একজন রহিম মিয়া প্রতিদিন সকালে রমনা পার্কে হাঁটার সময় রহিম মিয়ার একতারার গান শুনে কিছুটা হলেও মনে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে যায়। একসময় তার সম্পর্কে জানার জন্য কৌতুহলী হয়ে উঠি। একদিন হাটা শেষ করে রহিম মিয়ার। কাছে যেতেই কানে ভেসে আসে-ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে...রইবাে না আর বেশিদিন তােদের মাঝারে'। | তার সামনে দাঁড়িয়ে গান শুনতে থাকি। তিনি ভেজা চোখ বন্ধ করে একমনে একতারা বাজিয়ে গান গেয়েই যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে চোখ থেকে অশ্রুর ফোটা গাল বেয়ে মাটিতে পড়িয়ে পড়ছে। মনে হয় তিনি যেন তার জীবনের দুঃখগুলাে একতারা বাজিয়ে গানের মাধ্যমে বলেই চলেছেন। চেয়ে দেখি বয়স অনুমান পঞ্চাশাের্ধ্ব। হালকা-পাতলা গড়ন, স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায়। মাথার চুল উষ্কখুষ্ক এবং ধবধবে সাদা। মুখে খোঁচা খোঁচা কাঁচা-পাকা অবিন্যস্ত দাড়ি। পরনে জীর্ণ-শীর্ণ ছেড়া তালিযুক্ত ময়লা পাঞ্জাবি ও পাজামা। পায়ে চামড়ার ক্ষয়ে যাওয়া স্যান্ডেল দুটিও ছেড়া। দেখে মনে হয় পোড় খাওয়া জীবনটা অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এসেছেন। একতারা বাজানাে শেষ হলে তিনি চোখ খুলে হাত দিয়ে অশ্রর ফোটা মুছে আমার দিকে তাকাতেই আমি তাকে সালাম জানিয়ে পাশে বসে কথা বলার আগ্রহ জানাই। সালামের প্রত্যুত্তর দিয়ে তিনি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে স্মিত হেসে আমাকে বসতে বলেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বহুদিন পর সে সালাম পেল। তার মতাে লােককে কেউ সালাম দেয় । কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে আমার আগমনের কথা জানতে চান। ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে বলি, কোনাে কিছুই না। গান শুনে ভালাে লেগেছে। তাই পাশে বসে একটু আলাপ করতে চাই। এ কথা শুনে তিনি অশ্রুসজল চোখে বলেন, বাবা আমি একজন হতদরিদ্র এবং নিঃস্ব মানুষ। একতারা বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সবাই আমাকে এড়িয়ে যায়। কেউ কথা বলে না।