পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনে সঠিক পন্থা অবলম্বন করে যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। নবী করিম (সা.) কীভাবে ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তা হাতে কলমে শিখিয়েছেন। তিনি নিজের কারণে কখনও কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি। কেবল জনগণের জন্যই অপরাধীর ওপর দণ্ড কার্যকর করেছেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মপন্থার আলোকে এটা বলা চলে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে- জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সে হিসেবে সমাজে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করতে কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো হলো-
ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
ভ্রাতৃত্ব হচ্ছে ফুল ও পল্লবে শোভিত এক বরকতপূর্ণ বৃক্ষ, নানাভাবে নিরবধি যা ফলদায়ক। ভ্রাতৃত্বের মৌলভিত্তি হচ্ছে, আল্লাহর উদ্দেশে ভালোবাসা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে যে কল্যাণ নিজের জন্য পছন্দ করে, তার অপর ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে।
প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করা
বিতর্ক করতে হবে সত্য প্রকাশ ও মানুষের প্রতি দয়া-মমতার জন্য। প্রতিপক্ষকে হীন করার উদ্দেশ্যে কিংবা মূর্খ বলার জন্য নয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর রাহমানের বান্দা তারাই যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন বলে- সালাম।’ তাই নবীজিকে হত্যার জন্য হাজার বার যারা চেষ্টা করেছিল বরাবরই তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে আচরণের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জুলুম-অবিচার না করা
যার যা প্রাপ্য তাকে তা না দেওয়া হলো- জুলুম। এটা ব্যক্তির সম্পদ আত্মসাৎ, শারীরিক আক্রমণ বা সম্মানহানির মাধ্যমেও হতে পারে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় বলে বিবেচিত। আল্লাহর হক আদায় না করলে আল্লাহ ক্ষমা করলেও বান্দার হক বিনষ্টকারীকে আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না যার ওপর জুলুম করা হয়েছে- সে ক্ষমা করে দেয়।
সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজের নিষেধ করা
এটা সমাজ সংস্কার ও সংশোধনের অনন্য মাধ্যম। এর মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। যে ব্যক্তি আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক।
ইনসাফ করা
ইসলামের পরিভাষায় ইনসাফ হচ্ছে, কোনো বস্তু তার হকদারদের মধ্যে এমনভাবে বণ্টন করে দেওয়া যাতে কারও ভাগে বিন্দুমাত্র কম বেশি না হয়। দুনিয়ার বুকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার কায়েম নিয়ে আসে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির ফল্গুধারা। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনের সব পর্যায়ে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে ইসলাম সমধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। এমনকি মুসলমানদের সঙ্গে কাফেরদের লেনদেন ও সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইনসাফের নীতিতে অবিচল থাকতে হবে।
দ্বীনী শিক্ষা অর্জন ও প্রচার-প্রসার
দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য যেমন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন, তেমনি দ্বীনের হেফাজতের জন্য এবং দুনিয়ার সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক করার জন্য দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন। কোরআন-সুন্নাহর চর্চা ও অনুসরণের অভাব হলে সমাজের সব অঙ্গনে দুর্নীতি ও অনাচার দেখা দেয়। দেখা দেয় অশান্তি। শিক্ষিত মানুষ পথভ্রষ্ট হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক ঈমান ও খোদাভীতি না থাকলে তা মানুষের ক্ষতি ও অকল্যাণে ব্যবহৃত হয়। মানুষের সব আবিষ্কারকে অর্থপূর্ণ ও কল্যাণমুখী করার জন্যই অপরিহার্য প্রয়োজন ইলমে অহির চর্চা।
আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা পোষণ করা
শত্রু-মিত্রের বিচার না করে সব মানুষ যদি সঠিক পথের অনুসারী হতো তবে হক-বাতিল, ঈমান-কুফর, আল্লাহর বন্ধু এবং শয়তানের বন্ধুর মাঝে কোনো পার্থক্য থাকতো না। তাই বন্ধু নির্বাচন ও শত্রুতা পোষণ আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত।
জবাবদিহিতার মানসিকতা থাকা
মানুষকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশের উপযুক্ত তত্ত্ব-তথ্য, আয়-ব্যয়, হিসাব-নিকাশ ও লেনদেনকে সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য উন্মুক্ত করাই হলো স্বচ্ছতা। ইহকালীন ও পারলৌকিক উভয় জগতে জবাবদিহিতা রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, অন্তত যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে (জবাবদিহি) ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’
আল্লামা সাইয়্যেদ মুজতবা মুসাভী লারী এর আত্মসংশোধন ও সমাজ সংশোধনের কর্মপন্থা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 112.50 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Atto Shongshodhon O Shomaj Songshodhoner Kormopontha by Allama Syed Mujtaba Musavi Lariis now available in boiferry for only 112.50 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.