১৯৯৪ সাল। ৫০ টাকা ভাড়ায় রাজহংস লঞ্চে চড়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যখন নামলাম, তখন ভাের। কাক ডাকছে। স্বপ্নের রাজধানী ঢাকাজুড়ে মিউনিসিপ্যালিটির রাত-পাহারাদার ল্যাম্পপােস্টগুলাের নিয়নবাতি জ্বলছে। লঞ্চ থেকে পন্টুনে আমার ডান পা তার পদচ্ছাপ রাখল। রাজধানীতে প্রথম পা তা আবার লােহার ওপরে, মাটিতে নয়। অবশ্য তখনই নগর সম্পর্কে আমার প্রথম ধারণা পরিষ্কার হতে পারত। এ নগর তার নির্মমতার কথা প্রথম পা ফেলতেই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল লােহার ধারণায়।। | রাজধানীতে নবাগত এই আমি প্রথমেই যেন মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার টান। অনুভব করলাম। পুরান ঢাকার অলিগলি, নারিন্দা, ইংলিশ রােড, জনসন রােড, জগন্নাথ কলেজ—এসব নাম পড়তে পড়তে রিকশাযােগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট মানে আর্ট কলেজের দিকে ক্রমে অগ্রসর হতে লাগলাম। সেখানে অধ্যয়নরত শিল্পী বন্ধু আমিনুল হাসান লিটু ও নাজিব তারেক আছে। তখন এই নগরে, শুধু বন্ধুদের কাছে আমি এক আগন্তুক তরুণ কবি। শীতের অবসান হবে হবে, বসন্তের শুরু জানান দিয়েছে বাংলার অপরূপ প্রকৃতি। একটা জিন্স প্যান্ট, একটা সাদা শার্ট, কাঁধে ছােট্ট একটা ব্যাগ, ব্যাগের ভিতর কবিতার খাতা, পায়ে স্লিপার, চিরুনিহীন মাথার চুলগুলাে নগরের যে কোনাে গলির ভিতর দিয়ে হঠাৎ আসা মােমিন হাওয়ায় আরও এলােমেলাে, আরও উদ্ধত। উদ্দেশ্যহীন। তবু দুজন বন্ধুর মুখ মনে পড়ে। সেই মুখ দুটি মনে রেখে চারুকলার সামনে এসে রিকশা থামল। ন্যায্য ভাড়া নিলেন রিকশাওয়ালা। একবার মনে হলাে ঢাকায় প্রথম রিকশা, ওর নামটা জিজ্ঞেস করি। আরেকবার মনে হলাে থাক, কত নাম তাে মুখস্থ হলাে। মনের মুখস্থ পৃষ্ঠা কিছু খালি রাখা দরকার। আরও কত কিছু মনে রাখতে হবে!