Loading...

বউ ঠাকুরানীর হাট (হার্ডকভার)

স্টক:

১০০.০০

একসাথে কেনেন

রাত্রি অনেক হইয়াছে। গ্রীষ্মকাল। বাতাস বন্ধ হইয়া গিয়াছে। গাছের পাতাটিও নড়িতেছে না। যশােহরের যুবরাজ, প্রতাপাদিত্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র, উদয়াদিত্য তাঁহার শয়নগৃহের বাতায়নে বসিয়া আছেন। তাঁহার পার্শ্বে তাঁহার স্ত্রী সুরমা। সুরমা কহিলেন, “প্রিয়তম, সহ্য করিয়া থাকো, ধৈর্য ধরিয়া থাকো। একদিন সুখের দিন আসিবে।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি তাে আর কোনাে সুখ চাই না। আমি চাই, আমি রাজপ্রাসাদে না যদি জন্মাইতাম, যুবরাজ না যদি হইতাম, যশােহর-অধিপতির ক্ষুদ্রতম তুচ্ছতম প্রজার প্রজা হইতাম, তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র, তাঁহার সিংহাসনের তাঁহার সমস্ত ধন মান যশ প্রভাব গৌরবের একমাত্র উত্তরাধিকারী না হইতাম ! কী তপস্যা করিলে এ-সমস্ত অতীত উল্টাইয়া যাইতে পারে।” সুরমা অতি কাতর হইয়া যুবরাজের দক্ষিণ হস্ত দুই হাতে লইয়া চাপিয়া ধরিলেন, ও তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া ধীরে ধীরে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন। যুবরাজের ইচ্ছা পুরাইতে প্রাণ দিতে পারেন, কিন্তু প্রাণ দিলেও এই ইচ্ছা পুরাইতে পারিবেন না, এই দুঃখ।। যুবরাজ কহিলেন, “সুরমা, রাজার ঘরে জন্মিয়াছি বলিয়াই সুখী হইতে পারিলাম না। রাজার ঘরে সকলে বুঝি কেবল উত্তরাধিকারী হইয়া জন্মায়, সন্তান হইয়া জন্মায় না। পিতা ছেলেবেলা হইতেই আমাকে প্রতিমুহূর্তে পরখ করিয়া দেখিতেছেন, আমি তাঁহার উপার্জিত যশােমান বজায় রাখিতে পারিব কি না, বংশের মুখ উজ্জ্বল করিতে পারিব কি না, রাজ্যের গুরুভার বহন করিতে পারিব কি না। আমার প্রতি কাৰ্য, প্রতি অঙ্গভঙ্গী তিনি পরীক্ষার চক্ষে দেখিয়া আসিতেছেন, স্নেহের চক্ষে নহে। আত্মীয়বর্গ, মন্ত্রী, রাজসভাসদগণ, প্রজারা আমার প্রতি কথা প্রতি কাজ খুটিয়া খুটিয়া লইয়া আমার ভবিষ্যৎ গণনা করিয়া আসিতেছে। সকলেই ঘাড় নাড়িয়া কহিল-- না, আমার দ্বারা এ বিপদে রাজ্য রক্ষা হইবে না। আমি নির্বোধ, আমি কিছুই বুঝিতে পারি না। সকলেই আমাকে অবহেলা করিতে লাগিল, পিতা আমাকে ঘৃণা করিতে লাগিলেন। আমার আশা একেবারে পরিত্যাগ করিলেন। একবার খোজও লইতেন না।। সুরমার চক্ষে জল আসিল। সে কহিল, “আহা ! কেমন করিয়া পারিত।” তাহার দুঃখ হইল, তাহার রাগ হইল, সে কহিল, “তােমাকে যাহারা নির্বোধ মনে করিত তাহারাই নির্বোধ।” উদয়াদিত্য ঈষৎ হাসিলেন, সুরমার চিবুক ধরিয়া তাহার রােসে আরক্তিম মুখখানি নাড়িয়া দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “না, সুরমা, সত্য সত্যই আমার রাজ্যশাসনের বুদ্ধি নাই। তাহার যথেষ্ট পরীক্ষা হইয়া গেছে। আমার যখন ষােল বৎসর বয়স, তখন মহারাজ কাজ শিখাইবার জন্য হােসেনখালি পরগনার ভার আমার হাতে সমর্পণ। করেন। ছয় মাসের মধ্যেই বিষম বিশৃঙ্খলা ঘটিতে লাগিল। খাজনা কমিয়া গেল, প্রজারা আশীর্বাদ করিতে লাগিল। কর্মচারীরা আমার বিরুদ্ধে রাজার নিকটে অভিযােগ করিতে লাগিল।। রাজসভার সকলেরই মত হইল, যুবরাজ প্রজাদের যখন অত প্রিয়পাত্র হইয়া পড়িয়াছেন, তখনই বুঝা যাইতেছে উহার দ্বারা রাজ্যশাসন কখনাে ঘটিতে পারিবে না। সেই অবধি মহারাজ আমার পানে