পণ্ডিতগণ বলেন, অনাদিকাল থেকে সংগীত প্রচলিত আছে। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন ড, উইলার্ডের লিখিত গ্রন্থে আছে, “ভাষাতত্ত্ববিদ দাশনিকরা একত্রিত হয়ে এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মানুষের ভাষা সৃষ্টির পূর্বেই সঙ্গীতের উদ্ভব হয়েছে।" | সংগীত যে জীবের স্বভাব-ধর্ম তার প্রমাণ আমরা সব ক্ষেত্রে পেয়ে থাকি। মানুষ ছাড়া প্রত্যেক পশু-পাখির স্বরে সুর ও ছন্দের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। | অনেক প্রাণী কণ্ঠস্বর দ্বারা স্ত্রী জাতির মহাকর্ষণ করতাে। আদি মানব গােষ্ঠী এসব প্রাণীর কণ্ঠস্বর অনুধাবন করতে পারতাে। পরবর্তীতে তাদের মনােহর ধ্বনির বিশেষ মানবীয় চর্চা দ্বারা উৎকর্ষতা পেয়ে কণ্ঠসংগীত নানা বিদ্যায় পরিণত হয়েছে। সঙ্গীতের আদিযুগ হলাে বৈদিক যুগ। সে সময়ে সংগীত সম্বন্ধে পণ্ডিতরা উল্লেখ করেছেন সাম্পান এর কথা। অর্থাৎ সামিক যুগে মাত্র তিনটি স্বর দিয়ে সামূগান করা হতাে। এই তিনটি স্বরকে উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত নামে অভিহিত করা হতাে। পরবর্তীকালে সংগীতগুণীরা বলেন উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিতের মতােই সাতটি স্বরের সমন্বয় পাওয়া যায়। যেমন : উদাত্ত স্বরের অন্তর্গত ছিল গান্ধার ও নিষাদ, অনুদাত্রের অন্তর্গত ছিল ঋষভ ও ধৈবত এবং স্বরিত স্বরের অন্তর্গত ছিল ষড়জ, মধ্যম ও পঞ্চম। পণ্ডিতরা মনে করেন এই তিনটি আদিস্বর থেকেই পরবর্তীকালে সাতটি স্বরের উদ্ভব ঘটেছে। প্রাচীনকালে সাগান প্রধানত যজ্ঞানুষ্ঠানে গাওয়া হতাে। সংগীত বলতে আমরা বুঝি গীতবাদ্য-নৃত্য- এই তিনটি কলার একত্রিত সমন্বয়কে। এদের প্রত্যেকের এক-একটি নিজস্ব সত্তা আছে। সে জন্য গীতকে প্রাধান্য দিয়ে তিনটি কলাকে একত্রে সংগীত বলে। কণ্ঠ সঙ্গীতের সহযােগী হলাে বাদ্য এবং বাদ্যের অধীনস্থ হলাে নৃত্য। কাজেই উক্ত তিনটি কলার হৃদয়গ্রাহী সৃষ্টিই হলাে সংগীত।