| কোথা সে তাের দরিদ্র বেশ/ কোথা সে তাের মলিন হাসি/ আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল। এই চরণের দীপ্তি রাশি! বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সােনালি দীপ্তি আজ ছড়িয়ে গেছে সারা | বিশে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়। অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি, মানব উন্নয়ন সূচক- সবক্ষেত্রে আমরা আজ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছি। শুধু পাকিস্তান কেন, মাথা পিছু আয়ে আমরা ছাড়িয়ে গেছি ভারতকেও। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতালগ্নে এই দেশকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। অর্থনৈতিক মুক্তির আরেক যুদ্ধে নেমে তাতেও আমরা বিজয় অর্জনের পথে। না, কাছিত বিজয় এখনাে আসেনি। এর জন্য আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন। এর পর সিকি শতাব্দীর পাকিস্তানি শােষণ । এক সময়ের সুজলা-সুফলা দেশটিকে শুষে শুনে শেষ করে ফেলেছিল বিদেশি শাসকের দল। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর আমরা ভেবেছিলাম, এই তাে শুরু হলাে মুক্তির যাত্রা। কিন্তু তখনাে আমরা বুঝতে পারিনি, আরেক দুঃশাসনের বৃত্তে বন্দি হতে চলেছি। এখন আমি একটা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে নিশ্বাস ফেলতে পারি। এই স্বাধীনতাটা যে কী! কেউ পরাধীন না থাকলে বােধহয় স্বাধীনতার স্বাদ | সে পায় না। আমার জন্মই হয়েছিল পরাধীন দেশে। দেশ যখন স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, তখনাে আমার বয়স খুব বেশি নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বলা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম" কথাটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। কেন আমাদের মুক্তি দরকার? কী থেকে মুক্তি দরকার? | এর উত্তর লুকিয়ে আছে সে সময়কার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের চিত্রে। দেশভাগের এক বছরের মধ্যে যখন বলা হলাে, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল; যতই মুখে ভাই ভাই বলুক, দুই পাকিস্তানের মধ্যে ১২ মাইলের ভৌগােলিক ব্যবধান মানসিকতার দিক দিয়ে যেন আরও কয়েক হাজার গুণ ।