‘যােগ্যতমের বাঁচার অধিকারপৃথিবীর সর্বত্র স্বীকৃত। এটা শুধু প্রাকৃতিক বিধান বলে নয়, মানবিক বিধানেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রকৃতিকে জয় করা, আপন প্রয়ােজনে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা নিয়েই মানব সমাজ ও সভ্যতার জয়যাত্রা। প্রকৃতি তবু মানুষের ওপর তার অধিকার ছাড়েনি। মােগ্যতমের বাঁচার অধিকারের প্রশ্নটি তাই দেশে দেশে এখনাে প্রকৃতি ও পুরুষে সমভাবেই উপস্থিত। পুরুষ যখন প্রকৃতির ওপর আপন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তখন পুরুষােচিত প্রয়ােজনটাই হয়ে দাঁড়ায় মাপকাঠি, প্রকৃতির মধ্যে বাঁচার অধিকার কার আছে, কার নেই। একজন কৃষক যখন শস্যক্ষেত্রে আগাছা উৎপাটন করে তখন সে বড় শক্ত সুঠাম সুন্দর গাছগুলাে রেখে ছােট চিকন পাতলা ও দুর্বল গাছগুলাে তুলে ফেলে দেয়। গাছগুলাের মরা-বাচার প্রশ্নটি কিংবা অধিকারঅনধিকারের তর্কটি ঢেকে রাখতে পারেন জমির মালিক। আবার বাগানের মালী যখন গাছ পালার মাথা ছাঁটা' করে—তখন মাথা বাড়তি গাছগুলােরই মাথা যায় কাটা, ছােটমাথার কেউ কাচির আঁচড়টি খোজ পায় না। মানুষের সমাজে কবে কোন কালে আগাছা উৎপাটন আর মাথাছাটার কাজ শুরু হয়েছে—তার দিন তারিখ সঠিক নির্ণয়ের উপায় নেই। তবে পৃথিবীর সব দেশের মানব সমাজেই ঐ আগাছা উৎপাটন ও মাথাছাটার ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সমাজ জীবনে বর্ণবিভাজন ও বৃত্তি নির্ধারণ জনিত শ্রেণীভেদ সৃষ্টির দায়টা কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রের এবং মৌর্য শাসনব্যবস্থার ওপরই চাপানাে হয়। বর্তমানে ভেদবৈষম্যের অস্তিত্ব থাকলেও সামাজিক অচলায়তন আগের মত পাষাণ-কঠোর অবস্থায় নেই; সামাজিক চলনশীলতা (social mobility) ভেদ-বৈষম্যের প্রাচীরে নিশ্চিত ফাটল সৃষ্টি করে সামাজিক অগ্রগতির একটা সুন্ন পথ নির্মাণ