ্রমণের পরও তাঁর ছড়া-প্রেমে এতটুকু ভাটা পড়েনি।
ছড়া তিনি লিখেছেন অনিয়মিতভাবে নিয়মিত, নিবিড় আবেগে আর ভালোবাসায়; লিখেছেন কিশোরকবিতাও। কথাসাহিত্যচর্চার পাশাপাশি লিখলেও তাঁর ছড়া-কবিতার ভাষা বিন্দুমাত্র আড়ষ্ট গদ্যাক্রন্ত নয়; বরং সাবলীল, বিশুদ্ধ অন্ত্যমিলযুক্ত ছন্দ-নিপুণ, প্রাণবন্ত ও আবেদনময়ী। রফিকুর রশীদের ছড়া-কবিতার সব চাইতে কুশলী বৈশিষ্ট্য হলো নানা চমকপ্রদ ভাবনার বিস্তার, প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে নিয়ে যাওয়ার চমৎকারিত্ব।
এই অপূর্ব রচনা-কৌশলের জন্য তাঁর ছড়া-কবিতার স্বাদ একেবারে স্বতন্ত্র। তাঁর ছড়া-কবিতার বিষয়-বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্যের দিকটিও উল্লেখের দাবি রাখে। নির্মল হাসি-আনন্দের সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে তিনি উপজীব্য করেছেন সমকালীন ও চিরায়ত বিষয়-অনুষঙ্গকে। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহিদ নূর হোসেনকে কেন্দ্র করে তিনি পুরো একটি ছড়া-কবিতার বই লিখেছেন। লিখেছেন দীর্ঘ ছড়াও। বিরল বিচিত্র বিষয়ে অনবদ্য দীর্ঘ ছড়ার বই হিসেবে তাঁর ‘ভাষার লড়াই ছড়ায় ছড়াই’, ‘মশকরানির মন্ত্রিসভায়’ এবং ‘জন্মদিনের ছড়া’ বই তিনটি বাংলা ছড়াসাহিত্যে যুগ যুগ সমাদৃত হবে। কথাশিল্পী পরিচয়ের কাছে রফিকুর রশীদের ছড়াশিল্পী পরিচয় কখনো আড়াল হওয়ার নয়। ছড়াসংগ্রহ প্রকাশের শুভক্ষণে তাঁকে শ্রদ্ধা-অভিনন্দন।