"আলালের ঘরের দুলাল" বইয়ের মুখবন্ধ থেকে নেওয়া:
মতিলাল দুর্দান্ত বালক। এই উপন্যাসের নায়ক। চৌদ্দ বছরের ছেলে। মতিলাল তার ফার্সি শিক্ষকের দাড়িতে জ্বলন্ত টিকে ফেলে দিয়ে তার দাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। মতিলাল তার বাংলার শিক্ষককে আঁচড় দিতাে না; তাকে কামড়ে দিতাে। “গুরুমহাশয় নিদ্রিত হইলে তাহার নাকে কাটি দিয়া এবং কোঁচার উপর জ্বলন্ত অঙ্গার ফেলিয়া তীরের ন্যায় [ মতিলাল ] প্রস্থান করিত।” বেণীবাবু নামক এক সজ্জন ও প্রাজ্ঞ লােকের বাড়িতে গিয়ে মতিলাল কারাে উপর ইট মেরেছে, কাউকে ঠেলা দিয়েছে, কারাে উপর থুথু দিয়েছে, কারাে ঘিয়ের হাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বেচারামবাবুও সত্যসন্ধিৎসু ব্যক্তি। বরদাবাবুর মতাে প্রাজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তির খুব ভক্ত ছিলাে সে। বেচারাম বাবুর দুই ভাগিনেয় হলাে : হলধর ও গদাধর। এই দুজনও ছিল মতিলালের মতাে উড়নচণ্ডী ও উচ্ছল । সঙ্গদোষেই তারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাে। রামগােবিন্দ, দোলগােবিন্দ ও মানগােবিন্দ প্রমুখ বন্ধুবান্ধবের অন্যায় সংসর্গে বাবা-মার অর্থ ব্যয় করে মদ্যপান, জুয়াখেলা— প্রভৃতি কর্মে রত হয়ে মতিলাল উচ্ছন্নে গিয়েছিল । জন্মদাত্রী মা-কে ঠাস করে চড় মেরেছিল কুলাঙ্গার মতিলাল। মতিলালের মা-ভাই-বোন বাড়ি থেকে বিতাড়িত হলে সে বলেছে যে, আপদ থেকে তার শান্তি হলাে। ভিটে-মাটি হারিয়ে বারানসীতে গিয়ে এক সাধকের সংস্পর্শে অতীত পাপমােচনের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পরম স্রষ্টার প্রেমে ধ্যানমগ্ন হয়ে অতপর মতিলালের চিত্তশুদ্ধি ঘটলে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার সে সংসার যাপন করতে থাকলাে। মতিলালের স্ত্রী খুব সতী-সাধ্বী ছিলাে। ধন গেলেও সম্ভ্রম যাতে তার নষ্ট না হয়, সেজন্য সে সতত তৎপর ছিল। তার মত স্ত্রীর মর্যাদা মতিলাল প্রথমে তাকে দেয় নি। উপন্যাসের শেষে মতিলালের ভুল ভাঙে এবং স্ত্রীর মর্যাদা সে দেয়। বাবুরাম ছিলাে মতিলালের বাবা। ধনী হলেও সে জ্ঞানী ছিলাে না। অর্থের প্রতি ছিলাে প্রচণ্ড লােভ। ধর্মের প্রতি সুমতি ছিলাে না। ঠকচাচার প্ররােচনায় ধর্মপ্রাণা স্ত্রীকে রেখে সে আর একটি বিয়ে করে অর্থলােভে। বাবুরামের নৌকা যখন ডুবে যাচ্ছিলাে, তখনকার সেই চিন্তাক্লিষ্ট সময়ে তার স্ত্রী তার স্মৃতিপটে আসে। স্ত্রী তাকে বলেছিলাে, পরমেশ্বরকে স্মরণ করার জন্য। স্রষ্টাকে স্মরণ করায় মতিলালসহ বাবুরাম সলিলসমাধি থেকে বেঁচে যায়। তবে বাবুরামের মৃত্যুর মুহূর্তে বরদাপ্রসাদের মতাে ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তি তার শিয়রে উপস্থিত থাকায়, স্রষ্টার নাম স্মরণ করে তার স্বীয় পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে বাবুরাম মৃত্যুবরণ করতে পেরেছিল। ঠকচাচা উপন্যাসটির একটি প্রধান কূটচরিত্র। দলিল জাল করতে, মিথ্যা সাক্ষী সাজাতে, দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধাতে এবং হয়কে নয় করিতে, নয়কে ছয় করিতে সে খুব দক্ষ ছিল। মাথায় পাগড়ি গায়ে পিরহানও হাতে তসবি থাকতাে ঠকচাচার। এই মুসলমান চরিত্রটিকে ঔপন্যাসিক চতুর, মামলাবাজ ও ভণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
প্যারীচাঁদ মিত্র (টেকচাঁদ ঠাকুর) এর আলালের ঘরের দুলাল এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 128.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। alaler-ghorer-dulal by Peary Chand Mitra (Tekchand Thakur)is now available in boiferry for only 128.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.