চৈত্রের দুপুর, রােদুরেরও অন্ত নাই, উত্তাপেরও সীমা নাই। নিস্তব্ধ আকাশ, দূরে কোথাও কাক ডাকিলে, ভাবে বােধ হয়—এই বুঝি আকাশটা চটের মত চট করিয়া চিড়ে যায়। কৃষাণেরা মুগুর হাতে মৃত্তিকার ঢেলা মারিয়া ক্ষেত্র বপননাপােযােগী করিয়া লইবার জন্য মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে। চৈত্র দুইয়া বীজ না রােপণ করিতে পারিলে মা লক্ষ্মী ধরা দিবেন কেন? তাই দৈব্যের জন্য যথেষ্ট সময় ছাড়িয়া দিয়া, চৈত্র-সংক্রান্তির গোলযােগের পূর্বেই ক্ষেত্রগুলি উত্তমরূপে নিকাইয়া লইতেছে। একদণ্ড বিশ্রামের অবকাশ নাই। এই পরম রমণীয় সময়টিতে অঞ্জনের উর্বর মস্তিষ্কে হঠাৎ একটি বুদ্ধি আটিয়া গেল। সে অনেক বুদ্ধি খরচ করিয়া ইহাই স্থির করিল, আর দেরী করা চলে না— নহিলে বাচ্চাগুলি উড়িয়া যায়। অঞ্জন শ্লেট পেন্সিল ছাড়িয়া, বই খাতা গুছাইয়া, হাকাইতে হাকাইতে ক্ষেত্ৰনাথ বাবুর বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। বিজয় সবে স্নানের পর ভেজা কাপড় ছাড়িয়া কেশ মুছিতে ছিল। অঞ্জন গবাক্ষপথে বিজয়কে ডাকিয়া কহিল, “বিজয়া! জলদি আয়।" | বিজয়া অঞ্জনের ব্যস্ততায় উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিল, “কেন, অঞ্জন দা?" অঞ্জন আরও অধির হইয়া কহিল, “ধ্যাৎ, তােরে নিয়ে কিছু হবে না। তুই এমন মন ভােলা না, কিছুই মনে রাখতে পারিস না।” সহসা বিজয়া অঞ্জনের উদ্বিগ্নের প্রাবল্য বুঝিতে না পারিয়া তাহার দিকে জিজ্ঞাসুনেত্রে অপলক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিল। অঞ্জন পুনঃরপি কহিল, "মনে নাই, আজ অপরাহ্নে চড়ুইভাতি?” | বিজয়া এতক্ষণে অঞ্জনের উৎকণ্ঠার হেতু বুঝিতে পারিয়া স্বকাতর লজ্জিত হইয়া বলিল, “এ ভগবান! মানুষ এমন বৃরাে মন ভুলাও হয়!” এই বলিয়া | দ্রুতপদে গৃহ ত্যাগ করিয়া বাহির হইয়া আসিল।