আর বড়াে একটা তাকাইতেন না। বলিতেন-- ও কুলাঙ্গার ঠিক রায়গড়ের খুড়া বসন্ত রায়ের মতাে হইবে, সেতার বাজাইয়া নাচিয়া বেড়াইবে ও রাজ্য অধঃপাতে দিবে।” সুরমা আবার কহিলেন, “প্রিয়তম, সহ্য করিয়া থাকো, ধৈর্য ধরিয়া থাকো। হাজার হউন, পিতা তাে বটেন। আজকাল রাজ্যউপার্জন, রাজ্যবৃদ্ধির একমাত্র দুরাশায় তাহার সমস্ত হৃদয় পূর্ণ রহিয়াছে, সেখানে স্নেহের ঠাই নাই। যতই তাহার আশা পূর্ণ হইতে থাকিবে, ততই তাঁহার স্নেহের রাজ্য বাড়িতে থাকিবে।” যুবরাজ কহিলেন, “সুরমা, তােমার বুদ্ধি তীক্ষম, দূরদর্শী, কিন্তু এইবারে তুমি ভুল বুঝিয়াছ। এক তাে আশার শেষ নাই ; দ্বিতীয়ত, পিতার রাজ্যের সীমা যতই বাড়িতে থাকিবে, রাজ্য যতই লাভ করিতে থাকিবেন, ততই তাহা হারাইবার ভয় তাঁহার মনে বাড়িতে থাকিবে ; রাজকার্য যতই গুরুতর হইয়া উঠিবে, ততই আমাকে তাহার অনুপযুক্ত মনে করিবেন।” সুরমা ভুল বুঝে নাই, ভুল বিশ্বাস করিত মাত্র ; বিশ্বাস বুদ্ধিকেও লঙ্ঘন করে। সে একমনে আশা করিত, এইরূপই যেন হয়। “চারিদিকে কোথাও বা কৃপাদৃষ্টি কোথাও বা অবহেলা সহ্য করিতে না পারিয়া আমি মাঝে মাঝে পলাইয়া রায়গড়ে দাদামহাশয়ের কাছে যাইতাম। পিতা বড়াে একটা খোঁজ লইতেন না। আঃ, সে কী পরিবর্তন। সেখানে গাছপালা দেখিতে পাইতাম, গ্রামবাসীদের কুটিরে যাইতে পারিতাম, দিবানিশি রাজবেশ পরিয়া থাকিতে হইত না। তাহা ছাড়া জান তাে, যেখানে দাদামহাশয় থাকেন, তাহার ত্রিসীমায় বিষাদ ভাবনা বা কঠোর গাম্ভীর্য তিষ্ঠিতে পারে না। গাহিয়া বাজাইয়া, আমােদ করিয়া চারিদিক পূর্ণ। করিয়া রাখেন। চারিদিকে উল্লাস, সদ্ভাব, শান্তি। সেইখানে গেলেই আমি ভুলিয়া যাইতাম যে, আমি যশােহরের যুবরাজ। সে কী আরামের ভুল। অবশেষে আমার বয়স যখন আঠারাে বৎসর, একদিন রায়গড়ে বসন্তের বাতাস বহিতেছিল, চারিদিকে সবুজ কুঞ্জবন, সেই বসন্তে আমি রুকিমণীকে দেখিলাম।” সুরমা বলিয়া উঠিল, “ও-কথা অনেক বার শুনিয়াছি।”
Bou Thakurranir Hat,Bou Thakurranir Hat in boiferry,Bou Thakurranir Hat buy online,Bou Thakurranir Hat by Rabindranath Tagore,বউ ঠাকুরানীর হাট,বউ ঠাকুরানীর হাট বইফেরীতে,বউ ঠাকুরানীর হাট অনলাইনে কিনুন,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বউ ঠাকুরানীর হাট,Bou Thakurranir Hat Ebook,Bou Thakurranir Hat Ebook in BD,Bou Thakurranir Hat Ebook in Dhaka,Bou Thakurranir Hat Ebook in Bangladesh,Bou Thakurranir Hat Ebook in boiferry,বউ ঠাকুরানীর হাট ইবুক,বউ ঠাকুরানীর হাট ইবুক বিডি,বউ ঠাকুরানীর হাট ইবুক ঢাকায়,বউ ঠাকুরানীর হাট ইবুক বাংলাদেশে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বউ ঠাকুরানীর হাট এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 100 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Bou Thakurranir Hat by Rabindranath Tagoreis now available in boiferry for only 100 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৭৩ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2022-11-07
প্রকাশনী উইনার্স বাজার
ISBN:
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লেখকের জীবনী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।

সংশ্লিষ্ট বই