বড় ব্যস্ত সময় পার করছি আমরা। একমুহর্তের জন্যও যেন আমাদের ছুটি নেই। এত কাজ, পড়াশােনা, প্রতিযােগিতা। গল্প করে সময় কাটানাের সময় কোথায়? সময়কে কাজে লাগানাের প্রস্তাব ও পরামর্শে ভরপুর আমাদের চারপাশ। কাজেই গল্পের কথায় অনেকেরই মনে হবে, আমরা সময় নষ্ট করার কথা বলছি। আসলে কি তাই? গল্প কি কেবল আমাদের সময়ই নষ্ট করে? গল্প কি কেবল অবসরযাপনের নিরীহ ও আনন্দঘন আয়ােজন? এই প্রশ্নগুলােই কেবল মাথার ভেতরে জলের মতাে ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়।। আজকের শিশুরা এমনভাবে বেড়ে উঠছে যে ভবিষ্যতের শিশুদের কাছে বলার মতাে কোনাে শৈশব তারা নির্মাণ করতে পারছে না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। পরিণত মানুষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের যে ফল, তা তাে এই শিশুদেরই ভােগ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনাে পথই কি খােলা নেই? শিশু-কিশােরদের হাতে কি আমরা এমন কিছু তুলে দিতে পারি না, যা তার স্বপ্ন ও কল্পপ্রতিভার ডালপালা বিস্তারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে? আমাদের পরিবার-কাঠামােয় বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। মাবাবা, ভাই-বােন, দাদা-দাদিসহ নানা নিকটাত্মীয় নিয়ে যৌথ পরিবারের গল্পগুলােও আজকের শিশু-কিশােরদের কাছে রূপকথার গল্প বলে মনে হয়। কর্মজীবী মা ও বাবার সান্নিধ্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এই যুগের শিশুরা। সন্তানদের মানুষ করার নামে তাদের ওপর বিচিত্র নিষেধাজ্ঞার যে বােঝা আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি, তাতে মানুষ হওয়ার স্বপ্নগুলােও দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। শিশুদের সময় দিতে হবে। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে হবে। তাদের অভিভাবকই শুধু নয়, বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেটুকু সময় তারা ছােটদের জন্য ব্যয় করবেন, সেই সময়টুকু যাতে আনন্দঘন হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের হাতে তুলে দিতে হবে সাহিত্যের এমন কিছু কালজয়ী রচনা, যা পাঠ করে সে তার কল্পনাপ্রতিভাকে অবাধ ও উন্মুক্ত করতে পারে। রূপকথা, লােককথার রঙিন ভুবনে ঘুরে বেড়ানাের মতাে একটি মন যেন শিশুদের মধ্যে সক্রিয় থাকে, সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বপ্ন দেখার শক্তি হারিয়ে ফেললে বড় মানুষ কিংবা ভালাে মানুষ হওয়ার সব আশাই যে মাঠে মারা যাবে। শিশু-কিশােরদের মনে এই বােধ জাগ্রত করতে হবে যে মানুষকে স্বপ্ন দেখতে হয় এবং একজন মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।